মাজারে হামলার ঘটনায় আতঙ্ক কাটেনি, ‘মব সন্ত্রাস’ নিয়ে আবারো প্রশ্নে সরকার

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৫:০২ অপরাহ্ন, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৫:০২ অপরাহ্ন, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার কবর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর এলাকা জুড়ে এখনো বিরাজ করছে আতঙ্ক। শনিবার সকাল থেকে মাজার এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বন্ধ গেটের সামনে কড়া পাহারায় রয়েছে পুলিশ, পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহলও জোরদার করা হয়েছে। যদিও ভেতরে কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি, তবুও ক্ষতিগ্রস্ত মাজারটি এক নজর দেখতে আশপাশের মানুষ ভিড় করছেন।

শুক্রবারের ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা সাড়ে তিন হাজার জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। শুধু গোয়ালন্দ নয়, একই দিনে রাজশাহীর পবা উপজেলার একটি খানকা শরিফেও একই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশের উপস্থিতিতেই দলবদ্ধভাবে মাজারে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন: লাশ পড়ানো ও পুলিশের গাড়ি হামলার ঘটনায় আরও ২ জন গ্রেপ্তার

সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ কিংবা রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে দলবদ্ধভাবে হামলা, হেনস্তা ও ভাঙচুরের একাধিক ঘটনা ঘটছে দেশে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সমালোচনার মুখে পুলিশ

আরও পড়ুন: বিস্ফোরক মামলায় আ.লীগ নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বাকীবিল্লাহ গ্রেপ্তার

স্থানীয়রা বলছেন, শুক্রবার হাজার হাজার মানুষ মাজারে হামলা চালায়। ঘটনার আগাম তথ্য থাকলেও প্রশাসন তা ঠেকাতে পারেনি। পুলিশ ও প্রশাসনের উপস্থিতিতেই ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা দেখা দিয়েছে।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার জানান, দীর্ঘদিন ধরেই নুরাল পাগলার মাজারকে ঘিরে দ্বন্দ্ব ছিল। মৃত্যুর পর তার মরদেহ বিশেষ কায়দায় দাফন করায় স্থানীয় আলেম সমাজ ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিল। স্থানীয় "ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি" একাধিকবার কবর সমতল করার দাবি তোলে এবং শুক্রবার জুমার পর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।

অন্যদিকে, রাজশাহীর পবায় খানকা শরিফে হামলার ঘটনাতেও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। যদিও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র গাজিউর রহমান জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাড়ছে মব সন্ত্রাসের শঙ্কা

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘মব সন্ত্রাস’ এখন বাংলাদেশে এক প্রকার সংস্কৃতিতে পরিণত হচ্ছে। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, “রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মতাদর্শ থেকে সংগঠিত মবকে নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ভয় পাচ্ছে। একবার ছাড় পেলে তারা বারবার সুযোগ নেবে।”

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ মনে করেন, পুলিশের কাজের নিশ্চয়তা না থাকায় তারা ঝুঁকি নিতে চাইছে না। তিনি বলেন, “কাজ করলে চাকরি হারানোর বা জেলে যাওয়ার ভয় থাকলে তারা দায়িত্ব পালন করবে কীভাবে?”

সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘটনাটির নিন্দা জানালেও সমালোচকরা বলছেন, শুধু কঠোর বার্তা নয়—বাস্তবে কঠোর পদক্ষেপ দরকার। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি তাদের বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, সরকারের নির্লিপ্ততায় দেশে ‘মবোক্রেসি’ চলছে।

পুলিশের সাবেক প্রধান নুরুল হুদা মনে করেন, সরকারের আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন। “এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের আস্থা হারাবে। নির্বাচনের আগে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করলে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশ্ন উঠবে,” বলেন তিনি।

দেশজুড়ে সাম্প্রতিক মব হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকারিতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে সমালোচনা ক্রমেই বাড়ছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা আরও বেড়ে যেতে পারে।