বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ও সুনামির ভয়ঙ্কর ইতিহাস

Sadek Ali
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২:৪৩ অপরাহ্ন, ২১ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২:৪৩ অপরাহ্ন, ২১ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

রাশিয়ার ক্যামচাটকা উপদ্বীপের কাছে গত ৩০শে জুলাই ৮ দশমিক ৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পগুলোর একটি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

সেদিন স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে, যার ফলে সুনামি সৃষ্টি হয়। এসময় রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও প্রশান্ত মহাসাগরের আশপাশের অঞ্চল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিশ্বনেতাদের উত্থান, পতন ও পরিণতি

সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প

১৯০০ সালে আধুনিক ভূকম্পবিজ্ঞানের শুরুর দিক থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচটি ভূমিকম্প রাশিয়ার উপকূলে হওয়া ভূমিকম্পের চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল।

আরও পড়ুন: অবসরে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ

এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল ১৯৬০ সালের চিলির ভালডিভিয়া ভূমিকম্প, যেটির মাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫।

ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) অনুযায়ী, এতে ১ হাজার ৬৫৫ জন নিহত হয় এবং প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।

২০১১ সালের জাপানের গ্রেট তোহোকু ভূমিকম্পের পর থেকে এখন পর্যন্ত যতগুলো ভূমিকম্প হয়েছে এরমধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল রাশিয়া ক্যামচাটকা উপকূলের এবারের ভূমিকম্প।

তোহোকু ভূমিকম্প এক বিধ্বংসী সুনামির সৃষ্টি করেছিল, যা ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিপর্যয় ডেকে আনে। শক্তিশালী ভূমিকম্পের তালিকায় এটির অবস্থান তিনে।

এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ১৯৬৪ সালের আলাস্কা ভূমিকম্প যেটির মাত্রা ছিল ৯ দশমিক ২, চতুর্থ অবস্থানে আছে ২০০৪ সালের সুমাত্রা ভূমিকম্প। যেটির মাত্রা ছিল ৯ দশমিক ১।

এর আগেও ক্যামচাটকা উপদ্বীপের কাছে ১৯৫২ সালে ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে, শক্তিশালী ভূমিকম্পের তালিকায় যেটির অবস্থান পাঁচে।

ইউএসজিএসের তথ্যমতে, এর ফলে "হাওয়াইয়ে সৃষ্ট হওয়া বিশাল সুনামিতে এক মিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়"।

বুধবারের ভূমিকম্পের আগে, ভূমিকম্পের তালিকায় পরবর্তী নাম ছিল ২০১০ সালে চিলির এবং ১৯০৬ সালে ইকুয়েডরের উপকূলে হওয়া ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প।

এখন এটি ষষ্ঠ শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।

ভূমিকম্প কীভাবে সুনামি সৃষ্টি করে?

পৃথিবীর বাইরের স্তরটি অনেকগুলো ভাগে বিভক্ত।এগুলোকে বলা হয় টেকটোনিক প্লেট। দেখতে অনেকটা টুকরো মেলানো ধাঁধার মতো।

এই প্লেটগুলো খুবই ধীরে নড়াচড়া করে। হয়তো বছরে মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার, তুলনা করলে বলা যায় আমাদের নখ বাড়ার সমান।

এই প্লেটগুলো যখন একে অপরের দিকে বা পাশ দিয়ে সরে যায়, তখন কখনো কখনো তাদের কিছু অংশ 'আটকে' যায় আর সেখানে লম্বা সময় ধরে চাপ বা শক্তি জমতে থাকে।

একসময় এই চাপ অনেক বেড়ে যায় এবং প্লেটগুলো ঝাঁকুনি দেয় বা পিছলে যায়। এটি ভূমিকম্পের সময় অনুভূত বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত করে।

এটাই যদি সমুদ্রের নিচে ঘটে, তাহলে সেই স্থানচ্যুতি চারপাশের পানিকে জোরে ঠেলে দেয়, যা পরে সুনামি হিসেবে উপকূলের দিকে ধেয়ে যায়।

হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূকম্পবিদ্যা ও টেকটোনিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হেলেন জানিশেভস্কি বিবিসিকে বলেন, "সাধারণত সুনামির ঢেউ জেট বিমানের গতিতে ছুটে চলে।"

"আপনি যদি ভাবেন, প্লেনে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পৌঁছাতে কত সময় লাগে, বুঝতে পারবেন ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে সুনামির ঢেউ পৌঁছাতে সেই পরিমাণই সময় লাগে," যোগ করেন তিনি।

সব ভূমিকম্প সুনামি সৃষ্টি করে না

যুক্তরাষ্ট্রের ওশানিক এন্ড এটমোস্ফিয়ার এডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) তথ্য অনুযায়ী, "সাধারণত কোনো ভূমিকম্পের মাত্রা ৮ -এর বেশি না হলে তা বিপজ্জনক দূরবর্তী সুনামি সৃষ্টি করতে পারে না।"

সংস্থাটি বলছে, "সমুদ্র তলের স্থানচ্যুতির পরিমাণ, ভূমিকম্প যে অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছে তার আয়তন এবং ভূমিকম্পের ওপরের পানির গভীরতা — এসবই সৃষ্ট সুনামির আকার নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।"

এনওএএ আরও বলছে, সাত মাত্রার বেশি ভূমিকম্পের ফলে বেশিরভাগ সুনামি সৃষ্টি হয়, যেগুলো সমুদ্রের নিচে বা খুব কাছাকাছি স্থানে ঘটে এবং পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিমি বা ৬২ মাইলের কম গভীরতায় হয়।

গ্লোবাল হিস্টোরিকাল সুনামি ডেটাবেস অনুযায়ী, ৮৯ শতাংশ সুনামি সৃষ্টি হয়েছে বড় ভূমিকম্প বা ভূমিকম্প-সৃষ্ট ভূমিধসের মাধ্যমে।