কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন কর্নেল জেহাদ খান

Any Akter
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৩:২৭ অপরাহ্ন, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৫:৩৮ অপরাহ্ন, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জ-৩ (তাড়াইল–করিমগঞ্জ) আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কর্নেল (অব) জেহাদ খান। তিনি এবার জামায়াত মনোনিত সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নির্বাচন করবেন।

ইতিমধ্যে তিনি তাড়াইল-করিমগঞ্জে ৬২টি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করে এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এতে দুই উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছেন। 

আরও পড়ুন: শ্রীপুরে জাসাস নেতাকে ইটভাটায় ডেকে নিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা

গরিবের ডাক্তার খ্যাত জেহাদ খান ইতিমধ্যে করিমগঞ্জ ও তাড়াইলের বিনামূল্যে ছানি অপারেশন করে শতাধিক মানুষকে চোখের আলো ফিরিয়ে দিয়েছেন। আগামী মাসে আরও ১৩০ জন রোগীকে বিনামূল্যে ছানি অপারেশন করার প্রস্তুতি চলছে। একই সঙ্গে শিশুদের ফ্রি খতনা ক্যাম্প করেও তিনি দুই উপজেলায় আলোচিত।  

বুধবার করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তারের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য অধ্যাপক ডা. কর্নেল (অব.) জেহাদ খান।  উপস্থিত ছিলেন তাড়াইল উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর হাবিবুর রহমান ভূইয়া, করিমগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আবুল কাসেম ফজলুল হক, নায়েবে আমীর মাওলানা জোবায়ের আহমেদ, সেক্রেটারি মাওলানা নাজিম উদ্দিন, তাড়াইল উপজেলা সেক্রেটারি এস. এম. মাসুদসহ দুই উপজেলার কর্মপরিষদ সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

আরও পড়ুন: মাওলানা আতাউর রহমান বিক্রমপুরী গ্রেফতার

কে এই জেহাদ খান? 

জেহাদ খান ১৯৫৭ সালে ১১ মার্চ কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদ ইউনিয়নে একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন।  সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শ্যালক হিসেবে পরিচিত হলেও তার পূর্বসূরীদের রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। জেহাদ খানের নানা যুক্তফ্রন্টের এমলএ বা এমপি ছিলেন। ১৯২৩ সালে তিনি বিএ পাশ করে আকর্ষনীয় সরকারি চাকরিতে যোগদান না করে কিশোরগঞ্জ আজিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন।  কিশোরগঞ্জের শহীদি মসজিদ ও জামিয়া ইমদাদিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ছিলেন তিনি।

জেহাদ খানের আপন খালা হাফেজা আসমা ছিলেন জামায়াতের মহিলা সংসদ সদস্য। 

জেহাদ খানের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রাতিষ্ঠান আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ায়। সেখানে তিনি ৫ বছর পড়াশুনা করার পর আজিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ওই বছরই তিনি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে কৃতিত্বের পরিচয় দেন। ৮ম শ্রেণিতেও তিনি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান।

জেহাদ খান ১৯৭৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে ২১তম স্থান অধিকার করেন। এসএসসি পরীক্ষায় পুরো কিশোরগঞ্জ জেলায় ১ম হওয়ায় ‘ রায়মহাশয়” স্বর্ণপদক লাভ করেন।

১৯৭৮ সালে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে স্টার মার্ক পেয়ে এইসএসসি পাশ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। কিছুদিন পর তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার সরকারি বৃত্তি নিয়ে চিকিৎসাবিদ্যা অধ্যয়নের জন্য তিনি রাশিয়া গমন করেন। ১৯৮৬ সালে তাজিকিস্তান থেকে কৃতিত্বের সাথে ডাক্তারি পাশ করেন । ১৯৮৮ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেডিকেল কোরে যোগদান করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি এসসিপিএস পাশ করে ঢাকা সিএমএইচে কার্ঢিওলজি বিভাগে যোগদান করেন। ২০০০ সালে উচ্চতর প্রশিক্ষনের জন্য জার্মান সরকারের বৃত্তি নিয়ে জার্মানী গমন করেন। ২০০০-২০০৬ তিনি আফ্রিকার আইভরিকোস্টে জাতিসংঘ বাহিনীতে মেডিসিন বিশেষজ্ঞের দায়িত্ব পালন করেন। পার্বত্য চট্রগ্রামে তিনি সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন তিনি।

দীর্ঘ ২৬ বছর সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিলেন জেহাদ খান। এছাড়া ঢাকা আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। 

২০১৪ সালে তিনি স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।  অবসরগ্রহণের পর তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে পুরোপুরি নিজেকে নিয়োজিত করেন।  ২০১৬ সালে ইবনে সিনা কার্ডিয়াক সেন্টার (ধানমন্ডি,ঢাকা) যোগদানের পর থেকে অদ্যাবধি শত শত হৃদরোগীকে স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা দিয়ে চলেছেন।