৩ মাসের সময় চেয়ে ট্রাম্পকে ড. ইউনূসের চিঠি

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক কার্যকরের সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (৭ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুন: গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক মো. আবদুল জলিল
প্রেস সচিব বলেন, ট্রাম্প বরাবর লেখা চিঠিতে ইতোমধ্যে সই করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। খুব দ্রুত চিঠি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে যাবে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের যারা ট্রেড দেখেন তাদের কাছে অর্থ উপদেষ্টা আরও একটা চিঠি দেবেন বলেও জানান তিনি।
চিঠিতে বলা হয় বাংলাদেশকে তিনি মাস সময় দেওয়া হোক, যাতে আমদানি বাড়িয়ে এবং শুল্ক কাঠামো সংস্কার করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়।
আরও পড়ুন: ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ, আশ্রয় দিচ্ছে ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে
চিঠিতে ড. ইউনূস বলেন, আপনার অভিষেকের পরপরই আমি আমার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠিয়ে জানিয়েছি যে ১৭ কোটি মানুষের দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে আগ্রহী। আমরা এই উদ্যোগ গ্রহণকারী প্রথম দেশ।
প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, বাংলাদেশই প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে বহু বছরের চুক্তিতে সই করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এলএনজি রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর থেকেই বাংলাদেশ এলএনজিভিত্তিক সহযোগিতা সম্প্রসারণে কাজ করছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য বিশেষ করে তুলা, গম, ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানি বাড়ানোর কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, যা আমেরিকান কৃষকদের আয় ও জীবিকার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দ্রুত বাজারে এসব পণ্য পৌঁছাতে বাংলাদেশে একটি ‘ডেডিকেটেড বন্ডেড ওয়্যারহাউজ’ চালুর কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে এসব পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণ্যে বাংলাদেশেই সবচেয়ে কম শুল্ক আরোপ করা হয়। তুলা, স্ক্র্যাপ লোহা ও কৃষিপণ্যে শুল্ক শূন্য রাখার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতির মতো শীর্ষ মার্কিন পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক হ্রাসের কাজ চলছে। তা ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য রপ্তানির বিদ্যমান অশুল্ক বাধা দূর করারও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে রয়েছে নিরীক্ষা ও পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা হ্রাস, প্যাকেজিং ও লেবেলিংয়ের মানদণ্ড সহজিকরণ, শুল্ক প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং অন্যান্য বাণিজ্য সুবিধা সম্প্রসারণ।
চিঠিতে আরও জানানো হয়, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দেশে মার্কিন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক চালুর কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এর ফলে নাগরিক প্রযুক্তি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও প্রতিরক্ষা খাতসহ বিভিন্ন উচ্চ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, আমরা আশা করি, আগামী তিন মাসের মধ্যেই এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। এই সময়ের মধ্যে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও ভারসাম্য তৈরির কার্যক্রম শেষ করব।
চিঠির শেষাংশে তিনি অনুরোধ জানিয়ে লিখেছেন, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যে আরোপিত পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, আপনি আমাদের এই অনুরোধ গ্রহণ করবেন।