টাঙ্গাইল-৮: আহমেদ আযমে ক্ষুদ নেতাকর্মীদের গণপদত্যাগ

Sadek Ali
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৮:০৬ পূর্বাহ্ন, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৮:০৭ পূর্বাহ্ন, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল- ৮ আসনে অ্যাডভোকেট আহমেদ আযমকে বিএনপি'র মনোনয়ন ঘোষণার পরেই এলাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। আযমকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে দাতা কর্মীরা গণপদত্যাগ শুরু করেছেন। বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ করেছে আযম সমর্থকদের।

বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পর টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও ওই আসনের মনোনীত প্রার্থী আহমেদ আযম খানকে ঘিরে একের পর এক বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে ৩৩ নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন, যা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভোটব্যাংকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় নেতারা। তবে জেলা বিএনপি বিষয়টিকে ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেছে।

আরও পড়ুন: শারীরিক সক্ষমতায় বিলম্ব খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা

দলীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি আযম খান জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক আব্দুল খালেক মণ্ডলকে ফোনে হুমকি দেন। ওই অডিও ২০ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অডিওতে মুক্তিযোদ্ধাকে উদ্দেশ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং নির্বাচনে ক্ষতি করার অভিযোগে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা সমাজ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়।

এর প্রতিবাদে সখীপুর তালতলা চত্বরে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন টাঙ্গাইল শহর ও ভুয়াপুরেও মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ কর্মসূচি করেন। এসব সমাবেশে অংশ নিয়ে সমর্থন জানান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীও।

আরও পড়ুন: এনসিপি নেতা হান্নান মাসউদের বিয়ে, কনে ছাত্রনেত্রী শ্যামলী সুলতানা জেদনী

এদিকে, সমালোচনার মুখে রোববার এক পথসভায় আযম খান দাবি করেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং বাসাইল অঞ্চলে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার এ বক্তব্য ভাইরাল হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা আরও বাড়ে।

সখীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা সাজাহান সাজু ভিডিও বার্তায় তাকে ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ আখ্যা দিয়ে বলেন, কোনো তালিকা, নথি বা ইতিহাসেই আযম খানের নাম নেই। তিনি আরও দাবি করেন, আযম খান নিজ মুখেই অতীতে বলেছিলেন যে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি।

মুক্তিযুদ্ধ বিতর্ক থামার আগেই শুরু হয় দলত্যাগের হিড়িক। দলের একাংশের অভিযোগ, আযম খান আওয়ামী ঘরানার লোকজনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছেন। এসব অভিযোগের পর গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাজু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাসেদসহ ১১ নেতা পদত্যাগ করেন। পরদিন ওলামা দলের ২২ জন নেতাকর্মীও পদত্যাগপত্র জমা দেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন এবং সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল সখীপুরে গিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। তারা বলেন, “বিএনপি বিশাল একটি সংগঠন—কয়েকজন সরে গেলে দল দুর্বল হবে না। আযম খানের জনপ্রিয়তা দেখে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

প্রার্থী আযম খান অভিযোগ করেন, আমার ও বিএনপির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। জনগণ ধানের শীষের পক্ষে রয়েছে—এখন আর কোনো ষড়যন্ত্রেই বিজয় ঠেকানো যাবে না।

তবে স্থানীয় নেতাদের একাংশ বলছে, সাম্প্রতিক বিতর্ক দলের ভিতরে অস্থিরতা তৈরি করেছে এবং এর প্রভাব নির্বাচনে পড়তে পারে।