বুয়েট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, মধ্যরাতে উত্তাল বুয়েট

Sadek Ali
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৮:২৭ পূর্বাহ্ন, ২২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ৮:২৭ পূর্বাহ্ন, ২২ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)–এর এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সহপাঠীকে ধর্ষণ ও নারী বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে। রেডডিটে করা একাধিক কুরুচিপূর্ণ পোস্ট ও কথোপকথনের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

বুধবার (২২ অক্টোবর) রাত ১২টার দিকে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বহিষ্কার ও ধর্ষণ মামলায় দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভে নামে। শিক্ষার্থীরা বুয়েটের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সংলগ্ন ডিএসডব্লিউ ভবনের সামনে জড়ো হয়ে রাতভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

আরও পড়ুন: রাবিতে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম শ্রীশান্ত রায়, যিনি তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল (ইইই) বিভাগের ২১ ব্যাচের ছাত্র এবং আহসানউল্লাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, রেডডিটে ছড়িয়ে পড়া স্ক্রিনশটে দেখা যায়—শ্রীশান্ত রায় তার এক নারী সহপাঠীকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ধর্ষণের বর্ণনা দিয়েছেন এবং বোরকা, হিজাব ও নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।

আরও পড়ুন: বার্ষিক পরীক্ষা পর্যন্ত শনিবার স্কুল খোলা রাখার ঘোষণা আজিজীর

একজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বলেন, এমন একজন ব্যক্তি আমাদের সহপাঠী হতে পারে না। আমরা তার স্থায়ী বহিষ্কার চাই এবং ধর্ষণের অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।

বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা দ্রুত প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহিষ্কার ঘোষণা ও মামলা প্রক্রিয়া শুরুর নিশ্চয়তা চান।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা আরও জানান, অভিযুক্ত শ্রীশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে বুয়েট ২১ ব্যাচের প্রকাশিত ধর্ষণ ও প্রমাণের মিলসমূহ হলো-

 ১) রেডডিট ব্যবহারকারী নিজেকে ‌‘বুয়েট ইইই-২১’-এর শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

২) একাধিক মন্তব্যে সে বাসইউস ব্র্যান্ডের এয়ারবাডস ব্যবহার করেন বলে উল্লেখ করেছেন — যা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর সঙ্গেও মেলে।

৩) রেডডিট আইডি থেকে জানা যায়, সে জুন মাসে মুুসটাং, নেপাল সফর করেছেন — একই সময়ে (৩ জুন) শ্রীশান্ত রায় তার ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়ায় মুসটাং থেকে ছবি পোস্ট করেছেন।

৪) উক্ত রেডডিট আইডির অশালীন মন্তব্যগুলির ভাষা, টোন ও লেখনশৈলী বহু সহপাঠী শনাক্ত করেছেন, যা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর স্বভাবগত লেখনভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

৫) যখন বুয়েট শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি-বর্জনের পক্ষে সম্মিলিত স্বাক্ষর প্রদান করেন, তখন একমাত্র সেই কাগজে স্বাক্ষর করেননি — যা তার দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলে। 

উল্লিখিত প্রমাণ ও মিলের ভিত্তিতে আমরা দৃঢ়ভাবে সন্দেহ করছি যে আমাদের ব্যাচের শ্রীশান্ত রায়ই উক্ত রেডডিট আইডির ব্যবহারকারী এবং সে-ই সচেতনভাবে নারীদের প্রতি অশালীন, লাঞ্ছনাকর ও হয়রানিমূলক আচরণ করেছেন। 

তবে, যদি ওর কাছ থেকে আগেও এ রকম কোনো আচরণের শিকার হয়ে থাকে বা কোনো প্রমাণ থেকে থাকে, সে যেন গোপনীয়তা বজায় রেখে হলেও সেটা প্রকাশ্যে আনে। 

পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুদ লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ জারি করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এতদ্বারা সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের '২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায় (আইডিঃ ২১০৬১৬৯)-এর ছাত্রত্ব সাময়িকভাবে বাতিল করা হলো। 

এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি স্থায়ী বহিষ্কারের বিষয়ে আগামীকাল (বুধবার) বুয়েট উপাচার্যের সাথে আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।