রাঙ্গামাটিতে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

Sanchoy Biswas
শান্তিময় চাকমা, রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৯:৩১ অপরাহ্ন, ১০ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১২:১৮ পূর্বাহ্ন, ১১ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-এর প্রতিষ্ঠাতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (এম. এন. লারমা) ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে।

এম. এন. লারমার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল (সোমবার) রাঙ্গামাটিতে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকাল সাড়ে সাতটায় জমায়েত ও কালো ব্যাজ ধারণ, সকাল সাড়ে আটটায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রধান সড়ক হয়ে বনরূপা পর্যন্ত শোকর‍্যালি, সকাল নয়টায় এম. এন. লারমার বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সকাল ১০টায় স্মরণসভা এবং সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালন ও ফানুস উড়ানো।

আরও পড়ুন: ফেনীতে চার তারকা মানের ‘গোল্ডেন প্যালেস হোটেল অ্যান্ড কনভেনশন হল’ উদ্বোধন

সকালে এম. এন. লারমার অস্থায়ী বেদীতে প্রথম ফুলের মালা অর্পণ করেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার বড় বোন ও আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য জ্যোতিপ্রভা লারমা। পরে পিসিজেএসএস ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি এম. এন. লারমার বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।

সকাল ১০টায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার স্মরণে দাঁড়িয়ে দুই মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে বিকেল পাঁচটায় প্রদীপ প্রজ্বালন ও ফানুস উড়ানোর মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি হয়।

আরও পড়ুন: আড়াইহাজারে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

এম. এন. লারমা গণপরিষদ ও বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর জনসংহতি সমিতির বিভেদপন্থী অংশের হাতে আট সহযোদ্ধাসহ খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ির গভীর জঙ্গলে এক গোপন আস্তানায় তিনি নিহত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জুম্ম জাতিসত্তার আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিতে সংগ্রাম করে গেছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি ডা. গঙ্গামানিক চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শিশির চাকমা।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার বড় বোন ও আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য জ্যোতিপ্রভা লারমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশিকা চাকমা, পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি সুমন চাকমাসহ ছাত্র-যুব সমাজ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি শিশির চাকমা বলেন, “আমাদের আত্মপরিচয় নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার জন্য এম. এন. লারমা পথ দেখিয়ে গেছেন। আজ আমরা তাঁকে স্মরণ করছি। আমরা জানি, বিভাজনের রাজনীতি আমাদের নিঃশেষ করে দিচ্ছে। আপামর মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত। তবে ইতিহাসের দায় আছে, ইতিহাসেরও রায় আছে। বিভেদের বীজ রোপণকারীদের বিরুদ্ধে, শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম একদিন সেই ঐতিহাসিক দায় থেকে রায় নির্ধারণ করবে। জনমানুষের দীর্ঘশ্বাস, ভিন্ন ভাষাভাষী চৌদ্দটি জাতির ভবিষ্যৎ বিপর্যস্ত করে দেওয়ার শাস্তি অবশ্যই সময় নির্ধারণ করে দেবে সেই বিভেদপন্থীদের।”

তিনি আরও বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়েছে—আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর সমন্বয়ে কী সুন্দর একটি শাসনব্যবস্থা তৈরি হতে পারতো। কিন্তু বিগত সরকারগুলো তো সেটা হতে দিল না। তারা প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করে গেছে। সামনে নির্বাচন আসছে, যে-ই ক্ষমতায় যাক না কেন, আমি বিশ্বাস করি না তারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে ভাববে। তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করবে না এবং পাহাড়ে দমন-পীড়নের নীতি অব্যাহত রাখবে।”