শেখ হাসিনার রায় ঘিরে মাঠে থাকবে জামায়াতসহ ৮ দল

একটি মহল নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে: মির্জা ফখরুল

Sanchoy Biswas
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ৭:৩৩ অপরাহ্ন, ১৬ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৭:৩৩ অপরাহ্ন, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচি প্রতিহত করতে মাঠে থাকবে বিএনপি-জামায়াতসহ ৮ দল। এই রায়কে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে আগুন ও নৈরাজ্যের ঘটনা ঘটছে।

এর আগে গত ১৩ নভেম্বর ট্রাইবুনাল জানিয়েছিল, শেখ হাসিনার মামলায় সাজা ঘোষণা করা হবে ১৭ নভেম্বর সোমবার। ওইদিন আওয়ামী লীগের ডাকে ঢাকায় লকডাউনের কর্মসূচি পালিত হয়। দলের দাবি, শেষ পর্যন্ত শুধু রাজধানী নয়, বাংলাদেশের কমবেশি সব জেলাতেই লকডাউনের পক্ষে মানুষের সাড়া পাওয়া গেছে। বহু মানুষ সেদিন স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে বের হননি।

আরও পড়ুন: দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ আগামী সপ্তাহে

আওয়ামী লীগ আশা করছে, সোমবার হাসিনার সাজা ঘোষণার দিনে দেশের মানুষ বাড়ি থেকে বের হবেন না। দেশ অচল করার সংকল্প নিয়ে কোমর বেঁধে প্রস্তুতি নিয়েছে শেখ হাসিনার দল। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ফেসবুক পেজে বলেছেন, সোমবার ঢাকার থেকেও জেলাগুলিতে শাটডাউন অনেক বেশি সফল হবে।

তিনি আরও জানান, রাজধানী সচল রাখতে ইউনুস সরকার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যাতে কর্মীরা অফিসে আসেন। ১৩ নভেম্বর বেশ কিছু বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছিল। তাদেরও প্রশাসনের তরফে সতর্ক করে বলা হয়েছে, কোন অবস্থাতেই শিক্ষাঙ্গন বন্ধ রাখা যাবে না।

আরও পড়ুন: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিশ্বনেতাদের উত্থান, পতন ও পরিণতি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনার রায় নিয়ে একটি মহল দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। রোববার দুপুরে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে মাওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই খারাপ, নির্বাচিত সরকার না থাকলে তা আরও খারাপ হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও খারাপ এবং নির্বাচিত সরকার না থাকলে তা আরও খারাপ হবে। আগামীকাল ফ্যাসিস্ট হাসিনার গণহত্যার রায় বের হবে। এই নিয়ে চরম একটা অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক সারা দেশে বিরাজ করছে। একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে চায় এবং তারা বিভিন্ন দাবি তুলে নির্বাচনকে ব্যাহত করতে চায়।

তিনি আরও বলেন, “এ দেশে এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন একটি নির্বাচিত সরকার, যার পেছনে জনগণ থাকবে। নির্বাচন হচ্ছে একমাত্র পথ, যা দিয়ে একটি ট্রানজিশন ডেমোক্রেসিতে আমরা যেতে পারব এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করতে পারব। যদিও অনেক বিভ্রান্তি, হতাশা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।”

এদিকে, রোববার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে ৮ দলের বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, “আমরা অতীতের কর্মসূচিতেও মাঠে ছিলাম, এবারও ফ্যাসিবাদের পক্ষে নাশকতার কোনো সুযোগ জাতি দেবে না। তারা (আওয়ামী লীগ) এর সুযোগ পাবে না। আমরা আট দল মাঠে থাকবো।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, আট দলের পক্ষ থেকে গণভোটে “হ্যাঁ” বলার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গণভোটে “হ্যাঁ” ভোটের পক্ষে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন, তাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জনগণের আকাঙ্ক্ষার আংশিক পূরণ হয়েছে। আট দলের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে যেগুলো পূরণ হয়েছে, তা আদায়ে কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

প্রসঙ্গত, আজ সোমবার বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান মামলায় রায় ঘোষণা করবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। এদিন সকাল ৯টায় ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ রায় ঘোষণা শুরু করবেন। রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া দেবেন শেখ হাসিনা। ট্রাইবুনালে জানানো হয়েছে, সোমবার হাসিনার সাজা ঘোষণার পর্বটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

এই প্রথম কোন মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজার মুখে পড়তে চলেছেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপক্ষ তথা মহম্মদ ইউনুস সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়িত থাকার অভিযোগে দায়ের হওয়া এই মামলায় অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও বাংলাদেশ পুলিশের প্রাক্তন প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

তিনিও আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন, যা সরকারের অবস্থানকে আরও জোরদার করেছে। গত বছর জুলাই-আগস্টে আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে আদালতে দাবি করেছেন এই প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা। রাজসাক্ষী হওয়ায় তাঁর সাজার পরিমাণ কম হতে পারে। সরকারপক্ষ কঠোর সাজা দাবি করেননি।