জাতীয় নির্বাচন ও মব দমন প্রসঙ্গ

সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্যে সর্বত্র স্বস্তির আলোচনা

Sanchoy Biswas
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৯:১৭ অপরাহ্ন, ২২ মে ২০২৫ | আপডেট: ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

দেশের সকল পর্যায়ে সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার ঊজ জামানের  বক্তব্যে দুই দিন ধরে  সর্বত্রই আলোচনা হচ্ছে।  বিশেষ করে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি  স্বস্তি দায়ক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও মব প্রতিরোধে দৃঢ়তার প্রশংসা করেছেন বিভিন্ন মহল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিবৃতিতে বিভিন্ন মহল ও ব্যক্তি সেনা প্রধানের বক্তব্যকে যুগোপযোগী এবং দেশের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।  রাজনৈতিক সামাজিক সাংবাদিক লেখকসহ সর্বমোলেই আলোচনায় ছিল সেনাবাহিনী প্রধানের  বক্তব্য। বুধবার বেলা দশটায় সেনা সদরের অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাবাহিনী প্রধান বক্তব্য রাখেন।   আল জাজিরা টেলিভিশনের  অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সামীর  স্ট্যাটাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্যের কিছু পয়েন্ট তুলে ধরা হয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধানের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল পদবির কর্মকর্তাদের সাথে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সেনাপ্রধান ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের আলোচনার মূল অংশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথোপকথনের ভিত্তিতে। 

১। সেনাপ্রধান শুরুতেই সকলকে পেশাদারিত্বের সাথে দীর্ঘসময় দায়িত্ব পালনের জন্যে ধন্যবাদ জানান। 

আরও পড়ুন: জুলাই সনদ সম্পর্কে আদালতে রাজনৈতিক দলগুলো কোন প্রশ্ন তুলতে পারবে না

২। তিনি বলেন এখন সময় এসেছে রাজনৈতিক সরকারের দেশ পরিচালনা করার। 

৩। করিডোর, বন্দর এবং অন্যান্য নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিক সরকারের দ্বারা পরিচালিত হবে।সেনাপ্রধান স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন - কোন করিডোর হবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে এমন সিদ্ধান্ত (যেমন, মানবিক বা কৌশলগত করিডোর খোলার বিষয় ) শুধুমাত্র একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের দায়িত্বের মধ্যে আসে, যা বর্তমান সরকার এর এক্তিয়ার ভুক্ত নয়। কাউকে কোন প্রকারের করিডোর দেওয়া যাবে না – এটি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। এই সিদ্ধান্তে সেনাবাহিনী স্পষ্ট করে দিয়েছে, তারা কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা বিদেশি শক্তিকে অঘোষিত বা অনানুষ্ঠানিক “করিডোর” বা ছাড় দেয়ার নীতি অনুসরণ করবে না। কোন বিদেশি দূতাবাস বা গোষ্ঠীর পরামর্শে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত হবেনা। 

আরও পড়ুন: আন্দোলনরত শিক্ষকরা ফের শহীদ মিনারে, কাল শাহবাগে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা

৪. ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবার ব্যাপারে উনি মন্তব্য করেন - আমি আশা করছি ০১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে নতুন নির্বাচিত সরকার বাংলাদেশ পরিচালনা করবে। 

৫. তিনি বলেন হঠাৎ করে কিছু ব্যক্তি বিদেশ থেকে আসবে এবং এ দেশের বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ে জানার ও নিজ  মতানুযায়ী প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে। কাজ হয়ে গেলে সংক্ষিপ্ত সফর শেষ করে ফিরে যাবে..এমনটা হতে পারে না।

৬. জুলাই- আগস্টের জাতিসংঘের রিপোর্ট সম্পর্কে সেনাবাহিনী কিছুই জানতো না কেন?  এ বিষয়ে জাতিসংঘকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তারা বলেছিল এটি আপনার সরকারের কাছে জানানো হয়েছে কিন্তু সরকার আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করেনি এবং আমাদের জানায়নি - কেন? 

৭. সমস্ত রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিক সরকারের দ্বারা সমাধান করতে হবে।

৮। তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের কার্যক্রমে প্রশংসা করেন কিন্তু তারা সরকার পরিচালনার বিষয়ে অনভিজ্ঞ, সেই কারণে রাজনৈতিক সরকারের বিকল্প নেই একটি দেশ পরিচালনা করার জন্য। 

৯।  তিনি এক পর্যায়ে সবাইকে প্রশ্ন করেন, কেউ কি আমার দায়িত্ব গ্রহণ করতে ইচ্ছুক? তাহলে দয়া করে গ্রহণ করো। 

১০। আমাদের ১/১১ এর অভিজ্ঞতা ভালো নয়। আমরা এমন কিছু কামনাও করিনা। 

১১। তিনি কথা বার্তায় বেশ খোলামেলা ছিলেন। তিনি বললেন আমি জানি এখানে যা বলি সব সামাজিক মাধ্যমে চলে যাবে। 

১২। তিনি আরও বললেন যে আমার কোনো রাজনৈতিক ইচ্ছা বা উচ্চাভিলাষীতা নেই। 

১৩। তিনি বলেন এখনও প্রমোশনের ক্ষেত্রে অনেক  রাজনৈতিক চাপ আসছে। 

১৪। তিনি সতর্ক করেছেন যে বর্তমান প্রশাসন অজান্তেই বাংলাদেশকে বিদেশি শক্তিগুলোর জন্য একটি যুদ্ধ ক্ষেত্রের ময়দানের দিকে ধাবিত করছে—একটি "প্রক্সি যুদ্ধ"। 

১৫। একজন কমান্ডিং অফিসার জোর দিয়ে বলেছেন যে, দেশের স্বাধীনতা, জাতীয়তাবাদ, সার্বভৌমত্ব খর্বিত হয় এমন কোন কার্যকলাপ প্রশ্রয় দেয়া উচিত হবেনা। 

১৬। উপস্থিত সকল কর্মকর্তা অফিসারগণ জেনারেল ওয়াকার এর সমর্থনে একত্রিত হয়ে আছে এবং উনার কমান্ড অনুসরণে কাজ করার জন্য প্রস্তুত, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা যে কোন মুহূর্তে সেনাপ্রধানের কমান্ড অনুযায়ী কাজ করতে একতাবদ্ধ বলে সমস্বরে ঘোষণা দেন।

১৭। সেনাবাহিনী আর সহিংসতা বা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ সহ্য করবে না, কঠোরভাবে নিয়ম প্রতিপালনের দিকে সচেষ্ট থাকবে।

১৮। রাস্তায় মব তৈরি করে অরাজকতা আর মানা হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

১৯। সংস্কার নিয়ে সেনাবাহিনীর পরামর্শ সরকার আমলে নেয়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। অদ্যাবধি ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও তেমন কোন উলে­খ যোগ্য সংস্কার দেখা যায় নি। 

২০। সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যাওয়া উচিত, তবে নির্বাচনের পরেও সেনাবাহিনীকে কয়েক মাস বেসামরিক প্রশাসনকেb সহায়তা করতে হতে পারে।

২১। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বছরের বাকী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন না করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।

২২। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ দরিদ্র, তাদের ঘাম-রক্তের অর্থে আমাদের সবার বেতন হয়, সংসার চলে। তাদের স্বার্থ বিরোধী কোন কাজই যেন না ঘটে সে বিষয় আমাদের সকলকে অটল থাকতে হবে।