গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে যা খাবেন এবং যা খাবেন না

দিন দিন গরমের তীব্রতা বেড়েই চলছে। তাপদাহে জনজীবন এখন বিপর্যস্ত। তীব্র গরমে আবার হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিও থাকে। এমনকী এ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হয় মানুষের। এ অবস্থায় শরীর ঠিক রাখতে ও সুস্থ থাকার জন্য খাদ্যতালিকায় বিশেষ নজর রাখা অতীব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গরমের সময় কোন যে খাবারগুলো খাওয়া যাবে না:
ডিম
এটি শরীরে প্রোটিনের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। তবে গরমের সময় ডিম খেলে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে, কারও ব্লাড প্রেসার থাকে। এ জন্য এ সময় ডিম যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। তবে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণে ডিমের বিকল্প হিসেবে মাছ-মাংস খাওয়া যেতে পারে।
মশলাজাতীয় খাবার
এমন অনেকেই আছেন যারা মশলাজাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করেন। মূলত এসব খাবার মুখরোচক হওয়ায় খাওয়া হয়। কিন্তু খেয়াল করলে হয়তো দেখা যায় মশলাজাতীয় খাবার হজম হতে দীর্ঘ সময় লাগে। এতে শরীরে বিপাক প্রক্রিয়াও দীর্ঘ হয়। আর তখন গরম অনুভব হয়ে থাকে।
ফাস্টফুড
কম-বেশি সবাই বার্গার, ফ্রাইড চিকেন, পিৎজা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইসহ বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুডে অভ্যস্ত। সকালের নাশতা বা বিকেলের স্ন্যাকসে কিংবা আড্ডা মহলে প্রায়ই এসব খাবার খাওয়া হয়। এসব খাবারে শর্করা ও চর্বির পরিমাণ অত্যন্ত বেশি থাকায় হজম হতে বেশি সময় লাগে। যা রক্তচাপকে প্রভাবিত করে এবং প্রদাহ বাড়ায়। এ কারণে ফাস্টফুড যতটা সম্ভব কম খেতে হয়।
কোমল পানীয় ও আইসক্রিম
গ্রীষ্মকালে গরম থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য অনেকেই বাজারের প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোমল পানীয় ও আইসক্রিম খেয়ে থাকেন। তারা মনে করেন, কোমল পানীয় ও আইসক্রিম শরীর ঠান্ডা রাখে। এসব খাবার তাৎক্ষণিক শরীরকে কিছুক্ষণের জন্য ঠান্ডা করলেও পরবর্তীতে তৃষ্ণা বেড়ে যায় এবং পানিশূন্যতা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
জাঙ্কফুড
চলতে ফিরতে বা আড্ডা মহলে জাঙ্কফুড খাওয়া অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডুবো তেলে ও অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবারগুলো খেতে মজাদার হলেও তা অধিকাংশ সময় স্বাস্থ্যকর হয় না। শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি করে। কারণ, রাস্তাঘাটের সহজলভ্য তৈলাক্ত খাবারের তেল অধিকাংশ সময় পোড়া থাকে। খাদ্যের উপকরণে বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যাল থাকে এবং যা খোলা পরিবেশে তৈরি করা হয়। এ কারণে গরমের সময় রাস্তার এসব খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
চা-কফি
অভ্যাসগত কারণে অনেকেই চা-কফি পান করেন। ক্যাফেইনজাতীয় এসব পানীয় শরীরকে উষ্ণ করে তোলে। এ জন্য গ্রীষ্মে চা-কফি পান না করা ভালো। ক্যাফেইন থাকায় পানিশূন্যতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ফ্যাটজাতীয় খাবার
গরমের সময় গরু, খাসি ও হাঁসের মাংস কম খাওয়া ভালো। এসব মাংসে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে। আবার পোলাও, কোরমা, বিরিয়ানি ও কাচ্চিজাতীয় খাবারে অতিরিক্ত তেল থাকে। এ জন্য সুস্থ থাকতে চর্বি ও তেলজাতীয় খাবার কম খেতে হবে।
সুস্থ থাকার জন্য খাদ্যতালিকায় যা থাকবে
শাক-সবজি
গরমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখতে লাউ, চালকুমড়া, সজনেডাঁটা, ঝিঙ্গাসহ অন্যান্য সবুজ সবশি ও শাক খেতে হবে। এসব সবজি পাতলা ঝোল করে খেতে পারেন। যা অভ্যন্তরীণভাবে শরীর ঠান্ডা রাখে এবং পুষ্টির চাহিদাও মিটিয়ে থাকে।
বিশুদ্ধ পানি
পানির অপর নাম জীবন বলা হয়। তবে সুস্থ থাকতে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। গ্রীষ্মে স্বাভাবিকভাবে অনেক ঘাম হয়। এতে শরীর থেকে প্রচুর পানিও নিঃসরণ হয়। যা থেকে পানিশূন্যতার আশঙ্কা থাকে। আবার প্রস্রাবের সঙ্গে সোডিয়াম, পটাশিয়ামও নিঃসরণ হয়। এ জন্য গ্রীষ্মে সুস্থ থাকতে দিনে তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার পরিমাণ পানি পান করা উচিত।
লেবুর শরবত
গ্রীষ্মে লেবুর শরবত পানে ক্লান্তিভাব দূর হয়। এজন্য সাধারণ পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে হবে। আর যদি রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন থাকে, তাহলে এর সঙ্গে পরিমাণমত লবণ মিশিয়েও নিতে পারেন।
কাঁচা আমের শরবত
কাঁচা আম ভিটামিন সি যুক্ত। ভিটামিন সি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গরমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য কাঁচা আম ব্লেন্ডারে পানির সঙ্গে মিশিয়ে তরল করে শরবত বানিয়ে পান করতে পারেন। তবে এর সঙ্গে কাঁচা মরিচ দেয়া যাবে না।
ফলমূল
এ সময় গ্রীষ্মকালীন ফলমূল বেশি বেশি খাওয়া উচিত। শশা, সট্রবেরি, জাম, তরমুজ খেতে পারেন। এসব ফল শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে। বিশেষ করে তরমুজ। এটি এমনই ফল, যা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ তরল হওয়ায় শরীরের জন্য উপকারী।
মশলাজাতীয় খাবার কম খাওয়া
যেকোনো খাবারই রান্নার সময় মশলা যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে। বাইরের খাবার খাওয়ার আগে সচেতন হতে হবে। এতে শরীর ভালো থাকবে।