নির্বাচন বানচালের চেষ্টা রাজপথেই প্রতিহত করবে বিএনপি: হাফিজ উদ্দিন

নির্বাচন বানচালকারীদের বিএনপি রাজপথেই প্রতিরোধ করবে’ বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। সোমবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এই হুশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, ‘‘ যারা বলছে যে, নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। আমরা তাদেরকে বলতে চাই, বিএনপি কোনো দূর্বল দল নয়। কারা নির্বাচন হতে দেবে না ইনশাল্লাহ আমরা রাজপথে দেখতে চাই। ১৭ বছরের আত্মত্যাগ তো ব্যর্থ হতে পারে না।”
আরও পড়ুন: জোটে না এককভাবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি: সারজিস আলম
‘‘আজকে আমরা বাংলাদেশের সবাইকে সরকার, অন্যান্য রাজনৈতিক দল, যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে আওয়ামী লীগকে সবাইকে মেসেজ দিতে চাই, জিয়াউর রহমান আজ নেই কিন্তু তার দল বিএনপি এখনো বেঁচে আছে। ইনশাল্লাহ ফেব্রুয়ারি মাসেই নির্বাচন হবে।”
প্রশাসনের বসে ফ্যাসিস্টদের দোসরদের অপসারণ দাবি করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘‘ বাংলাদেশ যে এখনো নির্বাচনী ম্যাপের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারছে না তার একটি কারণ বর্তমান প্রশাস….এখানে স্বৈরাচারের দোষরা এখনো বসে আছে, এদেরকে সরানোর জন্য কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই এবং এরা থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।”
আরও পড়ুন: দেশে ফিরে নির্বাচনী প্রচারণায় নেতৃত্ব দেবেন তারেক রহমান: আমান উল্লাহ আমান
‘‘ আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি জানিয়েছি, আজকে আবারো জানিয়ে জানাবো নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থেই বর্তমান প্রশাসন ব্যবস্থাকেও নিরপেক্ষ করতে হবে।আমরা স্বৈরাচারের দোসরদেরকে মাঠে রেখে নির্বাচনে যেতে পারি না।”
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয়তাবাদী জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের উদ্যোগে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নাই’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
‘পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে’
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘‘ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে পারে না, এদেশের জনগণ এটা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নাই।যারা পিআর নিয়ে আন্দোলন করছেন তাদেরকে বলব, আপনারা জনগণের কাছে যান। আপনাদের ম্যানিফেস্টোতে বলেন, ইশতেহারে বলেন, যে আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চাই এই দেশে… জনগণ যদি আপনাদেরকে সংখ্যাগিষ্ঠতা দেয় তাহলে আপনারা এই ব্যবস্থা চালু করেন। আমরা মাথা পেতে নেব।”
‘‘ কিন্তু এইভাবে জনগণের উপরে দুই- তিনটি রাজনৈতিক দল, ইউরোপ আমেরিকা থেকে আগত বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে এই ধরনের সিস্টেম করতে যাওয়া বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে। আমরা দেশের সর্ববৃহৎ দল রাজনৈতিক দল বিএনপি আমরা কখনোই এটিকে সহ্য করব না, এইভাবে জনগণের উপর অত্যাচার করে নিজেদের স্বার্থে, নিজস্ব দলীয় স্বার্থে অদ্ভুত নির্বাচনী ব্যবস্থা যার সাথে আমাদের দেশের জনগণ পরিচিত নয় এই ব্যবস্থা আমরা চালু হতে দিতে পারি না।”
‘এনসিপি‘র আওয়ামী লীগের রোগে ধরেছে’
হাফিজ বলেন, ‘‘ এনসিপি তাদেরও আওয়ামী লীগের ওই রোগে ধরেছে। আওয়ামী লীগ যেমন ক্লেইম করে বাংলাদেশ তারাই স্বাধীন করেছে। এনসিপি এই সদ্য সাবালক ছাত্ররা তারাও বলতে চায় যে, শেখ হাসিনা সরকারের নাকি তারাই পতন ঘটিয়েছে।”
‘‘ বিএনপির ৫৮৮ জন সদস্য ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের দেড় মাসের সংগ্রামে জীবন দিয়েছে। এখন তারা মনে করে যে তারাই(এনসিপি) হল এই রাষ্ট্রের কর্ণধার, তাদের এই দায়িত্ব এই দেশকে ঠিক করার। কিছুদিন আগে ডাকসু নির্বাচন হল… এই এনসিপির তো সবাই ছাত্র, তারা ছাত্রদের প্রতিনিধি বলে দাবি করত তারা এক‘শ ভোট পায় নাই ডাকসু নির্বাচনে। তারা এখন বলতে চায়, পিআর না হলে নির্বাচনই হতে দেবো না।”
‘কেনো এবার জাতিসংঘে এতো বড় প্রতিনিধিদল’
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস সাহেবকে আমরা সন্মান করি, তিনি দেশের গৌরব। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি সফলতার মুখ দেখাতে পারেননি। সফলতা পান না পান ব্যয় সংকোচন তো করতে হবে। ১০৪ জনকে নিয়ে কেন জাতিসংঘে গেলেন? ১০ মিনিটের একটা ভাষণ দেবেন… আমি জাতিসংঘে দু‘বার গিয়েছি এই ধরনের মিটিংয়ে… আমিও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছি।”
‘‘ এই ধরনের অধিবেশনে ১০৪ জনের বিরাট লটবহর নিয়ে গিয়েছে… এটা বাংলাদেশের জনগণের ট্যাক্সপেয়ারের অর্থের অপচয়। প্রধান উপদেষ্টা প্রেস টিমের পাঁচজন গিয়েছেন, অন্যান্য সাংবাদিকরা তো গিয়েছেন… এটা তো আপনার-আমাদের অর্থের অপচয়। গতবছর তো তিনি ৫৪ জন নিয়ে গিয়েছিলেন এটা গ্রহনযোগ্য কিন্তু ১০৪ জনকে নিয়ে এইভাবে পিকনিক করতে যাওয়া বাংলাদেশের মত দুর্বল অর্থনীতির দেশের পক্ষে মানানসই নয়। দেশে আজকেব গণতন্ত্র নেই বলে এরকম হচ্ছে।”
তিনি বলেন, ‘‘ শেখ হাসিনা এর চাইতেও বেশি প্রতিনিধি দল নিয়ে জাতিসংঘে বেড়াতে গিয়েছেন, কখনো দিনের পর দিন বাংলাদেশ বিমানের এয়ারক্রাফট… কখনো ফিনল্যান্ডে, কখনো ইংল্যান্ডে, কখনো যুক্তরাষ্ট্রে বসে আছে। মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ, সিঙ্গাপুরের লিকওয়ান ইউ তারা এতো সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন তারাও নরমান এয়ারলাইন্সে ট্রাভেল করেন। কিন্তু এইভাবে দরিদ্র একটা দেশে মানুষ বিমান নিয়ে ওখানে বসিয়ে রাখে এবং ঘন্টার পর ঘন্টা অনেক টাকা ফ্রি দিতে হয় বিভিন্ন এয়ারপোর্টে …..। বাংলাদেশর মানুষ অত্যন্ত উদারচেতা সরকার কি করে এটা জানতেও পারে না।
‘‘ শেখ হাসিনার পতনের পর কিছুটা প্রেস ফ্রিডম এখানে এসেছে, আমরা জানতে পারি যে সরকার ও সরকার প্রধানরা কি করে? আওয়ামী লীগের লুন্ঠন তো সীমাহীন…এই ধরনের কাহিনী মাঝে মাঝে বের হয়ে আসছে। একজন প্রতিমন্ত্রী তার ৩৬০টি বাড়ি শুধু লন্ডনই ২০০ বাড়ি দুবাইতে, আমেরিকাতে।”
‘পার্বত্য চট্টগ্রামে আবার পুরনো খেলা’
হাফিজ বলেন, ‘‘ পাবর্ত্য চট্টগ্রামে আবার শুরু হয়েছে পুরানো খেলা। সেখানে ভারতীয় পতাকা উঠতো.. বহু বছর আগে থেকেই। কেবলমাত্র শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান… তিনি সেখানে বাঙালিদেরকে পাহাড়ি এলাকায় পুনর্বাসিত করার পরে সেখানে জনসংখ্যার মধ্যে একটা ব্যালেন্স এসেছে যার জন্য এখন আর তারা ভারতের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারছে না।”
‘‘ এইজন্য শহীদ জিয়াউর রহমান ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন… তিনি বাংলাদেশের অখন্ডতাকে রক্ষা করেছেন… স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সবসময় পতাকাকে উড্ডীন রেখেছেন।”
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃ্বৃন্দ বক্তব্য রাখেন।