শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়: জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তীব্র উদ্বেগ
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের অনুপস্থিতিতে বিচার পরিচালনা এবং মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণাকে ঘিরে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। পৃথক বিবৃতিতে তারা বলেছে, বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মানা হয়নি এবং এতে ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ: ‘রায় ন্যায়বিচার উদ্বেগকে আরও বাড়িয়েছে’
আরও পড়ুন: দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ আগামী সপ্তাহে
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, অভিযুক্ত দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অনুপস্থিতিতেই রায় ঘোষণা করা হয়েছে, এবং তাদের পছন্দের আইনজীবী নেওয়ার স্বাধীনতা ছিল না। সংস্থাটির ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মিনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘হাসিনার শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের, তবে সেটি ন্যায্য বিচারের বিকল্প হতে পারে না।’
এইচআরডব্লিউ আরও জানায়, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, সাক্ষীদের জেরা এবং স্বাধীন আইনজীবী নিয়োগ—এসব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি। তারা মনে করে, এই রায় বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ আরও বাড়াবে।
আরও পড়ুন: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিশ্বনেতাদের উত্থান, পতন ও পরিণতি
জাতিসংঘ: ‘মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা, তবে ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় (OHCHR) যেকোনো পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করলেও বলেছে যে, ভুক্তভোগীদের জন্য এটি একটি “গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত”।
জাতিসংঘ জানায়, গত বছরের কোটা আন্দোলনে আগ্রাসী দমন-পীড়নে এক হাজার ৪০০ জন নিহত হয়—যাদের মধ্যে শিশু ও শিক্ষার্থী ছিল।
তারা বলেছে, যেহেতু বিচার অনুপস্থিতিতে হয়েছে, তাই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড নিশ্চিত করা আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক বাংলাদেশে সত্য-প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল: ‘এটি কোনো সুষ্ঠু বিচার নয়’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মৃত্যুদণ্ডকে “চূড়ান্ত অমানবিক ও অবমাননাকর শাস্তি” উল্লেখ করে বলেছে, এই জটিল মামলায় নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত প্রয়োজন ছিল।
সংস্থাটির মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামাহ বলেন—‘ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার জরুরি, কিন্তু এই বিচার প্রক্রিয়া তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
অ্যামনেস্টি জানায়, আসামিদের পক্ষে পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির সময় ছিল না এবং পরস্পরবিরোধী সাক্ষ্যপ্রমাণে জেরা করার সুযোগও দেওয়া হয়নি। তারা মনে করে, এই রায় ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শঙ্কা আরও বাড়ায়।
সূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা





