ড্যাফোডিল ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ধ্বংসস্তূপ ক্যাম্পাস, থমথমে পরিস্থিতি
সাভারের আশুলিয়ার খাগান এলাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের পর পুরো এলাকা এখন থমথমে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও ক্যাম্পাসজুড়ে এখনো ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র বিরাজ করছে। রোববার (২৬ অক্টোবর) রাত ১২টার পরপরই থুথু ফেলাকে কেন্দ্র করে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
সিটি ইউনিভার্সিটির প্রধান ফটক থেকে একাডেমিক ভবনের ভেতর পর্যন্ত ভাঙা কাঁচ, চেয়ার, টেবিল, পোড়া কাগজপত্র ছড়িয়ে আছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারগুলো এখনো রাস্তায় পড়ে আছে। ভবনের ভেতরে অফিসকক্ষ ও ল্যাবরুমে আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ভাঙচুর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুলাউড়ায় ট্রেন যাত্রীদের জরিমানা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় সন্ধ্যার দিকে ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস’ নামে একটি ভাড়া বাসার সামনে। সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর অসতর্কভাবে ফেলা থুথু ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীর গায়ে পড়লে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। পরে রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের মেসে হামলা চালায়।
ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরাও পাল্টা আসে, শুরু হয় দফায় দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ। একপর্যায়ে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। অন্তত তিনটি বাস, পাঁচটি মাইক্রোবাস, একাধিক মোটরসাইকেল ও ভবনের বিভিন্ন অংশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: কমলনগরে মেম্বারের বিরুদ্ধে এক নারীর জমি দখলের অভিযোগ
সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শাহাদাত বলেন, ঘটনার সূত্রপাত সামান্য ব্যাপার থেকে হলেও পরবর্তীতে আমাদের ক্যাম্পাসে হামলা হয়েছে। পুরো ভবনের ভেতর তছনছ করে দিয়েছে, ল্যাবের যন্ত্রপাতি, গাড়ি, টাকা সব লুট করেছে। অনেকেই আহত।
এক নারী শিক্ষার্থী জানান, রাতে মেয়েদের হলে ইটপাটকেল ছোড়া হয়েছে, গেট ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। ভয়ে কেউ রুম থেকে বের হতে পারেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত বারবার পুলিশকে সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। শত শত শিক্ষার্থী আহত হয়েছে, দুটি ছাত্রী হল আতঙ্কে ছিল।
প্রক্টর অধ্যাপক আবু জায়েদ বলেন, এটি কোনো সংঘর্ষ নয়, এটি পরিকল্পিত হামলা মনে হচ্ছে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত।
অন্যদিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা চাই না শিক্ষার্থীরা সংঘাতে জড়াক। উভয়পক্ষের শিক্ষার্থীরা আমাদেরই সন্তান।
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. আরাফাতুল ইসলাম বলেন, দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ রাত থেকেই ঘটনাস্থলে আছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, তবে পরিবেশ এখনো কিছুটা উত্তেজনাপূর্ণ।





