ঢাবিতে বিশেষ বিবেচনায় সিট বরাদ্দ: প্রশ্ন তুললেন হল সংসদের নেতারা
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ফ্যাসিবাদের সময় নির্যাতনের কারণে নিয়মিত পড়াশোনা করতে না পারা শিক্ষার্থীদের’ বিশেষ বিবেচনায় ভর্তি ও হল সিট বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন হল সংসদের নেতাদের অভিযোগ, সিট পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমনও আছেন যারা অতীতে শৃঙ্খলাজনিত কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন অথবা দীর্ঘসময় ক্যাম্পাসে থেকেও একাডেমিক অগ্রগতি দেখাতে পারেননি।
ফজলুল হক মুসলিম হল ও অমর একুশে হলসহ কয়েকটি হলে ইতোমধ্যে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে কেউ কেউ পরীক্ষায় অনিয়ম, শৃঙ্খলাভঙ্গ বা মারামারির কারণে পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। আবার কেউ কেউ বহু বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকলেও প্রথম বর্ষ উত্তীর্ণ হতে পারেননি।
আরও পড়ুন: নতুন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ব্যবসা চলবে না: ডাকসু ভিপি
এ নিয়ে আজ দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদের সঙ্গে সাক্ষাত করে লিখিত অভিযোগ জমা দেন ফজলুল হক মুসলিম হল সংসদের নেতৃবৃন্দ। তারা অভিযোগপত্রে জানান, বরাদ্দকৃত সিটে থাকা বর্তমান শিক্ষার্থীরা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে তাদের সঙ্গে থাকতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন—ফজলুল হক মুসলিম হল সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) খন্দকার মোহাম্মদ আবু নাঈম, জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) ইমামুল হাসানসহ হল সংসদের আরও প্রতিনিধিরা। এছাড়া ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের কয়েকজন সম্পাদকও উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: তেজগাঁও কলেজে পদোন্নতি-বৈষম্য: বেআইনিভাবে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, উপেক্ষিত এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রিধারী
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ অভিযোগগুলো তিন ধাপে যাচাইয়ের আশ্বাস দেন। প্রথমে সংশ্লিষ্ট হল প্রশাসনের কাছে বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হবে। এরপর প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে—সিট বরাদ্দের ভিত্তি ও প্রক্রিয়া নিয়ে। প্রয়োজন হলে বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায়ও আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
ফজলুল হক মুসলিম হলের ভিপি আবু নাঈম বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনৈতিকভাবে সিট বণ্টন শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না।”
জিএস ইমামুল হাসান বলেন—“২০ বছর আগে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা কীভাবে এখন সিট পেল, প্রশাসনের কাছে সেই জবাব চাই।”
মাস্টারদা সূর্যসেন হলের ভিপি আজিজুল হক অভিযোগ করেন—“একদিকে নবীন শিক্ষার্থীদের সিট দেওয়া হচ্ছে না, অন্যদিকে বয়সে অনেক প্রবীণ শিক্ষার্থীকে সিট দেওয়া হচ্ছে—এটি প্রশাসনের জন্য বিব্রতকর।”
ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক আলী ইবন মোহাম্মদ আশঙ্কা প্রকাশ করেন—“বিশেষ সুবিধা দিয়ে সিট বরাদ্দ দিলে অতীতে নিষিদ্ধ সংগঠনের মাধ্যমে যে ‘গণরুম–গেস্টরুম’ সংস্কৃতি ছিল, তা আবার ফিরতে পারে।”
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা বলেন—“হল সিট পাওয়ার ক্ষেত্রে মেধা, প্রয়োজনীয়তা ও নিয়ম প্রধান। নতুন শিক্ষার্থীরা যেখানে থাকার জায়গার অভাবে ভোগছেন, সেখানে বছরের পর বছর ক্যাম্পাসে থাকা শিক্ষার্থীদের আবার সিট দেওয়া অন্যায়।”
বর্তমানে বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। হল প্রশাসন ও প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সিদ্ধান্তের ওপর পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করবে বলে জানা গেছে।





