নদী ও পরিবেশকর্মীদের মিলনমেলায় রিজওয়ানা হাসানের পরিবেশ সংরক্ষণ প্রতিশ্রুতি

Sadek Ali
কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৭:২২ অপরাহ্ন, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১০:৩৪ অপরাহ্ন, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

"নদী বাঁচাও, জীবন বাঁচাও"—এই স্লোগানকে বুকে ধারণ করে নদী ও পরিবেশকর্মীদের এক ব্যতিক্রমী মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।শনিবার  (২৫ অক্টোবর)  দিনব্যাপী এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

নদী পরিদর্শনকালে তিনি জানান, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দূষণ ও দখলমুক্ত করে বাঁচাতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি সমন্বিত প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা আসছে ডিসেম্বর মাসেই পাস হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শনিবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চন ঘাট থেকে নদীপথে এই যাত্রা শুরু হয়। দিনভর আয়োজনে নদীর গল্প, আড্ডা, মতবিনিময় ও নদীর গানে মুখর ছিলেন অংশগ্রহণকারীরা। নদী নিয়ে মুক্তচিন্তা, ছবি আঁকা ও পরিবেশ বার্তা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে নদীপ্রেমীরা গাজীপুরের কাপাসিয়ার ধাঁধার চরে পৌঁছান। সেখানেই নদীর তীরে আয়োজিত হয় মূল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজওয়ানা হাসান বলেন, "ঢাকা শহরের চারটা নদী নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাথে কথা বলে যে প্রকল্পটা আমরা চূড়ান্ত করে ফেলেছি, আশা করি ইনশাল্লাহ ডিসেম্বরে পাস হয়ে যাবে।"তিনি প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, "এই প্রকল্পে পরিবেশের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। জনবান্ধব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। (দূষণ) নজরদারি বাড়ানোর জন্য যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।" উপদেষ্টা আরও বলেন, "কেবল শিল্প দূষণ বন্ধ করলে হবে না, আমরা তো এখন একটা (সঠিক) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারি নাই। আমাদের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিল্প দূষণ ব্যবস্থাপনা, সবকিছু যখন একসাথে কাজ করবে তখনই আমরা পরিবেশটাকে বাঁচাতে পারবো। বিশ্বব্যাংকের এই প্রকল্পটা সেভাবেই একটি কম্প্রেহেন্সিভ কাভারেজ দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে।" দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের বহুমুখী কৌশলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আপনি একজন একজন করে নদী দূষণকারীকে ধরে ব্যবস্থা নিবেন ? নাকি নদী যারা দূষণ করে তাদেরকে একটা সেন্ট্রালি ইটিপির আওতায় আনবেন? নাকি তাদের কয়েকজনকে বন্ধ করে দিবেন ? এই সবগুলা অপশন নিয়েই আমাদেরকে কাজ করতে হবে।"আমাদের দায়িত্ব হলো সেই ব্যবস্থাপনার অংশ হওয়া। যেমন—নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলা, বর্জ্য পৃথকীকরণে সহায়তা করা এবং দূষণকারী কর্মকাণ্ড দেখলে সোচ্চার হওয়া। দিন শেষে, চারটি ম্যাজিস্ট্রেট বা কয়েকটি প্রকল্প দিয়ে বিশাল এই পরিবেশগত সংকট সমাধান সম্ভব নয়। সরকারের উদ্যোগগুলোর সফলতা তখনই আসবে, যখন দেশের প্রতিটি নাগরিক পরিবেশ সুরক্ষাকে আইনি বাধ্যবাধকতার চেয়েও বড় 'নৈতিক দায়িত্ব' হিসেবে গ্রহণ করবে। কাপাসিয়ার ধাঁধার চরে সমবেত নদীপ্রেমীদের "নদী বাঁচাও, জীবন বাঁচাও" স্লোগানটি তখনই সার্থক হবে, যখন তা প্রতিটি নাগরিকের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠবে। জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, "চারজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে যতটুকু সম্ভব, লড়াই করে যাচ্ছি।"

আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

দিনব্যাপী এই মিলনমেলায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুইডেন এম্বাসির জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান, ফার্স্ট সেক্রেটারি নায়োকা মার্টিনেস বেক্সস্ট্রম, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সোলায়মান হায়দার, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোবাশ্বির হোসেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির এবং বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন। এছাড়াও কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ডাঃ ডাক্তার তামান্না তাসনীমসহ স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আয়োজনে গান, কবিতা ও মুক্ত আলোচনার মধ্য দিয়ে নদীকে বাঁচানোর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন অংশগ্রহণকারীরা।