পতিত ফ্যাসিবাদের লুণ্ঠিত সম্পদের প্রহরী হিসেবে সালাউদ্দিন মামুনের নিয়োগের অভিযোগ
ফেনীতে পতিত আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের লুণ্ঠিত হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের প্রহরী হিসেবে ফেনী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগ উঠেছে। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র হাজী আলাউদ্দিনের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) লুৎফর রহমান খোকনের ছোট ভাই।
অভিযোগে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের পলাতক সাবেক সংসদ সদস্য ও ‘ফেনীর কসাই’ নামে পরিচিত নিজাম উদ্দিন হাজারী ওরফে নিজাম হাজারীর সাধারণ জনগণের লুণ্ঠিত সম্পদের পাহারাদার হিসেবে সালাউদ্দিন মামুনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: শিবপুর প্রেসক্লাবের আসাদ সভাপতি, মাহবুব খান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত
স্থানীয় সূত্র জানায়, ফেনী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর লুৎফর রহমান খোকন দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি ও মাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা ছিলেন। গত ১৫ বছর ধরে এই সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে সালাউদ্দিন মামুন যুক্ত ছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফেনীবাসীর মুখে মুখে রয়েছে, পতিত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একটি অংশ মিলেমিশে চাঁদাবাজি ও মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে।
গত ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে নয়জন নিহত হন। অভিযোগ অনুযায়ী, ওই ঘটনায় খোকন ছিলেন অন্যতম সশস্ত্র ক্যাডার। এ ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় দায়ের করা পৃথক আটটি হত্যা মামলায় ২ হাজার ৯৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফেনীতে আওয়ামী লীগ নেতা ও বিশেষ ব্যক্তিদের নামে থাকা প্রায় ১০০টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ৯৩টি জমা পড়েছে। জমা না দেওয়া সাতটির মধ্যে ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও তার স্ত্রীর নামে তিনটি এবং খোকনের কাছে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, গত ১৭ বছর ধরে ফেনী ছিল সন্ত্রাসের জনপদ। এই সন্ত্রাসী জনপদের গডফাদার হিসেবে নিজাম উদ্দিন হাজারী ও সাবেক পৌর মেয়র হাজী আলাউদ্দিনের নাম উঠে আসে। প্রায় নয় বছর আগে হাজী আলাউদ্দিনের পিএস খোকনের ছোট ভাই সালাউদ্দিন মামুন ফেনী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হন।
৪ আগস্টের গণহত্যা মামলায় খোকনের নাম না থাকলেও রাজনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে ফেনীর নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে সালাউদ্দিন মামুনের হাতে রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ৫ আগস্ট গণহত্যা মামলার আসামি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল ও জিয়াউদ্দিন বাবলুকে নিরাপদে ফেনী ছাড়তে সহযোগিতা করেছেন খোকন।
২০২৪ সালের ৩০ আগস্ট খোকনের লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র ফেনী থানায় জমা দেওয়ার কাজটি করেন সালাউদ্দিন মামুন। অভিযোগ রয়েছে, এই অস্ত্র জমা দেওয়ার নামেও বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ফেনী দীর্ঘদিন ধরে মাদক ও চোরাচালান পণ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট। বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার মাদক ও চোরাচালান এই রুট দিয়ে পরিচালিত হয়। একসময় এটি যুবলীগ নেতা জিয়াউদ্দিন মিস্টারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সেই নিয়ন্ত্রণ এখন সালাউদ্দিন মামুনের হাতে রয়েছে বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রগুলো জানায়, আগে যারা আওয়ামী লীগের হয়ে মাদক পারাপারে কাজ করত, তারাই এখন মামুনের হয়ে কাজ করছে। মাদক ও চোরাচালান থেকে অর্জিত কমিশনের অর্থ পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরদের কাছে পাঠানো হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অনেক ঠিকাদার কাজ ফেলে পালিয়ে গেলেও সেই কাজ সম্পন্ন ও বিল উত্তোলনে ঢাল হিসেবে কাজ করছেন সালাউদ্দিন মামুন—এমন অভিযোগও উঠেছে।
উল্লেখ্য, ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালের ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলার আসামি তালিকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ফেনীর তিন সাবেক সংসদ সদস্য—আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, নিজাম উদ্দিন হাজারী ও লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর নাম রয়েছে।





