চুয়াডাঙ্গায় শীতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা
চুয়াডাঙ্গায় শীত আর উত্তরের ঠান্ডা বাতাসে জবুথবু হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। দিনে সূর্যের আলোর দেখা গেলেও বিকাল থেকে সকাল পর্যন্ত ঘনকুয়াশা আর ঠান্ডা হাওয়ার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। মঙ্গলবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, প্রচন্ড ঠান্ডার ফলে আগুন জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা করছে শীতার্ত মানুষ। সকালে হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। সন্ধ্যার পর ফাঁকা হয়ে যায় গোটা এলাকা। প্রতিদিন হাসপাতালে বাড়ছে নতুন নতুন রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে শিশু এবং বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বেশি।
আরও পড়ুন: দেশের সংকটে সশস্ত্র বাহিনী সবসময় জনগণের পাশে: নৌবাহিনী প্রধান
সদর হাসপাতালের নথি অনুসারে, গত এক সপ্তাহে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে সেবা নিয়েছে ১৪৫০ জন রোগী। বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। এর পাশাপাশি শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়ে চলেছে।
গত ৭ দিনে শিশু ওয়ার্ড ২২টি বেডের তুলনায় শিশুরোগী ভর্তি হয়েছে- ১ ডিসেম্বর ৫১ জন, ২ ডিসেম্বর ৫০ জন, ৩ ডিসেম্বর ৭১ জন, ৪ ডিসেম্বর ৫১ জন, ৫ ডিসেম্বর ৭১ জন, ৬ ডিসেম্বর ৭০ জন ও ৭ ডিসেম্বর ৫৯ জন। এক সপ্তাহে শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে ৪২৩ জন।
আরও পড়ুন: নরসিংদীতে শীতার্তদের মাঝে এনসিপির কম্বল বিতরণ
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৬টি রোগী ধারণক্ষমতার জায়গার তুলনায় চলতি মাসের ১ ডিসেম্বর ৬২ জন, ২ ডিসেম্বর ৭৫ জন, ৩ ডিসেম্বর ৭৯ জন, ৪ ডিসেম্বর ৭৯ জন, ৫ ডিসেম্বর ৮৮ জন, ৬ ডিসেম্বর ৯১ জন ও ৭ ডিসেম্বর ৮৯ জন। এক সপ্তাহে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন ৫৬৩ জন।
মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ১১টি বেডের বিপরীতে চলতি মাসের ১ ডিসেম্বর ৬৭ জন, ২ ডিসেম্বর ৬৩ জন, ৩ ডিসেম্বর ৬৪ জন, ৪ ডিসেম্বর ৯০ জন, ৫ ডিসেম্বর ৭৬ জন, ৬ ডিসেম্বর ৫৪ জন ও ৭ ডিসেম্বর ৬১ জন। এক সপ্তাহে ভর্তি হয়েছেন ৪৭৫ জন।
পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ২২টি বেডের বিপরীতে চলতি মাসের ১ ডিসেম্বর ৭৭ জন, ২ ডিসেম্বর ৬১ জন, ৩ ডিসেম্বর ৭৬ জন, ৪ ডিসেম্বর ৬০ জন, ৫ ডিসেম্বর ৭৭ জন, ৬ ডিসেম্বর ৫৫ জন, ৭ ডিসেম্বর ৬০ জন। এক সপ্তাহে রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪৬৬ জন।
মঙ্গলবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেডিসিন ও শিশুসহ সব ওয়ার্ড রোগীতে পরিপূর্ণ। এ সময়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগেও রোগীদের ভিড় দেখা যায়। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি। জ্বর-সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত অনেকে।
নার্সরা বলছেন, রোগীর চাপ বাড়ছে, কিন্তু জনবল সংকটের কারণে অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার হাসনহাটি গ্রামের হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা মরিয়ম বেগম বলেন, বাচ্চার ঠান্ডা-জ্বর। এজন্য ডাক্তারের কাছে এসেছি। হাসপাতালে রোগীর প্রচুর ভিড়। বাচ্চারা ঠান্ডায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ৫ বছর বয়সী শিশু বর্ষার মা মর্জিনা খাতুন বলেন, আমার মেয়ে তিন দিন ধরে এখানে ভর্তি রয়েছে। আগের থেকে এখন সুস্থ আছে। তবে ডাক্তার বলেছে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স জলি খাতুন বলেন, ২০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। শীতের কারণে নিউমোনিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশুদের ভর্তি হতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের কাজের চাপ অনেক বেড়েছে।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স রহিমা খাতুন বলেন, গত ১০ দিনে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। এই ওয়ার্ডে ৫ জন রোগীকে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও গড়ে ৬০-৮০ জন রোগী ভর্তি থাকছে। আক্রান্তদের ৯০ ভাগই শিশু।
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, শিশুদের শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে না পারলে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাঁশি বা রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং অনিরাপদ খাবারও ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, শীতজনিত রোগ থেকে শিশুদের সুরক্ষা দিতে উষ্ণ পোশাক পরানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, নিরাপদ খাবার দেওয়া এবং ঠান্ডা বাতাস থেকে দূরে রাখা জরুরি। ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে সঠিক স্যালাইন প্রয়োগের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অন্যদিকে, নিউমোনিয়া হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, শীতকে কেন্দ্র করে শীতজনিত রোগীর চাপ বেড়েছে। শিশুরা ডায়রিয়া, রোটা ভাইরাসজনিত রোগ এবং বয়স্করা নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ড হচ্ছে। বেশিরভাগ রোগীই বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে। ওয়ার্ডের রোগীর চাপও সপ্তাহখানেক ধরে কিছুটা বেড়ছে আছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, প্রতিদিনই তাপামাত্রা কমছে-বাড়ছে। মঙ্গলবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯১ শতাংশ। এজন্য তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।





