লোকসভা নির্বাচন
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাচ্ছেন মোদি?

ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে আজ মঙ্গলবার (৪ জুন) । সাত ধাপে টানা দেড় মাস ভোটগ্রহণ শেষে এদিন সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে শুরু হয় ভোট গণনা পর্ব। এর আগে বুথফেরত জরিপে প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের নিরঙ্কুশ জয়ের আভাস মিললেও, পাশার দান উল্টে যেতে শুরু করে ভোট গণনার দুই ঘণ্টা পেরুতেই।
ভারতের ক্ষমতাসীন এই দলটি এবারের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অনেক দূরে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। মূলত প্রাথমিক ভোট গণনায় মোদির ভূমিধস জয়ের আভাস মেলেনি।
আরও পড়ুন: ট্রাম্প-পুতিন ঐতিহাসিক বৈঠক শেষ, যে সিদ্ধান্ত এলো
যদিও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট কম-বেশি ২৯০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।
বিবিসি বলছে, নরেন্দ্র মোদি যখন ‘আব কি বার, চারশ পার’ (এবারে চারশ ছাড়িয়ে যাব) স্লোগান দিয়ে নির্বাচনের প্রচার শুরু করেছিলেন, তখন তিনি তার বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের জন্য ৪০০ টিরও বেশি আসনে জয়ী হওয়ার লক্ষ্য রেখেছিলেন।
আরও পড়ুন: আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ‘মূল কারণ দূর করতে হবে’
সবচেয়ে আশাবাদী বুথ ফেরত জরিপও পূর্বাভাস দিয়েছিল, তার জোট ৪০০ আসনে জয়ী হবে। যাইহোক, প্রাথমিক ভোট গণনা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনে বিরোধী মধ্য বামপন্থি ইন্ডিয়া জোটের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে।
ভারতের ৫৪৩ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭২টি আসন। এনডিএ ওই পর্যন্ত পৌঁছাবে কিনা তা নিয়ে ইতোমধ্যেই সংশয় তৈরি হয়েছে। দুই জোটের মধ্যে ব্যবধান প্রত্যাশার চেয়ে কমে আসছে বলে মনে হচ্ছে, প্রাথমিকভাবে মাত্র ৬০ থেকে ৭০টি আসনের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।
কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারও বলছে, নরেন্দ্র মোদির এনডিএ আর বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র মাঝে ফারাক মাত্র ৫০ আসনের আশপাশে। এমনকি অযোধ্যার ফয়েজাবাদ আসনেও পিছিয়ে রয়েছে বিজেপি প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে তিনি তিন হাজারের বেশি ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন।
দল হিসেবে এবারের নির্বাচনে বিজেপি এগিয়ে ২৩৯টি আসনে। সংবাদমাধ্যম বলছে, দুপুর দুইটা পর্যন্ত বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ২৩৯টি আসনে। এছাড়া কংগ্রেস ৯৮ এবং অন্যান্য দল ২০৬টি আসনে এগিয়ে আছে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩১টিতে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। দুপুর দুইটা পর্যন্ত যে ফলাফল পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ১০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। আর একটিতে এগিয়ে কংগ্রেস।
এছাড়া সমাজবাদী পার্টি এগিয়ে রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। গত লোকসভা ভোটে পেয়েছিল এই দলটি পেয়েছিল মাত্র পাঁচটি আসন। সেই দলই এ বার ৩৮টি আসনে এগিয়ে। আজমগড়ে এসপি প্রার্থী ধর্মেন্দ্র যাদব তার নিকটতম প্রার্থী বিজেপির দীনেশ লালের থেকে ৪৫ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন।
৮০ আসনের উত্তরপ্রদেশে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ত্রিশের বেশি আসনে। ৩৮টি আসনে এগিয়ে সমাজবাদী পার্টি।
এবারের লোকসভা নির্বাচন গত ১৯ এপ্রিল শুরু হয়েছিল। সাত দফার ভোট শেষ হয় গত ১ জুন। এরপর মঙ্গলবার ৮টা থেকে শুরু হয় ভোট গণনা। প্রথমে পোস্টাল ব্যালট, তার পর ইভিএমে পড়া ভোটের গণনা হয়। রাউন্ড যত এগোচ্ছে, এনডিএ জোট বনাম ‘ইন্ডিয়া’র লড়াই ততই জোরালো হচ্ছে।
অবশ্য বিজেপি কখনোই ৪০০ আসন পাবে না বলে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল কংগ্রেসের। যদিও চার দশক আগে তারাই ৪০০ আসন পারের লক্ষ্য পূরণ করতে সফল হয়েছিল। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর নিজের দেহরক্ষীদের হাতে খুন হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
এরপর সেই বছরই অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে ৫৪১টির মধ্যে ৪১৪টি আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসীন হন ইন্দিরার ছেলে রাজীব গান্ধী।