গোয়ালন্দে লাশ পোড়ানোর ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না: ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি

Sanchoy Biswas
সোহাগ মিয়া, রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ১০:০৭ অপরাহ্ন, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২:৫৬ পূর্বাহ্ন, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল ইসলাম ওরফে (নুরা পাগলা)-এর বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর পাক দরবার শরীফের পীর সাহেব নুরুল হকের মিতু দেহ জনসম্মুখে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার পর ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লাপাড়া এলাকায় পাক দরবার শরীফের পীর সাহেব নুরুল হক ওরফে নুরা পাগলার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট ও তার মৃত্যুর ১৩ দিন পর কবর থেকে লাশ তুলে মহাসড়কে পোড়ায় তৌহিদি জনতা। এ ঘটনার ৪ দিন পর ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ছিদ্দিকুর রহমান সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ফরিদপুর থেকে পিবিআই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও একই সময়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। এ সময় অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ছিদ্দিকুর রহমান সর্বস্তরের জনগণের উদ্দেশ্যে সাংবাদিকদের জানান, অপরাধী যে দলেরই হোক তাদেরকে এ ঘটনায় সঠিক তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদযাপন

দৌলতদিয়া যৌনপল্লী ও খানকা পাক শরীফ উচ্ছেদের হুমকির ব্যাপারে তিনি পুলিশ প্রশাসনকে টহল জোরদারের নির্দেশ দেন। গত শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর উচ্ছৃঙ্খল জনতা দলবদ্ধ হয়ে গোয়ালন্দে পুলিশের ২টি পিকআপ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় বাধা দিতে গিয়ে ১২ পুলিশ আহত হয়। তৌহিদি জনতার ব্যানারে পুলিশের বাধা না মেনে নুরা পাগলার বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও উভয় পক্ষের সংঘর্ষে রাসেল মোল্লা (৩৫) ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। এ সময় আহত হয় উভয় পক্ষের প্রায় ৫০ জন। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

এ সময় রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে চাঞ্চল্যকর তুহিন হত্যা মামলার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি

গোয়ালন্দঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দুপুরে পুলিশের কাজে বাধাদান ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে সাড়ে ৩ হাজার আসামীর মধ্যে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আসামি অপু কাজী (২৫) রাজবাড়ী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। ঘটনার অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট ঢাকায় একটি হাসপাতালে গোয়ালন্দের ইমাম মাহদীর দাবিদার নুরুল হক (৮৫) ওরফে নুরা পাগলার মৃত্যু হয়।

তার লাশ বাড়িতে এনে মাটি থেকে ১২ ফুট উপরে কাবা ঘরের আদলে লাশ কবর দেওয়া হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় আকিদা রক্ষা কমিটির ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পরে তৌহিদি জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলসহ গোয়ালন্দ উপজেলা প্রশাসনের নিকট বারবার মিটিং করার পরেও লাশ ১২ ফুট উপর থেকে না নামানোর কারণে সহস্রাধিক তৌহিদি জনতা জুমার নামাজের পর নুরা পাগলার বাড়ির লোহার গেট ভেঙে অগ্নিসংযোগের পর লাশ আধা কিলোমিটার দূরে ফরিদপুর-দৌলতদিয়া মহাসড়কে পদ্মার মোড় নামক এলাকায় পেট্রোল দিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে বিকেল ৫টায় নুরা পাগলার লাশ পোড়ানো হয়। এ ঘটনায় গোয়ালন্দঘাট থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে ৩ হাজার ৫ শত জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। নুরা পাগলার পরিবার থেকেও মামলা প্রক্রিয়াধীন।

এলাকার সচেতন সমাজ জানান, একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার কোনো হিসাব দুনিয়ায় থাকে না। সে আল্লাহর জিম্মায় চলে যায়। মৃত ব্যক্তিকে কবর থেকে তুলে পোড়ানো একটি ঘৃণিত কাজ। এই সকল ঘৃণিত কাজের সাথে যারা সক্রিয়ভাবে জড়িত তাদের শাস্তি দাবি জানান।