দাবি আদায় কর্মীদের কর্মবিরতি
টিকেট চেকিং ছাড়াই চলছে মেট্রোরেল

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) চারজন সহকর্মী এমআরটি পুলিশ সদস্যের হাতে লাঞ্ছিতের ঘটনায় সোমবার (১৭ মার্চ ) সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন মেট্রোরেলের কর্মীরা। এতে টিকিট কাউন্টার বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক রয়েছে মেট্রো রেল চলাচল। টিকিট ছাড়াই যাত্রীরা ভ্রমণ করতে পারছেন যাত্রীরা। এ অবস্থায় যাত্রীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে রেল চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেই মোতাবেক কর্মীদের কর্মবিরতির মধ্যেও সোমবার (১৭ মার্চ) সকাল থেকে শিডিউল মোতাবেক চলছে মেট্রোরেল। আর কাউন্টার ফাঁকা থাকায় টিকিট ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারছেন যাত্রীরা।
এর আগে, রোববার (১৬ মার্চ) রাতে ‘ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের’ ব্যানারে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনা তুলে ধরে ৬টি দাবি জানানো হয়।
আরও পড়ুন: লাইভ বাস ট্র্যাকিং অ্যাপ, রিকশা নিয়ন্ত্রণ ও নতুন রুট চালুর উদ্যোগ
কর্মীদের দাবিগুলো হচ্ছে- আগামী এক কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার মূল হোতা ওই পুলিশ সদস্যকে (এস আই মাসুদ) স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে ও ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব পুলিশ সদস্যকে (কন্সটেবল রেজনুল, ইন্সপেক্টর রঞ্জিত) শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং তাদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে; মেট্রোরেল, মেট্রো স্টাফ ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে হবে; এমআরটি পুলিশকে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে; স্টেশনে দায়িত্বরত সিআরএ টিএমও, স্টেশন কন্ট্রোলারসহ অন্য সব কর্মীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; অফিসিয়াল পরিচয় পত্র ছাড়া ও অনুমতি ব্যতি কোনো ব্যক্তি যেন স্টেশনের পেইড জোনে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং আহত কর্মীর সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মেট্রোরেলের সব স্টাফ কর্মবিরতি পালন করবে এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং মেট্রো স্টেশনে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবেন।
আরও পড়ুন: ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বাস সার্ভিস চালু
মেট্রোরেল কর্মীরা গণমাধ্যমকে বলেছেন, সোমবার (১৭ মার্চ) সকাল থেকে আমরা ট্রেন চালাবো না। আমাদের দাবি মেনে নিলে আমরা ট্রেন চালাবো। আমাদের ঘটনার বিষয়ে হেড অফিসের বড় স্যাররা অবগত আছেন। ঘটনার পর তারা সচিবালয়ে মিটিং করেছে। আমাদের প্রেস রিলিজ সরকারি ডেকোরাম মেনে তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে বলা হয়, আনুমানিক বিকেল সোয়া ৫টায় দুজন মহিলা কোনো প্রকার পরিচয়পত্র প্রদর্শন না করেই সিভিল ড্রেসে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করে এসে ইএফও অফিসের পাশে থাকা সুইং গেইট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চান। যেহেতু তারা নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরিহিত ছিলেন না ও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি, তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআরএ নিয়ম অনুযায়ী তাদের সেখান থেকে পিজি গেট ব্যতীত সুইং গেট দিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চান। তবে, সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তারা এতে উত্তেজিত হয়ে তর্কে লিপ্ত হন এবং একপর্যায়ে এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যান।
পরবর্তীতে ঠিক একইভাবে দুইজন এপিবিএন সদস্য সুইং গেট ব্যবহার করে সুইং গেট না লাগিয়ে চলে যান, উক্ত বিষয়ের কারণ তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা পূর্বের ঘটনার জের ধরে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে দায়িত্বে থাকা সিআরএ এর সঙ্গে ইএফওতে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং ইএফও থেকে বের হওয়ার সময় কর্মরত সিআরএ এর কাঁধে বন্ধুক দিয়ে আঘাত করে এবং কর্মরত আরেকজন টিএমও এর শার্টের কলার ধরে জোরপূর্বক এমআরটি পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করে এবং গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করে। উপস্থিত স্টেশন স্টাফ ও যাত্রীরা বিষয়টি অনুধাবন করে উক্ত এমআরটি পুলিশের হাত থেকে কর্মরত টিএমওকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে।
উক্ত পরিস্থিতি মেট্রোরেল কর্মপরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। বর্তমানে আহত (রাইফেল দিয়ে কাঁধে আঘাত করা হয়) সিআরএকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান করার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং টিএমও (যাকে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে হেনস্তা করা হয়, গুলি করার জন্য বুকে রাইফেল ধরা হয়) উক্ত ঘটনার বিবৃতি দেওয়ার পর বাসায় যাওয়ার পথে জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।