রাজনীতি না চাঁদাবাজি? জনগণের ক্ষোভের ন্যায্য প্রশ্ন
“চাঁদাবাজি না করে ভিক্ষা কর! তোদের কে রাজনীতি করতে বলছে?” —
এই কথাগুলো আজ আর কোনো একক কণ্ঠ নয়, বরং কোটি মানুষের ক্ষোভের প্রতিধ্বনি।
আরও পড়ুন: ইআরপি সফটওয়্যার বোঝা না দূরদর্শিতা?
বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে জনগণের প্রশ্নগুলো আর কৌতুক নয়—এগুলো এক কঠিন বাস্তবতার প্রতিফলন। এক সময় রাজনীতি ছিল জনসেবার পথ; আজ তা পরিণত হয়েছে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি আর প্রভাব বিস্তারের বাণিজ্যে।
রাজনীতির সংজ্ঞা বনাম বাস্তবতাঃ-
আরও পড়ুন: এক রক আইকনের গল্প
“রাজনীতি” শব্দটির মূল অর্থই হলো রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি ও শিল্প—যার লক্ষ্য জনকল্যাণ, ন্যায়, এবং সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা। কিন্তু আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো রাজনীতি মানে ক্ষমতা দখল, দলীয় বাণিজ্য, দুর্নীতি আর সুবিধা বণ্টনের প্রতিযোগিতা।
রাজনীতির সংজ্ঞা এখন জনগণের কাছে এক ব্যঙ্গচিত্রে পরিণত হয়েছে। যেখানে একদল লোক রাজনীতির নামে ব্যবসা করে, আর অন্যরা জীবিকা হারায় তাদের হাতে।
চাঁদাবাজির রাজনীতিঃ-নতুন প্রজন্মের ঘৃণার কারণ
বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে চাঁদাবাজি যেন ‘অধিকার’ হয়ে গেছে। দোকানদার থেকে শুরু করে ঠিকাদার—সবাইকে চাঁদা দিতে হয় কোনো না কোনো “দলীয় ছত্রছায়ায় থাকা” গোষ্ঠীকে।
তারা জনগণের প্রতিনিধি নয়—জনগণের রক্ত শোষক।
এরা রাজনীতির নামে সমাজের রক্ত চুষে খায়, এবং এই চক্রের কারণেই সাধারণ মানুষ রাজনীতিকে ঘৃণা করতে শিখেছে।
“জনগণ তো রাজনীতিবিদদের নিয়োগ দেয় না তাহলে তারা জনগণের নামে এত অন্যায় করে কীভাবে?”
রাজনীতি পেশা নয়, দায়িত্বঃ-
রাজনীতি কখনো চাকরি নয়। এটি একটি নৈতিক দায়িত্ব, সমাজ ও রাষ্ট্রের সেবা করার পবিত্র অঙ্গীকার।
কিন্তু আজ রাজনীতি হয়ে গেছে “বিনিয়োগের ক্ষেত্র”—যেখানে পদ, টেন্ডার, প্রকল্প, এমনকি নীতিমালাও বিক্রি হয় টাকার বিনিময়ে।
ক্ষমতার ভাগ না পেলে আন্দোলন; ভাগ পেলে দুর্নীতি, এই হচ্ছে বর্তমান রাজনৈতিক নৈতিকতার সংজ্ঞা।
রাজনৈতিক শিক্ষা কোথায়?
যাদের রাজনীতির কোনো তাত্ত্বিক বা নৈতিক শিক্ষা নেই, যারা রাষ্ট্র, আইন বা ন্যায়ের ধারণা বোঝে না, তারাই আজ রাজনীতির চালক।
তাদের হাতে রাজনীতি মানে “ক্যাম্পাস দখল”, “দলীয় প্রভাব”, “চাঁদা তোলা”, “বালু-ইটের ব্যবসা”।
এরা রাজনীতিকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, যেখানে যোগ্যতা নয়,সন্ত্রাস আর আনুগত্যই মূল পুঁজি।
জনগণের প্রশ্নগুলো ন্যায্যঃ-
আজ সময় এসেছে এই প্রশ্নগুলো সরাসরি রাজনীতিবিদদের মুখের সামনে তোলার:
• কে তোমাদের রাজনীতি করতে বলেছে?
• তোমরা কাজ না করে রাজনীতির নামে জনগণের ঘাড়ে কেন চেপে আছো?
• রাজনীতি মানে কি জনগণের সেবা, না দলীয় পকেট ভরানো?
• রাজনীতির শিক্ষাই বা তোমাদের কী?
• রাজনীতির অপর নাম কি এখন চাঁদাবাজি?
এই প্রশ্নগুলো কেবল ক্ষোভ নয়,এগুলো একটি জাগ্রত জাতির আত্মচেতনার সঙ্কেত।
পবিত্র রাজনীতির পুনর্জাগরণঃ-
বাংলাদেশের রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনতে হবে তার প্রকৃত অর্থে—
যেখানে রাজনীতি হবে সেবা, ত্যাগ, আর মানবিক নেতৃত্বের মঞ্চ।
যেখানে রাজনীতিক মানে হবে “জনগণের বন্ধু”, “নীতির প্রতীক”, “সততার রোল মডেল” না যে চাঁদাবাজ বা দখলদার।
“রাজনীতি মানে রাষ্ট্রগঠন, লুটপাট নয়; রাজনীতি মানে আত্মত্যাগ, আত্মপ্রচার নয়।”
শেষ কথাঃ-
যে রাজনীতি জনগণের উপকার করে না, সেটি রাজনীতি নয় অপরাধ।
চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, দলীয় সন্ত্রাস এগুলো রাজনীতির কলঙ্ক, জাতির অভিশাপ।
এখন প্রয়োজন এক নতুন রাজনীতির ধারা যেখানে তরুণরা এগিয়ে আসবে জ্ঞানে, সততায়, ন্যায়ে, আর দায়িত্ববোধে।
কারণ রাজনীতি যদি জনসেবার পথ না হয়, তবে সেটি জাতির শত্রুতা ছাড়া কিছু নয়।





