দোকানে ভাংচুর ও ১২টি গাড়িতে আগুন

বিএনপির দুইপক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র ফরিদপুর, আহত ৫০

Sadek Ali
ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৯:৩০ অপরাহ্ন, ০৭ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৯:৩১ অপরাহ্ন, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস কর্মসূচি পালন উপলক্ষে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বোয়ালমারী পৌরবাজারে ওয়াপদার মোড় এলাকা। এ সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ উভয়পক্ষের ৪০-৫০ জন কমবেশি আহত হয়েছে। আহতরা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। 

সংঘর্ষের সময় ওয়াপদার মোড়ের পাশে হারুণ শপিং কমপ্লেক্সে বিএনপির একাংশের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। আগুন দেওয়া হয় ওই শপিং কমপ্লেক্সের সামনে থাকা আমার দেশ পত্রিকার প্রতিনিধি রুবেলের মোটরসাইকেলসহ অন্তত ১২টি মোটরসাইকেলে। এছাড়া আশেপাশের দোকানগুলিতে ব্যাপক ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। 

আরও পড়ুন: রাজশাহীতে ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে ৩ বন্ধু নিহত

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দীরন মিয়া ওরফে ভিপি ঝুনুর নেতৃত্বে দুই ভাগে বিভক্ত ফরিদপুর-১ আসনের (বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাপডাঙ্গা উপজেলা) বিএনপি। তারা দুইজনই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে দলটি এ আসনে এখনো কাউকেই দলীয় মনোনয়ন চুড়ান্ত করেনি। এ আসনে স্থগিত রাখা হয়েছে বিএনপির মনোনয়ন। 

ঘটনার প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শামসুদ্দীন মিয়া ভিপি ঝুনুর সমর্থকরা মাঝকান্দি-বোয়ালমারী-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ওয়াপদার মোড় এলাকায় এবং সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থকরা প্রায় এক কিলোমিটার দূরে পৌর বাস টার্মিনাল মোড়ে সমবেত হতে শুরু করেন। উভয় সমবেতদের হাতে বাঁশের লাঠির মাথায় ধানের শীষ বাধা ছিল। বিকেল ৪টার দিকে ঝুনুর কিছু সমর্থকরা ওয়াবদা মোড় থেকে পৌর বাস টার্মিনালের দিকে এগোতে থাকে। পরে তারা পুনরায় ওয়াবদা মোড়ে অবস্থান নেয়। 

আরও পড়ুন: যারা কোনো আসন পাবে না তারাই নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে: খোকন

এদিন বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থকরা মিছিল নিয়ে আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে ওয়াপদার মোড় এলাকার দিকে এগুতে থাকলে দুইপক্ষ পরস্পরের প্রতি ইট নিক্ষেপ করতে শুরু করে। তবে নাসিরুলের সমর্থকরা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় শামসুদ্দীনের সমর্থকরা পিছু হটে ওয়াপদার মোড়ে হারুণ শপিং কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেয়।

এ ঘটনার সময় বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান দুইপক্ষকে থামানোর জন্য ঘটনাস্থলে পৌছান। তবে উভয়পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকলে নাসিরুল ইসলামের সমর্থকরা ওসি-ইউএনও’র গাড়ীর দিকে এগুতে থাকলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

এরপর নাসিরুলের সমর্থকরা হারুণ শপিং কমপ্লেক্সে সামনে থাকা অন্তত ১৫টি মোটরসাইলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা ওই ভবনে ঢুকে নিচ তলায় অবস্থিত বিএনপির একাংশের দলীয় কার্যালয় (শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু) ও বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করে। এছাড়া আশেপাশে বিভিন্ন দোকানে হামলা করে ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধরা। এ সময় হামলাকারীদের হাতে ইট, লাঠির সাথে রামদা, চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র প্রদশণ করতে দেখা যায়। এছাড়া সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে বেশি কিছু পুলিশকে ওয়াবদা মোড়ের একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ঢুকে নিজেরা নিরাপত্তা নেয়। পরে সোয়া ৫টার দিকে বোয়ালমারী ফায়ার সার্ভিসের একটি দল একটি গাড়ি আগুন নেভাতে এসে খন্দকার নাসিরুলের সমর্থকদের ফিরে দেতে বাধ্য হয়। সে সময় কিছু বিক্ষুব্ধরা লাঠি ও ইট দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতেও হামলা করে। 

খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে সোনাবাহিনীর সদস্যরা এসে অবস্থান নেয়। সেনাবাহিনী আসার পর দমকল বাহিনী পুনরায় ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভায়। সেনাবাহিনী থাকার পরও সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর অবস্থা বিরাজ করতে দেখা যায়।

এ হামলা ও সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ উভয়পক্ষের ৪০-৫০ জন কমবেশি আহত হয়েছে। আহতরা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। 

তবে রাত ৭টার দিকে বিএনপির একাংশের নেতা শামচুদ্দীন মিয়া ভিপি ঝুনু ধ্বংসাত্মক দলীয় কার্যালয়ে এবং খন্দকার নাসিরুল পক্ষে সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড. সিরাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সাহা বোয়ালমারী বার্তা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। 

এ ব্যাপারে শামসুদ্দীন মিয়া ঝুনু বলেন, প্রশাসনকে জানিয়ে আমরা ওয়াপদার মোড়ে অনুষ্ঠান করছিলাম। এসময় নাসিরুলের লোকজন আওয়ামী লীগের লোকদের সাথে নিয়ে অতর্কিতে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। তারা ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে ও বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে। এ ঘটনায় আমার ১৫ জন সমর্থক আহত হয়েছে। কার্যালয়ে থাকা বেগম খালেদা জিয়ার ছবি ও তারেক রহমানের ব্যানার ভাংচুর করা হয়েছে। 

খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বলেন, আমি ছিলাম মধুখালী। আমাদের লোকজনদের উপর হামলা করা হয়েছে। একজনকে কুপিয়ে জখম করে। ওরা হারুন শপিং কমপ্লেক্সের উপরে উঠে আমার সমর্থদের উপর ইট ছুড়ে মারলে চার-পাঁচজন কয়েকজন আহত হন। এতে বিক্ষুব্ধ জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই শপিং কমপ্লেক্সে হামলা করতে পারে। 

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, বিএনপির  দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ভাংচুর ও অগ্নিংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। তবে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী আসার পর পরিস্থিতি বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।