মার্কিন শুল্কের হার কমিয়ে আনা রপ্তানি খাতের জন্য সন্তোষজনক: আমির খসরু

Sanchoy Biswas
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৮:০০ অপরাহ্ন, ০১ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ৫:০২ পূর্বাহ্ন, ০২ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনায় দেশের রপ্তানি খাত এখন "সন্তোষজনক অবস্থানে" রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে গুলশানে নিজের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান।

আরও পড়ুন: কক্সবাজারে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ ফারুকী, ঢাকায় আনা হয়েছে

তিনি বলেন, “এটা জয়-পরাজয়ের কোনো বিষয় না। যে শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে, প্রতিযোগিতায় আমরা তুলনামূলকভাবে একটা সন্তোষজনক অবস্থানে আছি। আমরা ২০%, পাকিস্তান ১৯%, ভিয়েতনাম ২০%, ভারতে ২৫%।”

শুল্ক হারের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, সার্বিকভাবে ট্যারিফের ফিগারটা সন্তোষজনক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে। প্রতিযোগীদের সাথে আমাদের যে অবস্থান, সেটা ঠিকই আছে। এটা সন্তোষজনক।”

আরও পড়ুন: ৮৪ দফা ও ৮ অঙ্গীকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে জাতীয় জুলাই সনদের খসড়া

তবে শুধু শুল্ক হার জানলেই পুরো চিত্র বোঝা যাবে না বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “পুরো নেগোশিয়েশনের সার্বিক বিষয়টা তো আমাদের জানা নেই। আমরা শুধু ট্যারিফের বিষয়টা জানি। এর বিপরীতে আর কী দিতে হয়েছে, সেটা না জানা পর্যন্ত ইমপ্যাক্টটা কী হবে, সেটা বলা যাচ্ছে না।”

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কাঠামোর সাম্প্রতিক এই পরিবর্তন শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয়, বরং এটি দেশটির একটি বৃহত্তর পুনর্বিন্যাস পরিকল্পনার অংশ, যা শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও ভারতের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, শ্রীলঙ্কার হার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে, পাকিস্তানের হার ২৯ থেকে ১৯ শতাংশে আনা হয়েছে।

নেগোশিয়েশনের পেছনের বিষয়গুলোর প্রসঙ্গ টেনে আমীর খসরু বলেন, “এটা তো একটা প্যাকেজ। এখানে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুধু ট্যারিফ কমানো হয়নি। এই সিদ্ধান্তের পেছনে অনেক আলোচনা হয়েছে—আমেরিকানরা কী পাঠাতে পারবে? তাদের দাবিদাওয়া কী ছিল? সেগুলো প্রকাশ হলে আমরা বুঝতে পারব।”

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নির্ধারণে অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও বর্তমানে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বলেও মনে করেন তিনি। “আমি বলছি, আপাতত ২০% ট্যারিফ নির্ধারণ অন্তত এই মুহূর্তে আমাদের রপ্তানি বাজারকে বাধাগ্রস্ত করবে না। সুতরাং এই মুহূর্তে এটা সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত,” বলেন তিনি।

তবে তিনি এ-ও জানান, “এই সিদ্ধান্তের সাথে যুক্ত অনেক বিষয় এখনও আমাদের অজানা। সেগুলো জানার পরই চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা যাবে।”

সম্প্রতি বাণিজ্য সচিব যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন—এই বিষয়ে শুল্ক হারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, “না, কিছু তো করতেই হবে। কারণ আমেরিকানদের পুরো ট্যারিফ বিষয়টাই হচ্ছে তাদের পণ্য রপ্তানির স্বার্থে। তাই অতিরিক্ত ট্যারিফ আরোপ করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ কতটুকু এটা অবজর্ভ করতে পারবে, আমাদের ব্যবসায়ীরা এবং অর্থনীতি কতটা নিতে পারবে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়।”

শুধু শুল্ক নয়, এর পেছনের গোপন শর্ত ও বিনিময় বিষয়গুলো একত্রে বিবেচনায় নেওয়ার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “এটা শুধুমাত্র একটা ট্যারিফের বিষয় নয়। এর পেছনে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। সেই বিষয়গুলো সম্মিলিতভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। সেটিই আগামী দিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি মনে করেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের উচিত পুরো প্রক্রিয়াটি খোলাসা করা, যাতে দেশের ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকরা সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন।

“আমাদের বাণিজ্য শুধু আমেরিকার সাথে নয়, অন্যান্য দেশেও হয়। সেই জায়গাগুলো বিবেচনায় নিয়ে সম্মিলিতভাবে আমাদের কোথায় অবস্থান করছি, সেটা বুঝতে হবে, পর্যালোচনা করতে হবে,” বলেন আমীর খসরু।

রপ্তানি খাতকে আরও বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের শুধু আমেরিকান বাজারের ওপর নির্ভরশীল অর্থনীতি হতে পারে না। সেটাই আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ।”

তিনি আরও যোগ করেন, “বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ এবং ড্রিম বিজনেসের মতো সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। ডিরেগুলেশন ও রিভ্যালুয়েশনের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হবে। আমরা সেই দিকেই এগোতে চাই।”