শিক্ষকদের নতুন সংগঠন ‘ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংক’-এর আত্মপ্রকাশ

Sadek Ali
আরাফাত চৌধুরী, জবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৭:৩৪ অপরাহ্ন, ২৬ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১:৩১ অপরাহ্ন, ১৪ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা ও ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে ‘ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংক’ (ইউটিএল) নামে শিক্ষকদের নতুন একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। 

শনিবার (২৬ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র কেন্দ্রে (টিএসসি) এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। প্ল্যাটফর্মটির উদ্বোধন করেন ২৪’র জুলাই বিপ্লবে শাহাদাত বরণকারী শহীদ ওসমানের গর্বিত পিতা জনাব মো. আবদুর রহমান। 

আরও পড়ুন: সাদা পাথর রক্ষায় প্রশাসনের ৫ দফা সিদ্ধান্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাসকে আহ্বায়ক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইনকে সদস্য সচিব করে সংগঠনটির ৫৩ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রিয় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

৫৩ সদস্য বিশিষ্ট এই আহ্বায়ক কমিটিতে একজন কোষাধ্যক্ষ, সাত জন যুগ্ম আহ্বায়ক, পাঁচ জন যুগ্ম সদস্যসচিব এবং ৩৮ জন সদস্য রয়েছেন। কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসেন।

আরও পড়ুন: ‎পাবনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহার

আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এক লিখিত বক্তব্যে সদস্যসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ বিলাল হোসেন বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের জাতীয় চেতনায় এক নতুন জাগরণ সৃষ্টি করেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকদের মর্যাদা সমুন্নত রাখা, অ্যাকাডেমিক সততা নিশ্চিত করা, নিরাপদ ক্যাম্পাস, গবেষণার উৎকর্ষ এবং জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখার লক্ষ্যে ইউটিএল গঠিত হয়েছে। ১৯৪৭-এর আজাদি, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা এবং ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে ইউটিএল এক সুনির্দিষ্ট ভিশন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘ইউটিএল’র মূল প্রতিপাদ্য হলো- ‘জ্ঞান, বিশ্বাস, আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতা’।সংগঠনটি রাজনৈতিক আনুগত্যমুক্ত থেকে শিক্ষা, গবেষণা, আত্মমর্যাদা, চিন্তার স্বাধীনতা ও জাতীয় দায়িত্ববোধ এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইউটিএলের লক্ষ্য একটি মর্যাদাপূর্ণ, স্বাধীন ও নৈতিকতাসম্পন্ন অ্যাকাডেমিয়া গড়ে তোলা। এর মিশনের মধ্যে রয়েছে নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা, নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণ এবং জ্ঞানচর্চার পরিবেশ তৈরি করা। স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউটিএল ইউনিট গঠন, শিক্ষকদের নৈতিক সুরক্ষা, সেমিনার-কর্মশালার আয়োজন এবং পাঠ্যক্রম সংস্কার। দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে বিশেষজ্ঞ শিক্ষাবিদদের সংযুক্ত করা, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।’

শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানিয়ে ড. বিলাল বলেন, ইউটিএল কেবল একটি প্ল্যাটফর্ম নয়—এটি একটি আন্দোলন বটে। যে সকল শিক্ষক বিশ্বাস করেন যে, শিক্ষকগণ জাতির উচ্চতর আকাঙ্ক্ষা পূরণে পথপ্রদর্শক; আর শিক্ষা সমাজকে ন্যায়, জ্ঞান ও নৈতিকতার পথে নিয়ে যেতে পারে—ইউটিএল তাদেরই প্ল্যাটফর্ম। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে ইউটিএল’র নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে এবং একটি সংবিধানও প্রণয়ন করা হবে।

সমাপনী বক্তব্যে আহ্বায়ক অধ্যাপক আতাউর রহমান বিশ্বাস বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ও ছাত্রসমাজের প্রত্যাশাকে ধারণ করে আমরা সামনে এগোতে চাই। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল নির্ভরযোগ্য শিক্ষক-গবেষক প্রয়োজন, যারা দেশের জন্য কাজ করবেন। জ্ঞান ও গবেষণার কাজে বিদেশে থাকা অনেক বাংলাদেশি সন্তান দেশে ফিরতে চান। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারলে তারা দেশের সম্পদে পরিণত হতে পারেন। এই চিন্তা থেকেই আমাদের যাত্রা। প্রাথমিকভাবে আমরা কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ শুরু করেছি এবং একটি কমিটির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে থাকা বাংলাদেশি স্কলারদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছি। এই শিক্ষক-গবেষকদের সঙ্গে নিয়েই আমরা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে চাই।’

অনুষ্ঠানে দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সিনিয়র অধ্যাপক, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, জুলাইয়ের শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যগণ, সাংবাদিক ও সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।