পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ

Shakil
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ | আপডেট: ৫:৫১ পূর্বাহ্ন, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
(no caption)
(no caption)

একে একে স্বপ্নরা ডানা মেলছে আকাশে। উড়াল মেট্রোরেলের আবেশ ফুরানোর আগেই উন্নয়নের মহাসোপান বেয়ে এবার পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। রাজধানীর পূর্বাচলে বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের (এমআরটি লাইন-১) নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন ঘোষণা ও ফলক উন্মোচন শেষে তিনি একটি সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রূপগঞ্জসহ আশপাশের এলাকাগুলো। গত কয়েকদিন থেকেই রূপগঞ্জে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নিতে নানা প্রস্তুতি নিয়েছেন রূপগঞ্জবাসী। বিপুল উৎসাহ ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে ছবিসহ ব্যানার-ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে পুরো এলাকায়।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে একযোগে ২৯ কর্মকর্তার বদলি

বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে রূপগঞ্জের পূর্বাচলের প্রকল্পসংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে এখন সাজ সাজ রব। প্রতিটি মোড়ে একাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে ছেয়ে গেছে মহাসড়কসহ উপজেলার প্রধান সড়ক। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে অনেক আগে থেকেই রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিটি ইউনিয়ন, পৌরসভা ও ওয়ার্ডে সভা-সমাবেশ করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাতাল মেট্রোরেলের উদ্বোধন অনুষ্ঠান ঘিরে এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। তারা এর মধ্য দিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। অনেকেই মনে করছেন সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে এই এলাকার গুরুত্ব আরও বাড়বে। এলাকার অনেকেই বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে এখানকার মানুষের জীবনে পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। 

আরও পড়ুন: ১৫ আগস্ট ঘিরে আ. লীগ-ছাত্রলীগকে সড়কে নামতে দেওয়া হবে না: ডিএমপি কমিশনার

ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেন, রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ মৌজায় ৮৮ দশমিক ৭১ একর জমিতে হবে মেট্রোরেলের ডিপো। এতে ব্যয় হবে ৬০৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। বিমানবন্দর রুট ও পূর্বাচল রুটে চলাচলকারী সব মেট্রো এই ডিপোর সুবিধা পাবে।

তিনি আরও বলেন, ‘পিতলগঞ্জে মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণ করা হবে। আর এর মধ্য দিয়ে পাতাল রেলের নির্মাণকাজ শুরু হবে। এমআরটি লাইন-১ দুই ভাগে বাস্তবায়ন করা হবে। একটি অংশ হবে পাতাল, অন্যটি উড়ালপথের। দুটি অংশের মূল ডিপো নির্মাণকাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এমআরটি লাইন-১ বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা অর্থসহায়তা দেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন অ্যাসোসিয়েশন (জাইকা)। বাকি খরচ মেটানো হবে সরকারি তহবিল থেকে।’

ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এমআরটি লাইন-১-এর আওতায় নির্মাণ হবে মোট ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার রেলপথ। এই পথে থাকবে দুটি রুট বিমানবন্দর (বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর) আর দ্বিতীয় পূর্বাচল রুট (নতুনবাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো)। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রুটের দৈর্ঘ্য হবে ২০ কিলোমিটার। এই রুটে মোট পাতাল স্টেশন থাকবে ১২টি। বিমানবন্দর-কমলাপুর রুটই হবে দেশের প্রথম পাতাল রেলপথ। আর দ্বিতীয় অংশ পূর্বাচল রুটের যে ১১ কিলোমিটার তার পুরোটাই যাবে উড়ালপথে। এ পথে স্টেশনের সংখ্যা মোট ৯টি। উড়াল-পাতাল মিলিয়ে প্রতিটি স্টেশনে ট্রেন থামবে আড়াই থেকে সাড়ে তিন মিনিট পর পর। এই ৩১ কিলোমিটার পথে চলবে ২৫টি ট্রেন। এটি চালু হলে প্রতি ১০০ সেকেন্ড পর পর চলাচল করবে। যার প্রতিটিতে একবারে তিন হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে। মেট্রোরেলের মতো এটিও হবে বিদ্যুৎ-চালিত এবং দূরনিয়ন্ত্রিত ট্রেন। 

জানা গেছে, পাতালপথে কমলাপুর, রাজারবাগ, মালিবাগ, হাতিরঝিল, রামপুরা, পূর্ব হাতিরঝিল, বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, নতুনবাজার, নদ্দা, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ ও বিমানবন্দরে স্টেশন থাকবে। প্লাটফর্মে ওঠানামার জন্য উভয় পথের স্টেশনে থাকবে লিফট, সিঁড়ি ও এস্কেলেটর। এ ছাড়া নতুন বাজার স্টেশনে এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুটের সঙ্গে আন্তঃলাইন সংযোগ থাকবে। নদ্দা ও নতুন বাজার স্টেশন আন্তঃসংযোগ রুট ব্যবহার করে বিমানবন্দর থেকে পূর্বাচলে যাওয়া যাবে।