অপরাধ জগতের সম্রাট এসআই মিজানুর রহমান প্রবাসীর স্ত্রীকে দিয়ে মামলা বাণিজ্য

Sanchoy Biswas
মো. আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:০২ অপরাহ্ন, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২:৩২ পূর্বাহ্ন, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

অপরাধ জগতের সম্রাট শান্তিগঞ্জ থানার এসআই মিজানুর রহমান। প্রবাসীর স্ত্রীকে দিয়ে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রী ২ সন্তানের জননী কর্তৃক আবাবিল কিন্ডার গার্ডেনের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী,

আরও পড়ুন: নরসিংদীতে টিউবওয়েলের পানি প্রবাহকে কেন্দ্র করে দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

ইন্টারনেট ক্যাবল ব্যবসায়ী সুজন মিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো মামলা দিয়ে দেশান্তরী করে হয়রানি করার অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি। শান্তিগঞ্জ থানার সাজানো নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা নং ৫ তারিখ ১৮/৮২৫ ইং।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব গাগলা ইউনিয়নের চিকারকান্দি গ্রামে ঘটনা ঘটেছে।

আরও পড়ুন: পাঁচ ট্রলারসহ ৩০ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি

মামলার বাদী প্রবাসীর স্ত্রী অভিযোগে উল্লেখ করেন, আবাবিল কিন্ডারগার্টেন স্কুলে প্রবাসীর মেয়ে পড়াশোনা করতেন। তখন সুজন মিয়া স্কুলের সভাপতি ছিলেন। সেই সুবাদে পরিচয় হয় সুজন মিয়ার সাথে। প্রবাসীর ১২ বছরের মেয়েকে জিম্মি করে বিগত প্রায় তিন বছর যাবৎ দফায় দফায় অর্থাৎ গত ১৫/৮/২৩ ইং রাত সাড়ে ১১টার সময়, গত ২৩/৭/২৫ ইং রাত সোয়া ১১টার সময়, গত ১২/৮/২৫ ইং রাত অনুমান সাড়ে ১০টার সময় ধর্ষণ করে সুজন মিয়া।

সুজন মিয়ার স্ত্রী রেছমা বেগম বলেন, প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে শান্তিগঞ্জ থানার এসআই মিজানুর রহমানের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল। দীর্ঘ ১৮ বছর যাবৎ তছকির আলী প্রবাসে থাকেন। এই সময়ের ভেতর এই রকম আরো চারজনের সাথে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোও স্থানীয়ভাবে সমাধা হয়েছে। আমার স্বামীর কাছ থেকে সাত লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিল প্রবাসীর স্ত্রী। এসআই মিজানুর রহমানের কু-পরামর্শে এবং টাকা আত্মসাৎ করার জন্যই এসব করছে। ধর্ষণ মামলা করে প্রবাসীর স্ত্রী আপোষ করার জন্য সুজন মিয়ার কাছে নগদ দুই লক্ষ টাকা দাবি করছে। থানায় অভিযোগ করার পরপরই এসআই মিজানুর রহমান দুইজন পুলিশ সদস্য নিয়ে রাতের আধারে আমার পাবলিক সার্ভিসের বিদেশি ল্যাপটপ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আমার কাছে তার ভিডিও ফুটেজ আছে। প্রবাসীর আত্মীয়-স্বজনরা রাতের বেলায় সপ্তাহে ২/৩ বার আমাদের ইন্টারনেট সার্ভিস লাইনের তার কেটে নিয়ে যাওয়ায় এবং মামলার ভয়ে আমার স্বামী অন্যত্র পালিয়ে থাকায় ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বাদিনীর স্বামী তছকির আলী মামলা নিষ্পত্তির জন্য দুই লক্ষ টাকা যোগাড় করে শালিশের তারিখ দেওয়ার জন্য বলেছেন। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বলছি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যদি আমার স্বামী অপরাধ করে থাকে তাহলে তার শান্তি হোক আর যদি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রবাসীর স্ত্রী অপরাধ করে থাকে তাহলে তার শান্তির জোর দাবি জানাই।

একই গ্রামের স্বপ্না বেগম বলেন, প্রবাসীর স্ত্রী দুই সন্তানের জননী। মেয়ের বয়স ১৩ বছর। প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে এসআই মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। তিনি প্রায়ই প্রবাসীর বাড়িতে আসতো। এই মামলার বিষয়ে বিজ্ঞ আদালত তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার আগেই এসআই মিজানুর রহমান বাদী পক্ষের লোকজন নিয়ে সুজন মিয়ার বসতবাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে ঘরে থাকা স্টিল আলমিরা, ওয়ারড্রোব ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খুলে টেনে-হেঁচড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। এটা আমাদের এলাকায় প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে নতুন কোনো ধর্ষণের ঘটনা নয়। আরো অনেক বার ঘটেছে। প্রবাসীর স্ত্রী তার গোষ্ঠীর লোকজনের মাধ্যমে মামলা আপোষ করার জন্য দুই লক্ষ টাকা দাবি করছে।

লায়লা বেগম বলেন, প্রবাসীর স্ত্রী কর্তৃক সুজন মিয়াকে সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করা এটা নতুন কিছু নয়। প্রবাসীর স্ত্রী এরকম আরো ৩/৪টি ঘটনা করেছে। এসআই মিজানুর রহমান শান্তিগঞ্জ থানায় যোগদান করার পর থেকেই অসহায় প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে। মিজানুর রহমানের পরোচনায় ব্যবসায়ী সুজন মিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছে।

জাহেদা বেগম বলেন, শান্তিগঞ্জ থানার ওসি আকরাম আলী, এসআই মিজানুর রহমান প্রবাসীর স্ত্রীর কাছ থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে সাজানো মামলা এফআইআর করেছে। লিখিতভাবে অভিযোগ দেওয়ার আগেই এসআই মিজানুর রহমান সুজন মিয়ার ল্যাপটপ জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং তার বসতঘরের আসবাবপত্র টেনে-হেঁচড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

আবাবিল কিন্ডার গার্ডেনের প্রধান শিক্ষক খসরু মিয়া বলেন, সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুজন ভাই ২০২১ সাল পর্যন্ত আমাদের স্কুলের সভাপতি ছিলেন। উনি খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। উনার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে আমি তীব্র নিন্দা জানাই।

ভুক্তভোগী সুজন মিয়া বলেন, শান্তিগঞ্জ থানার এসআই মিজানুর রহমানের প্ররোচনায় প্রবাসীর স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের সাজানো মামলা দিয়ে আপোষ করার জন্য দুই লক্ষ টাকা দাবি করছেন। এসআই মিজানুর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রবাসীর স্ত্রীর কথামতো মামলার তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। রাতের আধারে তদন্তের নামে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে জোরপূর্বক পাবলিক সার্ভিসের ল্যাপটপ নিয়ে যান। পরের দিন আবার আমার বসতবাড়ীতে এসে তদন্তের নামে ঘরের আসবাবপত্র টেনে-হেঁচড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

প্রবাসীর স্ত্রী বলেন, আমার ১২ বছরের সন্তানকে জিম্মি করে প্রায় তিন বছর ধরে আমাকে বারবার ধর্ষণ করেছে সুজন। তিন বছর আগে মামলা করলেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, মানসম্মানের ভয়ে মামলা করিনি। এ বিষয়ে আমাকে না জানিয়ে কিছু লিখবেন না। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে আপোষের চেষ্টা চলছে। বিবাদীর কাছে দুই লক্ষ টাকা দাবি করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাকা চাওয়ার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।

এসআই মিজানুর রহমান বলেন, চিকারকান্দি গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রীকে আমি চিনি না। ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। আপনি বিবাদীকে বলেন ডাকঢোল বাজিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করুক। তাতে আমার কিছু যায় আসে না বলেই ফোন কেটে দেন। ০১৭১৫৭৬৩০৭৯