রাতারগুলে চায়না জালের থাবা! বন বিভাগের হস্তক্ষেপে ৩১টি জাল উদ্ধার

Sanchoy Biswas
সিলেট ব্যুরো
প্রকাশিত: ৭:২৯ অপরাহ্ন, ০৬ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ৫:৪৫ অপরাহ্ন, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

এশিয়া মহাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, যার মোহনীয় সৌন্দর্য আর সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য প্রতি বছর হাজারো পর্যটককে টানে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই অনন্য প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যটি এক গভীর সংকটে পড়েছে—নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে রাতের আঁধারে চলছে নির্বিচারে মাছ নিধন। এই বেআইনি কার্যক্রম শুধু পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্যই নয়, বরং পর্যটন এবং স্থানীয় জীবিকাকেও হুমকির মুখে ফেলছে।

সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে রাতারগুল বন বিভাগ, সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং তিনঘাট এলাকার নৌকা মাঝিদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা এই অভিযানে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের সংরক্ষিত এলাকায় গভীর জলে পেতে রাখা ৩১টি নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় মদপানে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ১

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, উদ্ধারকৃত জালের বাজারমূল্য প্রায় দুই লক্ষ টাকা। দুপুর ৩টার দিকে রাতারগুলের মোটরঘাট এলাকায় জালগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে কেউ পুনরায় এসব ব্যবহার করতে না পারে।

রাতারগুল সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মাহবুব আলম জানান, “গত দুই দিন ধরে আমরা স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারি, রাতারগুলের গভীরে কিছু অসাধু ব্যক্তি রাতে নিষিদ্ধ জাল পেতে মাছ শিকার করছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন বিভাগ, কমিটির সদস্য ও স্থানীয় মাঝিদের নিয়ে যৌথভাবে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানেই ৩১টি জাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।”

আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে উৎপাদনশীল করতে হলে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে: ড. মঈন খান

তিনি আরও বলেন, “রাতারগুলের পরিবেশ রক্ষায় আমরা শূন্য সহনশীল নীতি অনুসরণ করছি। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারী এই ধরনের কার্যক্রম বন্ধে ভবিষ্যতেও অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

অভিযানে উপস্থিত ছিলেন রাতারগুল বন বিভাগের কর্মকর্তা, সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং তিনঘাট নৌকা মাঝি সমিতির কয়েকজন প্রতিনিধি। অভিযানের সময় স্থানীয়রা বন বিভাগের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং ভবিষ্যতে এমন অভিযান নিয়মিত করার আহ্বান জানান।

বন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, “রাতারগুল শুধু একটি বন নয়, এটি একটি জীবন্ত পরিবেশতন্ত্র। এখানে মাছ, পাখি, উভচর প্রাণী, সরীসৃপসহ শতাধিক প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারের ফলে ছোট মাছ এবং ডিম পাড়ার সময়কার প্রজাতিগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা পুরো বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করে।”

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ২০১৫ সালে “বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য” হিসেবে ঘোষিত হয়। এরপর থেকে বন বিভাগ ও স্থানীয় সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি মিলিতভাবে এই জলাবনের সুরক্ষা ও টেকসই ব্যবস্থাপনায় কাজ করে যাচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটন বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে অবৈধ প্রবেশ, মাছ শিকার ও পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা।

পরিবেশবিদরা মনে করছেন, রাতারগুলের মতো সংবেদনশীল জলাবনে এ ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ড বন্ধ না হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং এটি ধীরে ধীরে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাবে।

রাতারগুলের জীববৈচিত্র্য রক্ষা মানে কেবল একটি বন সংরক্ষণ নয়—এটি সমগ্র সিলেট অঞ্চলের জলজ পরিবেশ, স্থানীয় জীবিকা ও পর্যটন সম্ভাবনাকে টিকিয়ে রাখা। তাই রাতের আঁধারে পরিচালিত এই ‘মাছ নিধন সিন্ডিকেট’ বন্ধে বন বিভাগ, স্থানীয় জনগণ ও প্রশাসনের যৌথ তৎপরতা অব্যাহত রাখা জরুরি।

পরিবেশের ভারসাম্য, প্রাণবৈচিত্র্যের সুরক্ষা এবং পর্যটন সম্ভাবনা—সবকিছুই নির্ভর করছে আজকের এই সচেতনতার ওপর।