গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিলম্বের কারণে দেশে সংকট প্রকট হচ্ছে: আমীর খসরু

‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিলম্বের কারণে দেশে সংকট প্রকট হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান অবস্থার চিত্র তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন: মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি বিএনপির নজরুল ইসলাম খান
তিনি বলেন, যে সমস্ত দেশ বিপ্লবোত্তর অথবা এরকম ঘটনা বাংলাদেশে যেটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে পেরেছে ওই দেশগুলো বেঁচে গেছে, ওই দেশগুলো ভালো করছে। আর যে দেশগুলো এই বিপ্লবোত্তর সময়ে আমার দাবি-ওর দাবি করতে করতে ঝামেলা বাগাইছে ওই সমস্ত দেশে গণতন্ত্রও নাই, অর্থনীতিও নাই, সমাজও নাই, ওখানে গৃহযুদ্ধ চলছে, ওখানে সমাজের বিভক্তি চলছে, দেশের অর্থনীতি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
এইজন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এক বছর একচুয়ালি বেশি সময় হয়ে গেছে। আমাদের অনেক আগে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশটাকে একটা ডেমোক্রেটিক অর্ডারে চলে যাওয়ার কথা ছিল এবং এই না যাওয়ার কারণে দেশ কিন্তু দিন দিন নিচের দিকে যাচ্ছে, সংকট প্রকট থেকে প্রকট হচ্ছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচন বানচালে সক্রিয় ফ্যাসিবাদী শক্তি
কারণ ব্যাখ্যা করে আমীর খসরু বলেন, সরকার এখানে, জনগণ ওখানে মাঝখানে কোন ব্রিজ নাই। সেই কারণে কি হচ্ছে দেশে? পুলিশ কাজ করছে না, সরকারি কর্মকর্তারা কাজ করতে পারতেছে না।
আইন শৃঙ্খলা নাই, ব্যবসা বাণিজ্য নাই। একজন বলে গেলেন, দেশে কোন ব্যবসা বাণিজ্য নাই। মিল-ফ্যাক্টরীতে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। আমার শ্রমের একটা বিনিয়োগ আছে, আমার সময়ের একটা বিনিয়োগ আছে সে যে কাজটা করবে করার জন্য তার তো শর্ট টার্ম, মিড টার্ম ও লং টার্ম একটা প্রজেকশন আছে। এখন তো সেটা নাই ইন্টেরিয়াম মানে তো ইন্টেরিয়াম বুঝতে হবে তো। এই অবস্থায় এখানে সিদ্ধান্ত কেনো নেবে?
অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রতি ইংগতি করে তিনি বলেন, এই যে একটা সামিট হলো ওদিন। আমি উপস্থিত ওই সামিটে এবং ওই সামিটে একটা বিনিয়োগও আসে নাই্
আসবে না তো। অনেকে যারা উপস্থিত হয়েছে বেশিরভাগ বর্তমান যারা বিনিয়োগকারী তারাই গেছে ওখানে। আমি তো সবাইকে চিনি, নতুন কোন বিনিয়োগ হয়নি। কিন্তু যেই মুহুর্তে নির্বাচনের ঘোষণা এসছে এখন কিন্তু নড়াচড়া আরম্ভ হয়েছে। ওই যে ১০৭ জনের জাপানিজ ডেলিগেশন… নির্বাচন ঘোষণা দেয়ার পরে তারা এখন আসছে দেখতে… নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে সিদ্ধান্ত নেবে।
গুলশানের লেকশোরে ‘স্কুল অব লীডারশীপ’ নামক সংগঠনের উদ্যোগে ‘পোস্ট জুলাই পলিটিক্যাল থটস : হুইচ ডিরেকশন বাংলাদেশ ইজ ওয়াকিং’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
‘শুধু রাজনীতি নয়, সব খাতে গণতন্ত্রায়ন হতে হবে’
আমীর খসরু বলেন, ‘‘ বাংলাদেশ এই যে ১৫/১৬ বছর যে গোষ্ঠি ভিত্তিক একটা অর্থনীতি গড়ে উঠেছে… যে পৃষ্ঠপোশাকতার শুধুমাত্র রাজনীতিতে হয়েছে তা নয়। অর্থনীতিতে যে পৃষ্ঠপোষকতা হয়েছে যার কারণে মার্কেট ভেঙ্গে গেছে, মুক্তবাজার অর্থনীতির কনসেপ্ট ধ্বংস হয়ে গেছে।”
এজন্য বিএনপির একটা বড় স্লোগান কী জানেন? ‘ডেমোক্রেটাইজেশন অফ ইকোনমি’… আপনি খালি রাজনীতিতে ডেমোক্রেটাইজেশন করবেন আর অর্থনীতি আপনার পকেটে থাকবে, আপনার লোকেরা পকেটে থাকবে… ডেমোক্রেসি উইল নট ওয়ার্ক অর্থাৎ ডেমোক্রেসি তখনই কাজ করবে আপনার রাজনীতি গণতন্ত্রায়ন হবে, অর্থনীতি গণতন্ত্রায়ন হবে, সমাজ গণতন্ত্রায়ন হবে, আপনার পরিবারও গণতন্ত্রায়ন হতে হবে…তখন বাংলাদেশে গণতন্ত্র কাজ করবে।
তিনি বলেন, এই গণতন্ত্রায়নের অর্থ হল সকলের জন্য সমান অধিকার… বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রত্যেকটি নাগরিককে অংশগ্রহণের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সবাই যার যার অবস্থান থেকে অর্থনীতিতে, রাজনীতিতে সমাজে অংশগ্রহণ করার ব্যবস্থা থাকলে সেটাই হবে গণতন্ত্র।
‘আমরা খালি ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলাম এটা একমাত্র গণতন্ত্র না। আমরা যারা রাজনীতি করি, যারা আমরা দেশের পলিসির কথা বলি আমাদেরকে এগুলো অনুধারণ করতে হবে, ধারণ করতে হবে। এবং নিশ্চিতভাবে ডেলিভার করতে হবে। এখন খালি আপনি রেটরিকের মাধ্যমে রাজনীতির দিন শেষ হয়ে গেছে।
‘জনগণকে সম্পদের পরিণত করতে হবে’
বিএনপির অর্থনৈতিক কর্মসূচির বিভিন্ন দিক তু্লে ধরে আমীর খসরু বলেন, মানব সম্পদ উন্নয়ন হচ্ছে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন। আমার ১৮ কোটি মানুষকে যদি আমরা মানব সম্পদে পরিণত করতে পারি, ইনভেস্ট করতে পারি এজন্য জিডিপির 5% ইনভেস্ট করব আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে।
মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে, লেখাপড়া ঠিক থাকতে হবে। এটা প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য নিশ্চিত করতে হবে… এটা তার নাগরিক অধিকার। এটা তো আপনি কাউকে ফেভার করতেছেন না। আপনি তো ফেভার করতে করতে অর্থনীতির ১২টা বেজে গেছে। এর এটা দরকার, ওর ওইটা দরকার…কিন্তু যাদের নাগরিক তার অধিকারটা কোথায় কোথায়? সুতরাং পলিটিক্স হ্যাজ চেঞ্জ। আকাঙ্ক্ষা বদলে গেছে। রাজনীতির জবাবদিহিতা অন্য লেভেলে যাবে এবং যাওয়া উচিত।ওইভাবে আগামীর বাংলাদেশ তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা আশা করছি।
আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপনসহ বিভিন্ন পেশার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।