এক বস্তায় দুই মেয়াদ, খাদ্যনিয়ন্ত্রকের অবহেলায় গরিবের কপালে পোকা ধরা চাল
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নে পোকায় ধরা ও দুর্গন্ধযুক্ত নষ্ট সরকারি চাল বিতরণের অভিযোগ উঠেছে। ‘শেখ হাসিনার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র স্লোগানযুক্ত বস্তায় মেয়াদোত্তীর্ণ এই চাল বিতরণ করা হয় ইউনিয়ন পরিষদে। একই বস্তার এক পাশে ২০২২ সালের মেয়াদ এবং অপর পাশে ২০২৫ সালের মেয়াদ লেখা রয়েছে।
কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রায় ৩০ জনের অধিক নারী ও পুরুষ ২২০ টাকা সঞ্চয় জমা দিয়ে খাদ্যবান্ধব সরকারি সহায়তার নামে ৩০ কেজি করে চাল নিচ্ছেন। এসময় ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে প্রবেশ করে দেখা যায় শতাধিক সরকারি চালের বস্তা। এসব চালের বস্তাগুলোর বেশির ভাগই ইঁদুরের কামড়ে ছেঁড়া, পোকা ধরা ও নষ্ট চাল।
আরও পড়ুন: বরগুনা-২ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কর্নেল হারুন আর রশিদকে ধান উপহার দিলো নুরুল ইসলাম
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে এ ঘটনার সত্যতা মেলে। দেখা যায়, শতাধিক সরকারি চালের বস্তা পড়ে আছে পরিষদের হলরুমে— অধিকাংশ বস্তায় ইঁদুরের কামড়, চালের ভেতর পোকা ও তীব্র দুর্গন্ধ।
স্থানীয় কয়েকজন সুবিধাভোগী জানান, এসব চাল প্রকৃত দরিদ্ররা পাননি, সদস্যদের আত্মীয়-স্বজন ও প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠরা পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিলাসবহুল গাড়িতে বহন হচ্ছিল গাঁজা, বাধা দিলেন পুলিশ
একাধিক সুবিধাভোগী অভিযোগ করেন, নষ্ট চাল খাওয়ার উপযোগী নয়, গরু-মুরগিকে দিই, তবে বাইরে বলি আমরা খাই।
নষ্ট চাল বিতরণের বিষয়ে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের দফাদার মাসুম মিয়া বলেন, উপজেলা খাদ্যগুদাম থেকে যা পাই, তাই বিতরণ করি। কেন নষ্ট চাল দিয়েছে, তা সচিব জানেন।
কায়েতপাড়া ইউনিয়ন সচিব মো. রিয়াজউদ্দিন বলেন, আমরা কেবল বরাদ্দ অনুযায়ী বিতরণ করি, চালের মান যাচাইয়ের দায়িত্ব উপজেলা কর্তৃপক্ষের।
কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এটা খাদ্যনিয়ন্ত্রক ও গুদাম কর্মকর্তার বিষয়। আমরা শুধু বিতরণের দায়িত্বে।
রূপগঞ্জ উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক আরিফ মোহাম্মদ বলেন, আমি একসাথে দুই স্থানে কর্মরত থাকায় সব সময় উপস্থিত থাকতে পারি না। তবে গুদাম পরিচালক এ বিষয়ে জানবেন।
গুদাম পরিচালক আসাদুজ্জামান তুহিন বলেন, গুদামে বিজ্ঞানসম্মতভাবে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চাল তিন মাস আগে পাঠানো হয়েছিল। বিতরণে বিলম্ব হওয়ায় তা নষ্ট হতে পারে। বস্তায় ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদ বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে— এক পাশে বস্তার, অন্য পাশে পণ্যের মেয়াদ লেখা থাকে।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে অবহেলা এবং অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজের সুযোগেই পুরনো নষ্ট চাল বিতরণ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।





