কারাগারে ফেরার পথে নিরালা হোটেলে রহস্যজনক বিরতি
কার সাথে গোপন বৈঠক কারাবন্দী মতিউরের, কিশোরগঞ্জে বরখাস্ত ১১ পুলিশ

আলোচিত ছাগল কাণ্ডের ঘটনায় আলোচিত এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান কারাবন্দি অবস্থায় নরসিংদী নিরালা হোটেলে বিশেষ এক ব্যক্তির সাথে গোপন বৈঠক নিয়ে প্রশাসনের তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় বরখাস্ত করা হচ্ছে ২ পরিদর্শক সহ ১১ পুলিশকে। কার সাথে কি প্রয়োজনে এক ঘণ্টারও বেশি সময় গোপন বৈঠক করলো তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। আদালত থেকে কারাগারে ফেরার পথে নরসিংদী নিরালা হোটেলে এক ঘন্টারও বেশি সময় গোপন বৈঠকের সুযোগ দেয়ার অভিযোগে ১১ পুলিশকে বরখাস্ত করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ হাসান চৌধুরী।
গত বছরের কোরবানি ঈদের আগে ছেলের ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে আলোচনায় আসেন মতিউর রহমান দম্পতি। গণঅভ্যুত্থানের পর এনডিয়া সদস্য মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী আওয়ামী লীগ নেত্রী উপজেলা চেয়ারম্যান কে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুন: বিজিবির উদ্যোগে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ এর ৫৪তম শাহাদত বার্ষিকী পালন
গত ১২ আগষ্ট,২০২৫ আলোচিত এই মতিউরকে কিশোরগঞ্জ কারাগার হতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে দুর্নীতির মামলা শুনানির জন্যে নেয়া হয়। শুনানি শেষে কারাগারে ফেরার পথে মতিউরকে বহনকারী গাড়িটি নরসিংদীর নিরালা হাড্ডি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে বিকেল ৫.১৮ মিনিট হতে ৬.০৮ মিনিট পর্যন্ত যাত্রা বিরতি করে। যাত্রা বিরতির সময় কার্যত দেখা যায় মতিউর হোটেলের একটি কক্ষে অপর এক ব্যক্তির সাথে একান্তে বৈঠক করেন। যাত্রা বিরতির নামে প্রায় এক ঘণ্টা তারা গোপন বৈঠক করেন। ঐ কক্ষে কোন নিরাপত্তা কর্মী ছিল না।
গোপন বৈঠকের খবরেই তোলপার শুরু হয়। কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশের উদ্যোগে করা হয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু এর কোন সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে না। অবশেষ নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত , উক্ত হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ফুটেজটি যাচাই করে দেখা যায়, বিকেল ৫.১৮ মিনিটে মতিউরকে বহনকারী পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যান এবং প্রিজন ভ্যানের সাথে আসা পুলিশের এসকর্ট গাড়ি ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। এবং হাতকড়া ছাড়াই মতিউরকে প্রিজন ভ্যান থেকে নামানো হয়।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে নাশকতার পরিকল্পনায় সাবেক এমপি সাদ্দাম হোসেন পাভেলসহ ৯ জন গ্রেপ্তার
হোটেলের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছিলেন সাদা টি-শার্ট, জিন্স ও কালো রঙের জুতা পরিহিত একজন ব্যক্তি (৫.১৯.১৬ সেকেন্ড টাইম কোড দেখুন), মতিউরকে আনা হচ্ছে দেখেই তিনি হোটেলের একটি ভেতরের কক্ষে ঢুকে পড়েন, এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ সদস্যরা মতিউরকেও সেই কক্ষে প্রবেশ করিয়ে বাইরে অবস্থান করেন (৫.১৯.৪২ সেকেন্ড টাইম কোড দেখুন)।
এরপর ৬.০৬.১৯ সেকেন্ডে, মতিউর সেই সাদা টিশার্ট পরিহিত ব্যক্তির কাঁধে হাত দিয়ে সেই কক্ষ হতে বের হন, এবং বেশ স্বাভাবিকভাবে মতিউর প্রিজনভ্যানের দিকে এগিয়ে যান, এবং তাঁর আশেপাশের সকল পুলিশদের বডি ল্যাংগুয়েজ স্পষ্ট বলে দিচ্ছে, সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান সম্পূর্ণ পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন।
ঠিক ৬.০৬.৫৬ সেকেন্ডে সাদা টি-শার্ট পরিহিত ব্যক্তি মতিউরকে আলিঙ্গন করে প্রিজন ভ্যানে উঠিয়ে বিদায় জানান, ৬.০৮.৫০ সেকেন্ডে এসকর্ট গাড়ি সহ, প্রিজনভ্যানটিকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে দেখা যায়।
পুলিশ ও কারা কর্মকর্তারা তাঁরা নিশ্চিত করেছেন আসামীসহ কোনভাবেই এধরনের অননুমোদিত বিরতির সুযোগ নেই। যদি পথে জরুরিভাবে খাওয়া বা বাথরুমের জন্যেও বিরতি নেয়া হয় তাহলে বন্দিকে হাতকড়া সহ, কড়া প্রহরায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে স্বল্প সময়ের জন্যে ৫-১০ মিনিট সর্বোচ্চ বিরতি নেয়া যেতে পারে।
তবে কোনোভাবেই কারো সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করানোর সুযোগ নেই, এবং ৫০ মিনিট এভাবে আসামীকে মিটিংয়ের সুযোগ করে দেয়া একেবারেই অনৈতিক, তাঁরা মন্তব্য করেন এটি সম্পূর্ণভাবেই আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এদিকে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী জানা ন দায়িত্ব অবহেলার জন্য পুলিশকে বরখাস্ত করা হচ্ছে। মতিউর কার সাথে গোপন বৈঠক করছিলেন সেতু জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায় মতিউর যার সাথে দেখা করেছেন তাঁর পরিচয় খুঁজে বের করা এবং কি কারণে তাঁদের এই মিটিংয়ের আয়োজন সেটাও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা হোটেলের ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করছে। গোপনীয় কি বৈঠক কি বিষয়ে তারা কথা বলছিল তাও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।