দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৩০৭, ৫৩ শতাংশই তরুণ
দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়েই চলছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩০৭ জনের মৃত্যু এবং ৭৭ হাজারেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, মৃতদের ৫৩ শতাংশই তরুণ, যাদের বয়স ১৬ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস)-এর তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ১৫ শতাংশ শিশু। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগে এত মানুষের মৃত্যু ‘জাতির জন্য লজ্জাজনক’। তারা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখনই সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১,১৯৫ জন
গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮৩ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যদিও এ সময়ে নতুন কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। চলতি মৌসুমে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ার পেছনে তিনটি বড় কারণ কাজ করছে
আরও পড়ুন: একদিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৮৩৪ জন, মৃত্যুহীন ২৪ ঘণ্টা
- জলবায়ু পরিবর্তন: টানা বৃষ্টি ও উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়া এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে।
- অনিয়মিত মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম: ঢাকাসহ দেশের অনেক এলাকায় নিয়মিত ফগিং ও লার্ভা ধ্বংস অভিযান চালানো হচ্ছে না।
- জনসচেতনতার অভাব: অনেকেই এখনও মশার প্রজননস্থল যেমন ফুলের টব, পুরোনো টায়ার, জমে থাকা পানি ইত্যাদি পরিষ্কার রাখছেন না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এম মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধের মূল উপায় হলো মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। আমরা এক টন ময়লা সরাচ্ছি, কিন্তু দশ টন নতুন করে জমছে। শুধু নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা যথেষ্ট নয়—আমাদের দেশব্যাপী স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক টানা বৃষ্টিপাত এডিস মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করেছে। বৃষ্টি থেমে গেলেও ডেঙ্গু অন্তত আরও দুই মাস চলবে—প্রথম মাসে সংক্রমণ বাড়বে, পরের মাসে ধীরে ধীরে কমবে। প্রাদুর্ভাব চলতে পারে জানুয়ারির মাঝামারি পর্যন্ত।”
ডা. মুশতাকের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধযোগ্য রোগ, তবুও মানুষ মারা যাচ্ছে—এটি লজ্জাজনক। প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী ও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও সমন্বিত উদ্যোগ না নেওয়ার কারণেই মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল ডেঙ্গু শক সিনড্রোম, আর দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল এক্সপ্যান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম। দ্রুত সনাক্তকরণ ও চিকিৎসা না পাওয়ায় মৃত্যুহার বাড়ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
দেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ রোধে সমন্বিত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা, স্থানীয় পর্যায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযান এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।





