সংঘবদ্ধ ‘ধর্ষণের শিকার’ মায়ের লজ্জায় আত্মহত্যা: ৮ বছরের শিশু মেয়েটি যাবে কোথায়

Sadek Ali
জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৮:১০ অপরাহ্ন, ২৬ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ৫:৪৬ অপরাহ্ন, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদীতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে লজ্জায় আত্মহত্যা করেছেন প্রবাসীর স্ত্রী এক নারী (৩২)। তার আট বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। মৃত্যুর আগে সেই মেয়েকে নিয়ে স্বামীর ঘরে মা-মেয়ে বসবাস করতেন। মেয়ের বাবা মালেশিয়াপ্রবাসী। মায়ের মৃত্যুর পর আট বছরের সেই মেয়েটির ঠাঁই হয়েছে নানাবাড়িতে। ঘটনার পর থেকে অবুঝ শিশুটি নানার বাড়িতে রয়েছেন। তবে বারবার শিশুটি নানার কাছে প্রশ্ন করছে, ‘মা কোথায়? আমি মার কাছে যাব।’

এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারছেন না তার নানা। কিন্তু ঘটনার দিন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাকে চাকু দিয়ে ভয় দেখায়, এ কথা মনে আছে শিশুটির। এতে শিশুটি বেশির ভাগ সময়ে ভয় ও আতঙ্কে থাকে বলে জানান শিশুটির নানা। শিশুটির নানা বলেন, তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। তাদের মধ্যে বড় ছেলে বিদেশে থাকেন এবং ছোট ছেলে তার সঙ্গে মাছের ব্যবসা করেন।

আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় মদপানে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ১

এ ছাড়া দুই মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৯ বছর আগে পাশের গ্রামের যুবকের কাছে বড় মেয়েকে বিয়ে দেন। বিয়ের পর থেকে তাদের সংসার ভালোই চলছিল। এর মধ্যে তাদের ঘরে জন্ম নেয় একটি কন্যাসন্তান। কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা এভাবে তার মেয়েকে নির্যাতন করে, সেটা কোনো দিন কল্পনায়ও আসেনি। 

যাদের কারণে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। যেন তার মেয়ের মতো আর কোনো মেয়ে এভাবে খারাপ ঘটনার শিকার না হন। কোনো বাবার কোল যেন খালি না হয়। পাশাপাশি মামলা করার পরও ভয়ে দিন কাটছে তার।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে উৎপাদনশীল করতে হলে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে: ড. মঈন খান

এদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজনের রাজনৈতিক কোনো পরিচয় না থাকলেও প্রধান অভিযুক্ত ফারুক হোসেন মুদিদোকানি। আর তোফায়েল আহমেদ রকি এলাকার চিহ্নিত মাদক সেবনকারী এবং রিয়াজ মাছ ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রী তার আট বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে একা ঘরে বসবাস করেন। ওই গৃহবধূ রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় অভিযুক্ত ফারুক, রকি ও রিয়াজ তাকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতেন।

গত বুধবার সকালে তার মেয়ে বাড়ির পার্শ্ববর্তী নুরানি মাদ্রাসায় পড়তে যায়। তখন ওই গৃহবধূ ঘরে একা ছিলেন। এই সুযোগে দুপুরের দিকে ফারুকসহ তিনজন ঘরে ঢুকে লুকিয়ে থাকেন। তার মেয়ে মাদ্রাসা থেকে ঘরে এলে মেয়েকে ধারালো চাকুর ভয় দেখিয়ে ঘর থেকে বের করে দেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। পরে ওই গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে পালিয়ে যান আসামিরা। ধর্ষণের ঘটনায় আত্মসম্মানের ভয়ে গৃহবধূ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় নিহত গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

এরপর গৃহবধূ তার ব্যবহৃত ইমো অ্যাকাউন্টে তার স্বামীর কাছে পাঠানো অডিও রেকর্ড পর্যালোচনা করে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর বাবা বাদী হয়ে সদর থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এ ঘটনায় র‍্যাব ১১–এর নোয়াখালী ক্যাম্পের সদস্যরা ঢাকার কদমতলী থানাধীন রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড মোড় থেকে ফারুক হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া অন্য দুই আসামি তোফায়েল আহমেদ রকি ও রিয়াজ হোসেনকে রায়পুর ও হামছাদী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানায় পুলিশ।

লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোন্নাফ বলেন, গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত ফারুক হোসেনকে র‍্যাব-১১ এবং তোফায়েল আহমেদ রকি ও রিয়াজ হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।