আজ পবিত্র হজ

Any Akter
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১:৫১ অপরাহ্ন, ১৫ জুন ২০২৪ | আপডেট: ৯:৩২ পূর্বাহ্ন, ১৫ জুন ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলন পবিত্র হজ। শনিবার(১৫ জুন)  প্রভাত থেকে আরাফার আদিগন্ত মরুপ্রান্তর এক অলৌকিক পুণ্যময় শুভ্রতায় ভরে উঠেছে। পাপমুক্তি আর আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এই পবিত্র হজ পালন করেছেন। আজ ফজরের পর গোটা দুনিয়া থেকে আগত ২৫ লক্ষাধিক মুসলমান ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন। তারা এখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। ৪ বর্গমাইল আয়তনের এ বিশাল সমতল মাঠের দক্ষিণ দিকে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড, উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাত সীমান্ত পশ্চিমে আরও প্রায় পৌনে এক মাইল বিস্তৃত। মুসলমানদের অতি পবিত্র এই ভূমিতে যার যার মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে তারা ইবাদত করবেন, হজের খুতবা শুনবেন এবং জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন।

আরাফার ময়দানের মসজিদে নামিরায় জোহরের নামাজের আগে এ বছর পবিত্র হজের খুতবা দেবেন পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়েখ ড. মাহের আল মুয়াইকিলি। সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহ তায়ালার জিকির আসকার ইবাদতে মশগুল থাকবেন। অতঃপর মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফার ময়দান ত্যাগ করবেন এবং মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এশার ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং সারা রাত অবস্থান করবেন। মিনায় জামরাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি কংকর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন। 

আরও পড়ুন: ইসলামে ভূমিকম্প ও করণীয়

মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে পুনরায় মিনার উদ্দেশে রওনা হবেন। ১০ জিলহজ মিনায় পৌঁছার পর হজযাত্রীদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমে মিনাকে ডান দিকে রেখে হজযাত্রীরা দাঁড়িয়ে শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ করবেন। দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা। অনেকেই মিনায় না পারলে মক্কায় ফিরে গিয়ে পশু কোরবানি দেন। তৃতীয় পর্বে মাথা ন্যাড়া করা। চতুর্থ কাজ তাওয়াফে জিয়ারত। জিলহজের ১১ তারিখ মিনায় রাতযাপন করে দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে হজযাত্রীরা বড়, মধ্যম ও ছোট শয়তানের ওপর সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন।

এদিকে গতকাল সারাদিন এবং গত রাতে হজযাত্রীরা মিনায় অবস্থান করেন। সেখানেই শুরু হয় পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। প্রতি বছর হজের সময় মুসলিমদের অস্থায়ী আবাস হিসেবে মিনায় বসানো রাখা হয়েছে লাখ লাখ তাঁবু। পবিত্র মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার অদূরের মিনা যেন তাঁবুর শহর। যেদিকে চোখ যায়, তাঁবু আর তাঁবু। তাঁবুতে প্রত্যেকের জন্য আলাদা ফোম, বালিশ, কম্বল বরাদ্দ। ফোমের নিচে বালু। মিনায় অবস্থান করা হজের অংশ। হজযাত্রীরা নিজ নিজ তাঁবুতে নামাজ আদায়সহ অন্য ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকেন। পবিত্র হজ উপলক্ষ্যে মক্কা, মদিনা, মিনা, আরাফাত ময়দান, মুজদালিফা ও এর আশপাশের এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি সরকার। মোতায়েন আছে লাখো নিরাপত্তাকর্মী।

আরও পড়ুন: ভূমিকম্পের সময় মুসলমানরা যে দোয়া পাঠ করে

তীব্র গরমে হজযাত্রীদের সতর্ক থাকার আহ্বান

এদিকে সৌদিতে গতকাল গড় তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছিল, তীব্র গরমে ভোগান্তিতে পড়েছেন হজযাত্রীরা। তাপজনিত সম্ভাব্য অসুস্থতা ও হিট স্ট্রোক মোকাবিলায় চারটি হাসপাতাল প্রস্তুত রেখেছে কর্তৃপক্ষ। হজযাত্রীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ বছর সারা বিশ্বের প্রায় ২০ লাখ মানুষ হজে অংশ নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে হজে গেছেন ৮২ হাজার ৭৭২ জন। পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে সৌদি আরবে এখন পর্যন্ত ১৭ বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১৫ জন পুরুষ ও দুই জন নারী। এদের ১৩ জন মারা গেছেন মক্কায় আর চার জন মদিনায়।

এবার হজের খুতবা অনুবাদ হবে ৫০ ভাষায়

সৌদি আরবের মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববির জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগ জানিয়েছে, এবার আরাফার ময়দান থেকে প্রচারিত হজের খুতবার অনুবাদ প্রচার করা হবে বিশ্বের ৫০টি ভাষায়। খাদেমে হারামাইন শরিফাইন বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজের তত্ত্বাবধায়নে এটিই এখন পর্যন্ত হজের খুতবা অনুবাদের সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট। সৌদি সংবাদমাধ্যম এসপিএর খবরে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে বাংলা, উর্দুসহ বিশ্বের ৫০টি দেশের ভাষাভাষীর কাছে হজের খুতবার আহ্বান পৌঁছানো উদ্দেশ্য।

গণিতের শিক্ষক থেকে ইমাম

সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ সম্প্রতি এক রাজকীয় ফরমানে আজ আরাফাতের দিন খুতবা দেওয়ার জন্য শায়েখ মাহের আল মুয়াইকিলিকে অনুমোদন দিয়েছেন। গত বছর হজের খুতবা দিয়েছিলেন সৌদি আরবের সিনিয়র ওলামা কাউন্সিলের সদস্য শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ। তার সঙ্গে খুতবায় সহযোগী হিসেবে ছিলেন মাহির আল মুয়াইকিলি।

ইসরাইলি বাধায় হজে যেতে পারেনি গাজার ২৫০০ মানুষ 

এবার ইসরাইলি বাধার কারণে হজে যেতে পারেনি গাজার আড়াই হাজার মানুষ। গতকাল শুক্রবার আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে অনেকে হজ পালন করতে গিয়েছেন। তবে ইসরাইলি অভিযান ও অবরোধের কারণে গাজার কেউ হজে যেতে পারেননি।