খেয়াঘাট নিয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ফের টেঁটাযুদ্ধ, যাত্রী পারাপারে দুর্ভোগ
নরসিংদীর মেঘনানদীর খেয়াঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ফের বিবদমান দুই পক্ষের টেঁটাযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১০ আহত হয়েছেন।
শনিবার (৮ নভেম্বর) সকালে সদর উপজেলার মাধবদী থানাধীন দূর্গম চরাঞ্চল চরদিঘলদী ইউনিয়নের জিতরামপুর গ্রামে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: ৪০তম জাতীয় জুডো প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চরদিঘলদী ইউনিয়নের জিতরামপুরে খেয়াঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে স্থানীয় শহিদ মেম্বার ও চাঁন মিয়া গ্রুপের মধ্যে বেশ কয়েকদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত সোম ও মঙ্গলবার দুদফা উভয় পক্ষের সংঘর্ষে ৮ জন টেঁটাবিদ্ধ হয়। পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়।
শনিবার সকালে পুলিশ না থাকার সুযোগে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ফের টেঁটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চাঁন মিয়া গ্রুপ ও শহিদ মেম্বার গ্রুপের লোকজন সংঘর্ষে জড়ায়। এতে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও পুলিশী গ্রেপ্তারের ভয়ে অনেকে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক সহ বিভিন্ন স্থানে গোপনে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: কাপাসিয়ায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক সংবাদ প্রচারে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন
সম্প্রতি গত ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার খেয়া পারাপারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করে চাঁন মিয়া গ্রুপ ও শহিদ মেম্বার গ্রুপের লোকজন সংঘর্ষে জড়ায়। এ ঘটনা পত্র-পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশ হলে ওইদিনই জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল ওহাব রাশেদ তাত্ক্ষণিক খেয়াঘাটের ইজারাদার শফিকুল ইসলাম (সেন্টু) কে চিঠি দিয়ে ইজারা বাতিল করেন। ইজারা বাতিল হওয়ার পর দুপারের যাত্রীরা পড়েন বিপাকে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চলিত বছরের ১ জুলাই রসুলপুর-জিতরামপুর-শান্তিপুর খেয়াঘাটের যাত্রী পারাপারে জনপ্রতি ৪ টাকা শর্তে ইজারা পান স্থানীয় শফিকুল ইসলাম (সেন্টু) নামে একব্যক্তি। পরে তিনি জিতরামপুর গ্রামের চাঁন মিয়ার নিকট বিক্রি করে দেন। ইজারার শর্ত অনুযায়ী ৪ টাকা জনপ্রতি পারাপারে কথা থাকলেও ফাঁড়ি ইজারাদার চাঁন মিয়া আদায় করতেন ২০ টাকা। এ নিয়ে খেয়াপারারের যাত্রীদের সাথে প্রতিনিয়ত বাকবিতন্ডা সৃষ্টি হত। একপর্যায়ে গত মাসে শহিদ মেম্বার গ্রুপের এক সমর্থক ওহাব মিয়া (৭০) ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডার করলে তাকে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করেন চাঁন মিয়ার লোকজন। এরই জের ধরে উভয় পক্ষে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
এদিকে খেয়াঘাট বন্ধ ঘোষণা হওয়ায় দুপারের যাত্রীদের মাঝে নেমে আসে চরম দূর্ভোগ। তাদের যাতায়তের একমাত্র ভরসা ছিল এই খেয়াঘাটটি। বর্তমানে খেয়াঘাটটি বন্ধ থাকায় স্থানীরা তাদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য জেলে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাঝিরা তাদের কাছ থেকে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে নিচ্ছেন। এতকিছুর পরও নিরুপায় হয়ে যাত্রীরা যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এবিষয়ে জিতরামপুর থেকে আসা মাসুম নামে একব্যক্তি বলেন, বন্ধ তো ঠিকই হলো। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্হা করলো না। এ যেন মরার পর খাড়া গাঁ। জিতরামপুর-শান্তিপুর-টিটিরচর বাসীর একমাত্র সহজ ও সুলভ যাতায়াত ব্যবস্হা এই খেয়াঘাট। এখান দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশত লোক নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। কিন্তু জেলা পরিষদ বিকল্প ব্যবস্হা না করে হঠাৎ খেয়া পারাপার বন্ধ করে দিয়ে আমাদেরকে বিপাকে ফেলেছেন। আমরা আশা করি আমাদের যাতায়াতের চিন্তা করে খেয়া পারাপারের দ্রুত ব্যবস্হা নিবে।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ভোরে পুলিশের উপস্থিতি দেখতে না পেয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থানের পর থেকে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। দু-তিনজন সামান্য আহত হয়ে হাসপাতালে গেছেন।





