ভাঙ্গা বিক্ষোভ: অবরোধ তুলে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ স্বাভাবিক

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:৩৬ অপরাহ্ন, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৫:২৬ অপরাহ্ন, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামেরদী ইউনিয়ন সংযোগের পরিবর্তনের প্রতিবাদে সোমবার তৃতীয় দফার অবরোধ চলাকালীন ভাঙ্গা পৌরসভা ও আশপাশের এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দিনভর বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে পুরো এলাকা অস্থির থাকে। বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে থানা, উপজেলা পরিষদ এবং কর্মকর্তাদের অফিসে হামলা চালায়।

অবরোধকারীরা মঙ্গলবারও সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দিয়ে অবরোধ তুলে দিলে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।

আরও পড়ুন: নাসিরনগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

সকাল থেকে অবরোধ চললেও দুপুরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে পুলিশ ও বিক্ষুব্ধ জনতার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উত্তেজিত জনতা পুলিশকে ধাওয়া দিয়ে ভাঙ্গা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মসজিদের ভেতর আশ্রয় নিতে বাধ্য করে। একপর্যায়ে মসজিদেও হামলা চালানো হয়।

এরপর বিক্ষুব্ধরা একে একে ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে থানা এবং উপজেলা পরিষদে হামলা চালায়। ভাঙ্গা থানায় চারটি পিকআপ ভ্যান, একাধিক মোটরসাইকেল, ফার্নিচার, কম্পিউটারসহ ভবনের বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। হাইওয়ে থানায় তিনটি পিকআপ ভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স, রেকার ট্রাক, ডিআইজির পাজেরো গাড়ি, আটটির অধিক মোটরসাইকেল, কম্পিউটার ও প্রিন্টার মেশিনসহ সবকিছু গুঁড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।

আরও পড়ুন: শরীয়তপুরে নির্যাতিত শিশুর পাশে তারেক রহমান

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, নির্বাচন অফিস, এলজিইডি অফিস, হলরুম, অফিসার্স ক্লাবসহ পুরো উপজেলা পরিষদ ভবন ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া কয়েকটি মোটরসাইকেলও আগুনে দগ্ধ হয়। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডবে ভাঙ্গার সরকারি অফিসগুলো কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রোকিবুজ্জামান জানান, দুপুরে কয়েক হাজার মানুষ লাঠি-সোঁটা নিয়ে থানায় ঢুকে পড়ে। তারা থানার সব গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে, এমনকি একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দেয়। “আমরা কিছুই করতে পারিনি, শুধু দেখেছি,” বলেন তিনি।

তাণ্ডব চলাকালীন ও পরে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা উপজেলা প্রশাসনের অন্য কোনো প্রতিনিধির মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ভাঙ্গা লোকাল থানার পক্ষ থেকেও নিরাপত্তাজনিত কারণে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তাণ্ডবের সময় বিক্ষোভকারীরা ছবি ও ভিডিও ধারণ করায় একাধিক সাংবাদিককে মারধর করে। এদের মধ্যে দুইজন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক আহত হন, একজনের হাতে গুরুতর আঘাত লেগেছে।

উল্লেখ্য, ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের গেজেটে ফরিদপুর-৪ আসনের আওতাভুক্ত আলগী ও হামেরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রতিবাদে ৫ সেপ্টেম্বর ভাঙ্গাবাসী সড়ক অবরোধ করে। সেই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান তিন দিনের সময় নিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন। তবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে দ্বিতীয়বারের মতো অবরোধ শুরু হয়, যা রবিবার থেকে তৃতীয় দফায় রূপ নেয়।

এদিকে, ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে আলগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মম ছিদ্দিক মিয়া ও হামেরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোকন মাতুব্বরসহ ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও শতাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা করে পুলিশ মামলা দায়ের করলে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে পুলিশের প্রতি ক্ষোভ আরও বাড়ে।