আর্থিক সংকটে ঢাবি, তবুও ডাকসু ভবনে ৯ লাখ টাকায় এসি বসানোর অনুমোদন

Any Akter
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২:৪৭ অপরাহ্ন, ০৮ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২:৫১ অপরাহ্ন, ০৮ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

গবেষণা ও আবাসন সংকটে ভোগা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে ৯ লাখ টাকায় ৯টি এসি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব বাজেট থেকেই এই অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। তবে অনুমোদন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে এসি স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন কোষাধ্যক্ষ বিদেশে থাকায় দায়িত্বে ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ। অধ্যাপক জাহাঙ্গীর দেশে ফেরেন ১ সেপ্টেম্বর।

আরও পড়ুন: এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের তারিখ ঘোষণা

বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে তীব্র অর্থসংকটে রয়েছে। গবেষণার বরাদ্দ কমে গেছে, আবাসন ও শ্রেণিকক্ষের ঘাটতি প্রকট, এমনকি খণ্ডকালীন শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সম্মানিও সময়মতো দেওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যেই ডাকসুর পক্ষ থেকে এসি স্থাপনের প্রস্তাব আসে। প্রশাসন সূত্রের দাবি, প্রাথমিকভাবে উপাচার্য অনুমোদন না দিলেও ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েমের চাপের মুখে পরে সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়।

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমি ছুটিতে থাকা অবস্থায় অনুমোদন হয়েছে। কোন নিয়মে দেওয়া হয়েছে, তা জানি না। আমি থাকলে অবশ্যই প্রশ্ন তুলতাম—এ ধরনের ব্যয় যৌক্তিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সিদ্ধান্ত জবাবদিহির মধ্যে থাকা উচিত।”

আরও পড়ুন: ‘জুলাই শহীদ ও যোদ্ধাদের’ স্বীকৃতি প্রদান, আজীবন ভাতার দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ জানান, তিনি শুধু রুটিন দায়িত্ব হিসেবে ফাইলটি ফরওয়ার্ড করেছেন, অনুমোদন দেননি। “আমার অবস্থান পরিষ্কার—আর্থিক সংকটে থাকা অবস্থায় শিক্ষার উন্নয়নমূলক কাজে আমি উদার থাকতে পারি, কিন্তু বিলাসিতার বিষয়ে নই। শিক্ষার্থীদের মৌলিক প্রয়োজনই যখন পূরণ হচ্ছে না, তখন এসি বসানো সমর্থনযোগ্য নয়,” বলেন তিনি।

সরকারি ক্রয়বিধি অনুযায়ী, জরুরি বা দুর্লভ পণ্যের ক্ষেত্রেই সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণ করা যায়। কিন্তু এসি কেনার ক্ষেত্রে সেই বিধানও মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের বিদ্যুৎ শাখার কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, “ডাকসু ভবনের চাহিদা অনুযায়ী প্রশাসন অনুমোদন দিয়েছে। ‘গ্রি’ কোম্পানির নয়টি এসি স্থাপন করা হচ্ছে। সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়া (ডিপিএম) অনুসরণ করায় দ্রুত কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে।”

হিসাব দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বাজেটে ডাকসুর জন্য মোট ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে। এর মধ্যে ভবন সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনেই খরচ হয়েছে প্রায় ২৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। শুধু এসির জন্য ধরা হয়েছে ৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা, সাউন্ড সিস্টেমে ৭১ হাজার এবং পানির ফিল্টারে ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া আসবাবপত্র, পর্দা, শৌচাগার সংস্কার, নতুন ওয়ার্কস্টেশন, রং ও সাইনবোর্ডসহ আরও বেশ কিছু কাজে প্রায় সাত লাখ টাকার ব্যয় চলছে—সবই ডিপিএম পদ্ধতিতে।

ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এইচ এম মোশারফ হোসেন বলেন, ডাকসুর নেতারাই সরাসরি প্রশাসনের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন। অনুমোদনও প্রশাসন থেকে এসেছে, আমাদের দপ্তর থেকে নয়।

উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব। অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তা যাচাই করা হবে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম বলেন, “ডাকসু ভবনের অবস্থা নাজুক ছিল। আমরা শুধু দ্রুত কাজের পরিবেশ তৈরির অনুরোধ করেছি, এসি দেওয়ার বিষয়ে আলাদা কোনো চাপ দিইনি।”

ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ বলেন, “আমরা সংস্কারকাজে তদারকি করেছি, যাতে সঠিকভাবে কাজ হয়। যদি কেউ মনে করে এসি বিলাসিতা, বিশ্ববিদ্যালয় না দিলেও সমস্যা নেই। ঘাটতি বাজেটের মধ্যেই আমরা সিসিটিভি বসিয়েছি, পুরোনো সরঞ্জাম সংস্কার করে ব্যবহার করছি।”

প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, যখন গবেষণা ও মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন বরাদ্দ সংকুচিত, তখন ডাকসু ভবনে এসি স্থাপনের মতো উদ্যোগ প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।