শ্রীপুরে জাসাস নেতাকে ইটভাটায় ডেকে নিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা

Sanchoy Biswas
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৫:২৫ অপরাহ্ন, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৫:২৫ অপরাহ্ন, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুরে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)-এর নেতা ফরিদ সরকারকে (৪১) মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে ইটভাটায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু।

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) ভোর চারটার দিকে শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের কেবিএম ব্রিকস (ইটখলা) এলাকায় এ মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটে।

আরও পড়ুন: বিজিবির ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

নিহত ফরিদ সরকার গোসিংগা ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের জামাল উদ্দিন সরকারের ছেলে। তিনি গোসিংগা ইউনিয়ন জাসাসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

নিহতের বাবা জামাল উদ্দিন সরকার জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে ফরিদ বাড়ি থেকে বের হন। এ সময় তিনি এবিএম ব্রিকসে যাওয়ার কথা জানান। ফরিদ সরকার ওই ইটভাটায় মাটি সরবরাহের কাজ করতেন। পরে গোসিংগা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও তার নিকট আত্মীয় সবুজ মেম্বারের মাধ্যমে জানতে পারেন ফরিদ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে ইটভাটায় এসে তিনি দেখেন ফরিদ রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন এবং তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাত রয়েছে।

আরও পড়ুন: সিলেট বিমান বন্দরে ভিড় না করার নির্দেশনা, জনদুর্ভোগের আশঙ্কায় অগ্রিম দুঃখ প্রকাশ বিএনপির

পরে তাকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কেবিএম ব্রিকস কারখানার কর্মচারী জাকির হোসেন ও মিনারুল ইসলাম জানান, রাত ২টার দিকে ফরিদ ইটভাটায় আসেন। রাত ৩টার দিকে ৪ জন ব্যক্তি রামদা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ইটখলায় প্রবেশ করে ফরিদ সরকারকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটাতে থাকে। তারা ভয়ে পাশের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আত্মগোপন করেন। এ সময় শুধু ফরিদের কান্না ও কোপানোর চিৎকার শোনা যায়।

ইটভাটার ব্যবস্থাপক প্রদীপ সরকার জানান, ভোর ৪টার দিকে চিৎকার শুনে অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে তিনি ফরিদ সরকারকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে বিষয়টি জানানো হয়।

স্থানীয় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম রফিক জানান, ইটভাটার ম্যানেজার ফোন করে ঘটনাটি জানালে তিনি ফরিদের স্বজনদের অবহিত করেন। পরে স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, শ্রীপুরে জাসাস নেতাকে পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা সভ্য সমাজে অকল্পনীয়। এটি শুধু একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়, এটি মানবতা ও আইনের শাসনের ওপর সরাসরি আঘাত। যারা এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু। অবিলম্বে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করলে জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, আজ ফরিদ সরকার, কাল যে কেউ—এই ভয়াবহ সংস্কৃতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে নিরপেক্ষ তদন্ত ও কঠোর বিচার নিশ্চিত করতেই হবে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার দাবি করছি।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির আহমদ জানান, হত্যার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আলামত সংগ্রহ করেছে। ইটভাটার কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে আপাতত বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।