সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবিতে নির্যাতন

ব্যবসায়ীকে অপহরণের সময় যৌথবাহিনীর হাতে আটক ৩, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় নেতার জামিন

Sadek Ali
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৮:১৪ অপরাহ্ন, ১১ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১১:০৪ অপরাহ্ন, ১১ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

গুলশানে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায়ের নির্যাতনের সময় যৌথবাহিনীর চেকপোষ্টে অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার ও একজনকে আটক করা হয়। পুলিশ অভিযানের পরবর্তীতে এজহারভুক্ত আরো দুই আসামিকে আটক করা হয়। আটককৃতদের একজন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা। গত দুইদিন ধরে এই মামলা নিয়ে গুলশান থানায় চলে দেন-দরবার ও তুলকালাম অবস্থা। মুখের কুলুপ এঁটে কারো ফোন ধরছেন না ওসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। যৌথবাহিনীর হাতেনাতে আটক হন ১ নং আসামি  ইদ্রিস আলী। পরবর্তীতে আটক হয় ২ নং আসামি মোহাম্মদ হেলাল ও তিন নং আসামি মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন শাওন। ৩ নং আসামি শাওন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। প্রথম আসমির এক দিনের রিমান্ড শেষে ও দ্বিতীয় তৃতীয় আসামিকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই হারুন জানান মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে আদালত সূত্র জানায়, মামলার ৩ নং এজারভুক্ত আসামি এবং অপহরণ মুক্তিপণ আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া নাসির উদ্দিন শাওন বিকেলে আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। 

গুলশান থানার দায়েরকৃত মামলার এজাহারে বলেন আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী শেখ নাঈম আহমেদ (৩০), পিতা-মোঃ বদিউজ্জামান শেখ, মাতা-নার্গিস বেগম, স্থায়ী সাং- হরিদাসপুর, থানা-গোপালগঞ্জ সদর, জেলা-গোপালগঞ্জ, বর্তমান সাং- মিরপুর-০৬, রোড নং- ০৪, সেকশন-বি, বাড়ি নং-১২, ৮ম তলা, থানা-পল্লবী, জেলা-ঢাকা অত্র থানায় হাজির হয়ে যৌথ বাহিনীর সহায়তায় ধৃত আসামী ০১। মোহাম্মদ ইদ্রিস (৪৬), পিতা-আব্দুল হক পলাতক ০২। মোহাম্মদ হেলাল (২৬), পিতা-মোঃ রেজোয়ানথানা-বাঁশখালী, জেলা-চট্টগ্রাম, ০৩। নাসির উদ্দিন শাওন (২৮), পিতা- অজ্ঞাত, স্থায়ী সাং-অজ্ঞাত, থানা-অজ্ঞাত, জেলা-অজ্ঞাত, সহ অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে লিখিত এজাহার দায়ের করিতেছি যে, ঢাকার কলাবাগান থানাধীন পান্থপথ এলাকায় আমার “ঞৎরঢ়ুুধহ” নামক ট্রাভেলস্ এজেন্সি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। আমি ০৯/১০/২০২৫খ্রিঃ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৫:৪৫ ঘটিকার সময় হানিফ বিরিয়ানি রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া শেষ করলে পলাতক ০৩নং আসামী নাসির উদ্দিন শাওন তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ১৭৭৭৬৯৮৫৪২ হইতে আমার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ০১৭৬৩৭০৫৭০৫ তে ফোন করে দুবাই এর বিমান টিকেট ক্রয় করিবে মর্মে আমার অবস্থান জানতে চায়। আমি ০৩নং আসামি নাসির উদ্দিন শাওনকে আমার অবস্থান জানালে সন্ধা অনুমান ০৫:৫৫ ঘটিকার সময় উপরোক্ত আসামীদের সহ অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জন আসামিরা বে-আইনি জনতাবদ্ধে অবৈধ অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হইয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আমাকে ঘিরে ধরে জোর পূর্বক গুলশান-০১, খলিফা’স রেস্টুরেন্টে অপহরন করিয়া নিয়া যায়। উক্ত আসামিরা আমাকে খলিফা’স রেস্টুরেন্টে নিয়া গিয়ে আমার ফোন, ল্যাপটপ, মানিব্যাগ নিয়ে নেয় এবং আমার নিকট নগদ ৩৭,৫০,০০০/- (সাতত্রিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা মুক্তিপন বাবদ দাবি করে। উক্ত আসামিরা আমার মোবাইল ফোনটি নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ছবি তারা সংগ্রহ করে। তখন আমার ভাইয়ের ছেলে নাহিদুল ইসলাম খলিফা’স রেস্টুরেন্টে আসিলে উক্ত আসামিরা আমার অনুরোধ আমার ল্যাপটপটি আমার ভাতিজা নাহিদুল ইসলামকে দিয়া দেয়। আমি উক্ত আসামিদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সন্ধ্যা অনুমান ০৭:০০ ঘটিকার সময় উক্ত আসামিরা আমাকে গুলশান-০১ লেকপাড় নিয়া যায় এবং আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ আমাকে এলোপাথারী মারধর করে। উক্ত আসামিরা তাদের দাবিকৃত নগদ ৩৭,৫০,০০০/- (সাতত্রিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা একই তারিখ রাত ১০:০০ ঘটিকার মধ্যে দেওয়ার জন্য বলে অন্যথায় তারা আমাকে হত্যা করিয়া লাশ গুম করিবে মর্মে হুমকি প্রদান করে। উক্ত আসামিদের মারধর সহ্য করতে না পেরে আমি আমার পরিবারকে ফোন করে তাদের দাবিকৃত টাকা প্রদানের জন্য জানাই এবং তাদের কিছুটা সময় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। অনেকটা সময় অতিক্রম করার পরেও উক্ত আসামিদের দাবিকৃত টাকা দিতে ব্যর্থ হইলে একই তারিখ গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার পার্শ্ববর্তী হয়ে হাতিরঝিল সংযোগ সড়কের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় আমার ডাকচিৎকার শুনে যৌথ বাহিনীর চেকপোষ্টে আমাকে বহনকৃত মটরসাইকেলটিকে থামাইলে ০৩নং আসামি আমাকেসহ ০১নং আসামি মোহাম্মদ ইদ্রিসকে রাস্তার উপর ফালাইয়া সু-কৌশলে অন্য আসামিদেরসহ পালাইয়া যায়। যৌথ বাহিনী ০১নং আসামিকে ধৃত করে তাদের হেফাজতে নেয় ও তার হেফাজত হইতে আমার মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে আমাকে ফেরৎ প্রদান করে। যৌথ বাহিনী তারা তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে আমাকে ও ০১ আসামিকে গুলশান থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে। উপরোক্ত বিষয়ে আমার পরিবারের সাথে আলাপ আলোচনা করে থানায় এসে এজাহার দায়ের করিতে সামান্য বিলম্ব হইল।

আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় মদপানে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ১

গুলশান থানা সূত্র জানা যায়, পরদিন ১০ অক্টোবর দুপুরে দুই ও তিন নং আসামির নেতৃত্বে একদল যুবক রাজনৈতিকি পরিচয় দিয়ে গুলশান থানায় এসে আটক আসামি ইদ্রিসকে জোরপূর্বক ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য তদবির করে। পুলিশ কর্তকর্তাদের সাথে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এসময়ে পুলিশকে গোপন সূত্রে জানানো হয় থানায় তদবিরকারীদের মধ্যে এজাহারভুক্ত দুই আসামি আছে। পুলিশ তাৎক্ষণিক দুই নং আসামি মোহাম্মদ হেলাল ও তিন নং আসামি নাসির উদ্দিন শাওনকে আটক করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক হারুন অর রশিদ জানান যৌথ বাহিনীর হস্তান্তর করা ১ নং আসামিকে এক দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়াও এজাহারভুক্ত অপর দুই আসামিকেও আটক করে তিনজনকে একসাথে আদালতে পাঠানো হয়েছে।  

এদিকে পুলিশের গুলশান বিভাগের সরকারি কমিশনার আলী আহমেদ মাসুদ জানান, শাওনসহ তিন জনকে পুলিশ আটক করেছে। ঘটনাটি মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণ করে নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও পেছনে রয়েছে আরো অনেক অপরাধ। মূলত মধ্যপ্রাচ্যে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার ও ব্যবসায়িক লেনদেনের প্রতারণার ঘটনাও জড়িত আছে। উভয় পক্ষ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে উৎপাদনশীল করতে হলে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে: ড. মঈন খান