আঙ্গুলের ছাপে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন দাখিল, প্রস্তুত তিন বিকল্প প্রার্থী
নির্বাচনের শেষ প্রস্তুতির মধ্যেই বড় ধরনের রদবদল ঘটেছে বিএনপির মনোনয়নে। মাঠপর্যায়ের জরিপ, দলীয় অসন্তোষ ও জোটগত হিসাব–নিকাশ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে দলটি। পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সম্ভাব্য তিনটি আসনে বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দলীয় সূত্র জানায়, ‘ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত’ করতেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।
বিএনপি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া বগুড়া, দিনাজপুর ও ফেনী—এই তিনটি আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে তার বর্তমান শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনায় রেখে প্রতিটি আসনেই বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আরও পড়ুন: লাখো মানুষের উপস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত
ফেনী-১ (ফুলগাজী–পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া) আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম (মজনু)। প্রয়োজনে তিনিই সেখানে বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন।
বগুড়া-৭ (গাবতলী) আসনে বিকল্প হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম। আর দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন সাবেক পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার জানাজায় মোতায়েন থাকবে ১০ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
একই সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্বাচনী পরিকল্পনাও চূড়ান্ত হয়েছে। তিনি বগুড়া-৬ (সদর) ও ঢাকা-১৭ (গুলশান–বনানী–ক্যান্টনমেন্ট)—এই দুই আসন থেকে নির্বাচন করবেন। ঢাকা-১৭ আসনের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালামকে। এ আসনে আগে জোটপ্রার্থী হিসেবে প্রচারে থাকা আন্দালিভ রহমান পার্থ এখন ভোলা সদর আসনে নির্বাচন করবেন।
মনোনয়ন তালিকায় সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন এসেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে। ঢাকা-১২ আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী সাইফুল আলম নীরবের পরিবর্তে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হককে প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি ‘কোদাল’ প্রতীকে নির্বাচন করবেন।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ব্যবসায়ী মো. মাসুদুজ্জামানের অনীহার পর সেখানে বিএনপির সাবেক মহানগর সভাপতি আবুল কালাম মনোনয়ন পেয়েছেন।
চট্টগ্রামে একাধিক আসনে এসেছে নাটকীয় পরিবর্তন। রাউজান (চট্টগ্রাম-৬) আসনে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবর্তে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে গোলাম আকবর খন্দকারকে। সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনায় গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান পদ স্থগিত করা হয়।
চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এলডিপির জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে বিএনপি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিনকে প্রার্থী করেছে।
চট্টগ্রাম-৪ আসনে কাজী সালাহউদ্দিনের বদলে আসলাম চৌধুরী, আর চট্টগ্রাম-১১ থেকে সরিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম-১০ আসন। চট্টগ্রাম-১১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান।
উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেও এসেছে পরিবর্তন। বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমানের ঋণখেলাপি জটিলতার কারণে বিএনপির নেতা মীর শাহে আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে মুশফিকুর রহমানের পরিবর্তে কবির আহমেদ ভূঁইয়া, মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে মিজানুর রহমান সিনহার বদলে আবদুস সালাম আজাদ, এবং মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে কামরুজ্জামান রতনের স্থলে মো. মহিউদ্দিন আহমেদ মনোনয়ন পেয়েছেন।
এ ছাড়া ঝিনাইদহ-১ আসনে সদ্য পদত্যাগ করা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, নড়াইল-২ আসনে জোটসঙ্গী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এবং যশোরের তিনটি আসন ও মাদারীপুর-১ আসনেও নতুন প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বিএনপি দুই দফায় ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও পরে মিত্রদের জন্য আরও ১৫টি আসন ছেড়ে দেয়। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, তার জানা মতে ৩০০ আসনের মনোনয়নই চূড়ান্ত, তবে প্রতিদিন পরিবর্তন হওয়ায় একসঙ্গে তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
প্রার্থী বদলের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসে, ততই বাস্তবতা বদলায়। পরিস্থিতি ও সমীকরণ অনুযায়ী শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসাই স্বাভাবিক।





