যে কারাগারে কোনো দিন কয়েদি ছিল না

Sadek Ali
মো. ইউনুছ আলী, মাগুরা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১:০৯ অপরাহ্ন, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ৩:০৯ অপরাহ্ন, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

প্রায় চার দশক আগে উপজেলা পর্যায়ে বিচারিক কার্যক্রম সহজ করা এবং আসামি পরিবহনের ঝামেলা কমানোর উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল একটি উপকারাগার। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয়—সেই কারাগারটি এক দিনের জন্যও চালু হয়নি। নির্মাণের পর থেকেই সেটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বাওইজানি গ্রামে অবস্থিত উপ-কারাগারটি এখন স্থানীয়দের চোখে পরিচিত ‘ভুতুড়ে বাড়ি’ হিসেবে।

আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় মদপানে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ১

১৯৮৫ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নির্মিত হয় এই উপ-কারাগার। দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ হলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে প্রকল্পটি আর বাস্তবায়িত হয়নি। উদ্বোধনের আগেই মূল ফটকে ঝুলে যায় তালা।

২ দশমিক ৭১ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এই কমপ্লেক্সে ছিল পুরুষ ও নারী কয়েদখানা, রান্নাঘর, কার্যালয় ভবন, নিরাপত্তা প্রহরীদের থাকার জায়গা, পাম্প হাউস এবং কর্মকর্তাদের আবাসিক কোয়ার্টার। মোট ২০ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী কয়েদির জন্য জায়গা নির্ধারিত ছিল।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে উৎপাদনশীল করতে হলে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে: ড. মঈন খান

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় চার দশক পর ভবনগুলোর পলেস্তারা খসে পড়েছে, দরজা-জানালা উধাও, আর জায়গাজুড়ে জন্মেছে ঘন ঝোপঝাড়। ভবনগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছেন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মচারী প্রশান্ত কুমার। তিনি পরিবারসহ কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিত একটি কোয়ার্টারে থাকেন, যদিও ভবনগুলো এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়।

২০০০ সালের দিকে উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে সেখানে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তা ও পরিবেশ উপযুক্ত না থাকায় এক বছরের মধ্যেই বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০০৩ সালে স্থাপনাটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়—উদ্দেশ্য ছিল সমাজসেবামূলক কাজে ব্যবহার করা। তবে দুই দশক পেরিয়ে গেলেও বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, “নির্মাণের পর এক দিনও ব্যবহার হয়নি। এখন ভবনগুলো ধ্বংসের পথে। দরজা-জানালা নেই, ভিতরে জঙ্গল। দিনের আলোতেও ভয় লাগে। সরকারি সম্পদ এভাবে নষ্ট হতে দেখা কষ্টদায়ক।”

মহম্মদপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আবদুর রব বলেন, “স্থানটি আমাদের অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হলেও পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও জনবল না থাকায় সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের ওপরই ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তবে এটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, সংশোধনাগার বা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।”

সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এমন ২৩টি উপ-কারাগার রয়েছে, যেগুলোর একটিও বর্তমানে কার্যকর নয়। পরিকল্পনার অভাব, নীতিনির্ধারণী অচলাবস্থা ও অবহেলাই এসব সরকারি স্থাপনাকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।