গাজার হাড্ডিসার জিম্মিদের ভিডিও, পশ্চিমাদের নিন্দা ও রেড ক্রসকে সম্পৃক্ত করার আহবান

Any Akter
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১:৪১ অপরাহ্ন, ০৪ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, ০৪ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

হামাস গাজায় হাড্ডিসার হয়ে পড়া ইসরায়েলি জিম্মিদের ভিডিও প্রকাশের পর পশ্চিমা নেতারা এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে জিম্মিদের কাছে রেড ক্রসকে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড্যাভিড ল্যামি বলেছেন, 'প্রচারণার জন্য জিম্মিদের ছবি ব্যবহার বিরক্তিকর' এবং তাদের নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেয়া উচিত।

'দ্য প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ' রম ব্রাসলাভস্কির যে ভিডিও প্রকাশ করেছেন, তাতে তাকে খুবই হালকাপাতলা ও কাঁদতে দেখা গেছে। আর হামাস শনিবার প্রকাশ করেছে এভিয়াটার ডেভিডের ক্ষীনকায় ছবি।

আরও পড়ুন: ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত, পদক্ষেপ সীমিত: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন

২১ বছর বয়সী ব্রাসলাভকি এবং ২৪ বছর বয়সী ডেভিডকে ২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যাল থেকে জিম্মি করে এনেছিলো হামাস।

ইসরায়েলি নেতারা জিম্মিদের অনাহারে রাখার অভিযোগ করেছে হামাসের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: গাজা পুরোপুরি দখলে ইসরায়েলের অভিযান শুরু, ২৪ ঘণ্টায় নিহত ১২৩

তবে, হামাস তা অস্বীকার করে বলেছে, গাজার ক্ষুধা সংকটের মধ্যে হামাস যোদ্ধা ও সেখানকার মানুষ যা খাচ্ছে জিম্মিরাও তাই খাচ্ছে। মোট ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে এখন ৪৯ জন জিম্মি গাজায় আছে বলে ইসরায়েল বলছে। তবে এর মধ্যে ২৭ জন মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভিডিওগুলো প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওই দুই জিম্মির পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন জিম্মিদের উদ্ধারে 'বিরতিহীনভাবে' সব প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

রোববার নেতানিয়াহু ওই অঞ্চলের রেড ক্রস প্রধানের সাথেও কথা বলেছেন। তিনি জিম্মিদের কাছে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর অনুরোধ করেছেন।

রেড ক্রস বলেছে, জীবন বিপন্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে যেভাবে জিম্মিদের রাখা হয়েছে সেই ভিডিও দেখে তারা আতঙ্কিত। সংস্থাটি জিম্মিদের কাছে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছে।

হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাশেম ব্রিগেড বলেছে গাজায় মানবিক করিডর নিয়মিত ও স্থায়ী ভিত্তিতে খুলে দেয়া হলে এবং সাহায্য নেয়ার সময় হামলা বন্ধ হলে জিম্মিদের কাছে রেড ক্রসের খাবার ও ঔষধ সরবরাহের অনুরোধকে তারা ইতিবাচকভাবেই দেখবে।

যুদ্ধের সময়ে রেড ক্রসের ভূমিকার জন্য ইসরায়েলে সংস্থাটিকে ব্যাপক সমালোচনা শুনতে হয়েছে। বলা হয়েছে, গাজায় থাকা জিম্মিদের পাশে দাঁড়াতে সংস্থাটি ব্যর্থ হয়েছে।

চলতি বছরের শুরুতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার চুক্তির অংশ হিসেবে জিম্মিদের মুক্তির সময় নৈরাজ্যময় পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি হওয়া ক্ষোভের মধ্যে সংস্থাটি তাদের সীমাবদ্ধতা ব্যাখ্যা করেছিলো।

তারা বলেছিলো, সংঘাতময় এলাকায় তাদের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করতে হয়। সমালোচনা আছে ফিলিস্তিনেও কারণ সংস্থাটিকে ২০২৩ সালের সাতই অক্টোবরের পর থেকে যেসব ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলের কারাগারগুলোতে রাখা হয়েছে তাদের সাথে সাক্ষাতের অনুমতি দেয়া হয়নি।

এদিকে, তেল আভিভে সপ্তাহান্তে জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরাসহ বিক্ষোভকারীরা জমায়েত হয়ে জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিতের জন্য ইসরায়েলি সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে।

ডেভিড ও ব্রাসলাভস্কির পরিবার শনিবার ওই সমাবেশে বলেছে 'ওই নরকে থাকা প্রত্যেককে এখনি বের করে নিয়ে আসা উচিত'। এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ব্রাসলাভস্কি কাঁদছেন ও বলছেন যে তার খাবার ও পানি ফুরিয়ে আসছে।

তিনি বলছেন যে তিনি দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারছেন না এবং 'তিনি এখন মৃত্যুর দরজায়'। তার পরিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে তারা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে আবেদন করছে।

দ্বিতীয় ভিডিওতে ডেভিড বলছেন 'আমি কয়েকদিন ধরে খেতে পারছি না....মাঝে মধ্যে খাবার পানি পাচ্ছি"।

তাকে সেখানে মাটি খুঁড়তে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলছেন যে, তিনি তার নিজের কবর খুঁড়ছেন। তার পরিবার বলছে, হামাসের টানেলে তাকে ইচ্ছাকৃত অনাহারে রাখা হয়েছে- তিনি এখন জীবন্ত কঙ্কাল, জীবন্ত কবর দেয়া হচ্ছে।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎস বলেছেন, ছবিগুলো দেখে তিনি আতঙ্কিত বোধ করছেন। তিনি বলছেন যে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির বাধ্যতামূলক পূর্বশর্ত হলো সব জিম্মির মুক্তি।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁক্র বলেছেন হামাস চরম নিষ্ঠুরতার প্রতীক। তিনি বলেছেন, জিম্মিদের মুক্তি, যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় মানবিক সহায়তার জন্য ফ্রান্স অব্যাহতভাবে কাজ করছে।

ফ্রান্স, কানাডা ও যুক্তরাজ্য সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। ইসরায়েলর এর তীব্র নিন্দা করেছে।

জাতিসংঘ সংস্থাগুলো গাজায় দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ চিত্র বিরাজ করছে বলে আগেই বলেছে। তারা অপুষ্টি ও মৃত্যুর তথ্য দিচ্ছে নিয়মিত। এর মধ্যেই গাজায় জিম্মিদের ভিডিও প্রকাশ হলো। হামাস অপুষ্টিতে ৯৩ শিশুসহ ১৭৫ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে।

জাতিসংঘ ও ইসরায়েলের কিছু সহযোগী গাজায় অনাহারের জন্য ইসরায়েলি বিধিনিষেধকেই দায়ী করেছে। ইসরায়েল অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বরং এজন্য হামাসকে দায়ী করছে। ব্যাপক প্রমাণ সত্ত্বেও ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ ও দেশটির সংবাদমাধ্যমের একাংশ গাজায় অনাহারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

তবে ইসরায়েলেও প্রতিবাদকারীরা ক্ষীণকায় শিশুদের ছবি প্রদর্শন করে হামাসের সাথে চুক্তির দাবি জানিয়েছে। তবে অনেক ইসরায়েলিই সেখানকার জরুরি পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত নয়। যুদ্ধ চলছে, ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ছে। জনমত জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে জনমত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা দেশটির নেতাদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। সূত্র: বিবিসি