রমজানের শেষ দশক: নাজাত ইতিকাফ ও লাইলাতুল কদর

Sanchoy Biswas
মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব
প্রকাশিত: ১০:৫০ পূর্বাহ্ন, ২১ মার্চ ২০২৫ | আপডেট: ৮:০৮ পূর্বাহ্ন, ২১ মার্চ ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

আজ থেকে শুরু হল পবিত্র রমজানের শেষ দশক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র রমজানকে তিনটি ভাগে আমল করেছে। তন্মধ্যে শেষ দশক হল নাজাত অর্থাৎ জাহান্নাম থেকে মুক্তি। আর এই মুক্তির জন্যই ফজিলতে ভরপুর শেষ দশক। রাসূল সাঃ প্রতি রমজানে ই শেষ দশক ইত্তেকাফ করতেন। এর মূল উদ্দেশ্য হলো শবে কদর তালাশ করা। শবে কদর সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে একটি সূরাই অবতীর্ণ হয়েছে। সেখানে কদরের রাত্রিতে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ সহ ওই রাত্রে কি হাজার মাস থেকে উত্তম বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফে রমজানের শেষ দশকের আমল ও ফজিলত নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা রয়েছে।

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, পবিত্র রমজনের একটি রাত বরকত ও ফজিলতের দিক থেকে হাজার মাস থেকেও উত্তম। এ মাসের রোজাকে আল্লাহ তাআলা ফরজ করেছেন এবং এর রাতগুলোয় আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোকে নফল ইবাদত রূপে নির্দিষ্ট করেছেন। যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ফরজ ইবাদত ছাড়া সুন্নত বা নফল ইবাদত করবে, তাকে এর বিনিময়ে অন্যান্য সময়ের ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব প্রদান করা হবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো ফরজ আদায় করবে, সে অন্যান্য সময়ের ৭০টি ফরজ ইবাদতের সমান পুণ্য লাভ করবে। (বায়হাকি)

আরও পড়ুন: নুসুক অ্যাপ এখন থেকে ইন্টারনেট ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে

তাই পুরো রমজানেই ফরজ রোজা ও অন্যান্য ফরজ-ওয়াজিব ইবাদতের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত করার গুরুত্ব অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আর রমজানের শেষ দশ দিনের নফল ইবাদতের গুরুত্ব রমজানের প্রথম বিশ দিনের চেয়েও বেশি। নবিজি (সা.) এ সময় সবচেয়ে বেশি আমল ও ইবাদত করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, নবিজি (সা.) রমজানের শেষ দশকে (ইবাদত-বন্দেগিতে) যে পরিশ্রম করতেন, তা অন্য কোনও সময় করতেন না। (সহিহ মুসলিম)

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে আয়েশা (রা.) বলেন, নবিজি (সা.) যখন রমজানের শেষ দশকে প্রবেশ করতেন, তখন রাতে জেগে থাকতেন, ইবাদতের জন্য পোশাক-পরিধেয় বেঁধে নিতেন এবং পরিবারের অন্য সদস্যদেরও ইবাদতের জন্য জাগিয়ে রাখতেন। (সহিহ বুখারি: ২০২৪, সহিহ মুসলিম)

আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক হোসেনি দালান থেকে তাজিয়া মিছিল শুরু

আলী (রা) বলেন, রমজানের শেষ দশকে নবিজি (সা) ইবাদত-বন্দেগির জন্য নিজের পরিবার-পরিজনকে রাতে জাগিয়ে দিতেন। (সুনানে তিরমিজি)

রমজানের শেষ দশ দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতেকাফ করা অর্থাৎ সওয়াবের নিয়তে দুনিয়াবি কাজকর্ম থেকে অবসর নিয়ে কোনো মসজিদে অবস্থান করা। রমজানের শেষ দশ দিনের এই ইতেকাফ শরিয়তে সুন্নতে মুআক্কাদা কেফায়া। কোনো মহল্লা বা এলাকা থেকে একজন ইতেকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে এটি আদায় হয়ে যাবে। কেউ ইতেকাফ না করলে সবাই গুনাহগার হবে। আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, নবিজি (সা.) প্রতি রমজানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন। যে বছর তিনি ইন্তিকাল করেন, ওই বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। (সহিহ বুখারি)

রমজানে শেষ দশ দিন ইতেকাফ করলে এ সময় ইবাদত ও আমলে মগ্ন থাকা সহজ হয়ে যায়।

রমজানের শেষ দশ দিন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

রমজানে আল্লাহ এমন একটি রাত দান করেছেন, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। ওই রাতেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল। কোরআনে ওই রাতের বর্ণনা এসেছে সুরা কাদরে। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আমি এটি নাজিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে।’ তোমাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল কদর’ কী? ‘লাইলাতুল কদর’ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত। (সুরা কাদর: ১-৫)

সুনির্দিষ্টভাবে ওই রাতটি আমাদের চিনিয়ে দেওয়া হয়নি। তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই রাতটি শেষ দশকের যে কোনো একটি রাত, তাই শেষ দশকেই তা অনুসন্ধান করতে হবে। রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ ও নফল ইবাদতের অন্যতম উদ্দেশ্য হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ওই রাতে আল্লাহ তাআলার ইবাদতের তওফিক লাভ করা।

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজানের প্রথম দশ দিন ইতেকাফ করেছিলেন। এরপর তিনি মাঝের দশ দিন একটি তুর্কি তাবুতে ইতেকাফ করলেন, যার দরজায় একটি চাটাই ছিল। একদিন রাসুল (সা.) চাটাইটি হাতে নিয়ে একপাশে সরিয়ে রাখলেন, তারপর মাথা বের করে লোকদের সাথে কথা বললেন। লোকেরা তার কাছে এগিয়ে গেলো। তিনি বললেন, আমি প্রথম দশ দিন ইতেকাফ করেছি এই রাত (লাইলাতুল কদর) অনুসন্ধানের জন্য। এরপর আমি মাঝের দশ দিন ইতেকাফ করেছি। তারপর আমাকে জানানো হয়েছে যে, এটি (লাইলাতুল কদর) শেষ দশকে রয়েছে। তাই আপনাদের মধ্যে যারা ইতেকাফ করতে চান, তারা যেন ইতেকাফ করেন। এরপর লোকেরা তার সাথে ইতেকাফ করল। (সহিহ মুসলিম)

অন্য একটি হাদিসে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর খোঁজার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে আপনারা লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করুন। (সহিহ বুখারি)