ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া, জামাত শুরু সকাল ১০ টায়

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ঈদগাহে দেশের সর্ববৃহৎ জামাত শুরু সকাল ১০ টায়। ১৯৮তম ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত এ ঈদগাহ। গতবছর ঈদুল ফিতরের জামাতে এখানে স্থানীয়সহ দেশের নানা প্রান্তের চার লক্ষাধিক মুসল্লি এক জামাতে নামাজ আদায় করেছিলেন। এবার এই সংখ্যা অতিক্রম করবে বলে আশা করছেন ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এরশাদ মিয়া।
এরশাদ মিয়া জানিয়েছেন, বরাবরের মত এবারও সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে ৪ স্তরের নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএনের পাশাপাশি ৫ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবে। রোভার স্কাউট সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবে। ঈদগা ও এর আশপাশের এলাকায় বসানো হয়েছে ৬৪টি সিসি ক্যামেরা। ঈদগার পাশেই থাকবে অগ্নি নির্বাপক দল ও মেডিক্যাল টিম।
আরও পড়ুন: ৪০ কেজি গাঁজাসহ বরখাস্ত পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, তাঁর বিভাগের পক্ষ থেকে ঈদগাহের পাশেই খাবার পানির জন্য ৮টি নলকূপ বসানো হয়েছে। এছাড়াও জামাতের সময় ৫শ লিটার করে পানি নিয়ে চারটি ভ্যান মোতায়েন থাকবে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানিয়েছেন, পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণে পুলিশের পক্ষ থেকে থাকবে ক্যামেরাবাহী ড্রোন। মাঠে থাকবে পুলিশ ও র্যাবের ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। আইন শৃংখলা বাহিনী দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করবে। মুসল্লিদের চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পেরিয়ে আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে ঈদগায় প্রবেশ করতে হবে। কেবল জায়নামাজ ছাড়া কেউ যেন ব্যাগ, ছাতা, ম্যাচ বা লাইটারসহ কোন রকম দাহ্য বস্তু নিয়ে ঈদগা এলাকায় না যান, সেই মর্মে আগে থেকেই নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে মাঠের পাশেই স্থাপন করা হবে কন্ট্রোল রুম। ২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার কারণে এর পরের বছর থেকেই নেয়া হচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে যৌথ টহল, নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশ ও সেনাবাহিনী একসাথে মাঠে
জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। জামাতে ইমামতি করবেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। তিনি জানান, এই ঈদগায় দেশের নানা প্রান্তের মুসল্লিরা স্বস্ফূর্তভাবে বিশাল জামাতে নামাজ আদায় করতে আসেন। বড় জামাতে সোয়াবের আশায় তাঁরা এখনে ছুটে আসেন। ভোর বেলা থেকেই দূরদূরান্তের মুসল্লিরা ঈদগায় আসতে শুরু করেন। এছাড়া, অন্যান্য জেলার বহু মুসল্লি ঈদের আগের দিন চলে আসেন। ঈদগাহ কমিটির পক্ষ থেকে আশপাশের মসজিদ ও বিদ্যালয়ে তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। জামাতের সময় পুরো ঈদগাহ পূর্ণ হয়ে আশপাশের রাস্তা, পুকুর পাড়, নরসুন্দা নদীর সেতু ও আশপাশের পতিত জমি এবং বাড়ির আঙিনায়ও মুসল্লির কাতার দাঁড়ায়। ঈদগাহের পাশেই পর্দাঘেরা জায়াগায় মহিলাদের জামাতের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রাখা হয়।
১৭৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত ঈদগাহের সুদীর্ঘকালের ঐহিত্য অনুসারে জামাত শুরুর ১৫ মিনিটি আগে তিনটি, ১০ মিনিট আগে দুটি এবং ৫ মিনিট আগে একটি শর্টগানের গুলি ফুটিয়ে নামাজের সময়ের সংকেত দেয়া হবে। এক সময় সুতলির মধ্যে তিনবার সারিবদ্ধ পটকা ঝুলিয়ে সুতলির নিচের মাথায় আগুন দিয়ে পটকা ফাটানো হতো। সুতলি বেয়ে আগুন ওপরের দিকে যেত, আর একের পর এক পটকাগুলো ফুটতো। মাঝে মাঝে পটকা নষ্ট থাকতো বলে আওয়াজের তালের ব্যত্যয় ঘটতো। যে কারণে এখন শর্টগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরুর সংকেত দেওয়া হয়। এই ঐতিহ্য দেশে অদ্বিতীয় বলে কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। দূর দূরান্তের মুসল্লিদের শোলাকিয়ায় আগমনের সুবিধার্থে ঈদের সকালে ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে দুটি শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন যাতায়াত করবে।