সীমান্তে উত্তেজনা তুঙ্গে
ইস্তাম্বুলে পাকিস্তান-আফগানিস্তান শান্তি আলোচনা ভেস্তে গেল
তীব্র সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যেই তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শান্তি আলোচনা কোনো চুক্তি ছাড়াই ভেঙে গেছে। দুই পক্ষই আলোচনার ব্যর্থতার জন্য একে অপরকে দায়ী করেছে বলে শনিবার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দুই দেশের মধ্যে মারাত্মক সীমান্ত সংঘর্ষে বহু সেনা ও বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ৯ অক্টোবর কাবুলে একাধিক বিস্ফোরণের পর থেকে উত্তেজনা শুরু হয়। আফগানিস্তানের তালেবান সরকার দাবি করে, হামলাগুলো পাকিস্তানের চালানো ড্রোন হামলা, যার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেয় তারা। কাতারের মধ্যস্থতায় ১৯ অক্টোবর একটি যুদ্ধবিরতি হলেও সেটি এখনো নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে।
আরও পড়ুন: নেতানিয়াহুসহ ইসরায়েলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তুরস্কের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
পাকিস্তানের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা’ অভিযোগ তালেবানের
আফগান সরকারের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্টে বলেন, পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অসহযোগিতামূলক আচরণের কারণেই কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি, যদিও ইসলামিক এমিরেট সদিচ্ছা নিয়ে অংশ নিয়েছিল।
আরও পড়ুন: বিশ্ববাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম
তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তান অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে তার মাটি ব্যবহার করতে দেবে না এবং তার সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ সহ্য করবে না।
দুই দিনের আলোচনা ব্যর্থ
তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় আয়োজিত এই দুই দিনের বৈঠক ছিল ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে তৃতীয় শান্তি আলোচনার রাউন্ড, যা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে অন্যতম বড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছিল।
তবে শুক্রবার রাতে আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দেয়। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফজিও নিউজকে বলেন, আলোচনা শেষ, পাকিস্তানি প্রতিনিধি দল দেশে ফিরছে। কোনো ভবিষ্যৎ বৈঠকের পরিকল্পনাও নেই।
তিনি আরও জানান, যুদ্ধবিরতি তখনই টিকে থাকবে, যতক্ষণ আফগান দিক থেকে তা লঙ্ঘিত না হয়।
সীমান্তে নতুন সংঘর্ষ
শান্তি আলোচনার মাঝেই শুক্রবার আফগান সীমান্তে গোলাবর্ষণে ৪ জন নিহত ও ৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
খাজা আসিফ বলেন, আফগান প্রতিনিধিরা কোনো লিখিত চুক্তিতে রাজি হননি, শুধু মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন। “মৌখিক প্রতিশ্রুতির কোনো মূল্য নেই, তিনি মন্তব্য করেন। চতুর্থ দফা আলোচনার কোনো পরিকল্পনা বা আশাও নেই।
বিমান হামলা ও পাল্টা অভিযানের অভিযোগ
মাসের শুরুতে পাকিস্তান দাবি করে, তারা আফগানিস্তানের ভেতরে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর আস্তানায় বিমান হামলা চালিয়ে ডজনখানেক জঙ্গিকে হত্যা করেছে। তবে আফগান কর্মকর্তারা বলেন, নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক এবং আফগান বাহিনী পাল্টা হামলায় ৫৮ পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে। পাকিস্তানও ২৩ সেনা নিহতের কথা স্বীকার করেছে।
সীমান্ত বন্ধ ও আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো
সংঘর্ষের পর ১২ অক্টোবর পাকিস্তান সব সীমান্ত বন্ধ করে দেয়, যা দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার অন্যতম ব্যস্ত বাণিজ্য রুট। শত শত পণ্যবাহী ট্রাক দুই পাশে আটকা পড়ে। গত সপ্তাহে কেবল মূল তোরখাম সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়, যাতে আটকে পড়া আফগান শরণার্থীরা ফিরে যেতে পারে।
একই সঙ্গে পাকিস্তান জোরদার করেছে অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর অভিযান, যার বেশিরভাগই আফগান। ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি আফগান নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
টিটিপি হামলায় অস্থির পাকিস্তান
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, পাকিস্তানে টিটিপির হামলা বেড়েই চলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ ঘোষিত সন্ত্রাসী এই গোষ্ঠীটি ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তানের ভেতরে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে।





