ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও বিস্ফোরণ মামলা বাদ যায়নি ঠিকাদার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও বিস্ফোরণের অভিযোগে সাবেক দুই সাংসদ , সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ১১৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের। অজ্ঞাত আরও ২০০/৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় রাজনীতিবিদ ছাড়াও সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার জন্য আসামি করা হয়েছে বলে জানা যায়।
গত (১ সেপ্টেম্বর) রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (নাসিরনগর) ১ম আমলি আদালতে এই মামলা দায়ের করা হয় । নাসিরনগর উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব মো. শাহ আলম পাঠান বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: রায়পুরায় কাউকেই গ্রীন সিগন্যাল দেওয়া হয়নি বলে দাবি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আসামিরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে করে স্প্রিন্টারের আঘাতে কয়েকজন রক্তাক্ত জখম হয়, জানমালের ক্ষতি সাধন করে ছাত্রজনতার শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আরও পড়ুন: কুলাউড়ায় গ্রাম পুলিশদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন করলেন জেলা প্রশাসক
আসামিদের হাতে থাকা পেট্রোল দিয়ে ঘটনাস্থলের আশপাশের দোকান পাট, স্থাপনা, বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের অফিস কক্ষ ও পথচারী লোকজনের রক্ষিত ১৫/২০টি মোটরসাইকেলে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
এই মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া- (নাসিরনগর) সংসদীয় আসনের সদ্য সাবেক সাংসদ এ কে এম একরামুজ্জামান সুখন, সাবেক সাংসদ বি এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক নাজির মিয়া, তার স্ত্রী সদ্য সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুমা আক্তার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম মনিরুজ্জামান, গোয়ালনগর ইউপি চেয়ারম্যান আজহারুল হক, ভলাকুট ইউপি চেয়ারম্যান রুবেল মিয়া, গুনিয়াউক ইউপি চেয়ারম্যান জিতু মিয়া, ফান্দাউক ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান, পূর্ব ভাগ ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন, হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক মিয়া, চাতলপাড় ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, চাপরতলা ইউপি চেয়ারম্যান মনসুর আলী ভুঁইয়া, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আঁখি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অসীম পালসহ আরও অনেকে।
এছাড়াও প্রথম শ্রেণীর একজন ঠিকাদার গৌতম কুমার দেব কেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। যদিও তিনি কোন রাজনীতির সাথে জড়িত না। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রথম শ্রেণীর একজন ঠিকাদার।
মামলার বাদি শাহ আলম পাঠানের বাবা ইলিয়াস পাঠান ঠিকাদার গৌতম দেব এর ছোট ভাই “দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার “পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মিহির কুমার দেব কে মুঠোফোনে বলেন, গৌতম দেব কোন রাজনীতির সাথে জড়িত না। সে ঠিকাদারি করে অনেক টাকা পয়সা কামাইছে, ৫ লক্ষ টাকা দিলে, আমি আমার ছেলেকে দিয়ে ওই মামলা থেকে গৌতম দেবের নাম কাটাইয়া দিব।
গৌতম দেব এর ছোট ভাই সংবাদ কর্মী মিহির কুমার দেব বলেন, আমার ভাই কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। তাকে হয়রানি করার জন্য মামলায় জড়ানো হয়েছে। মামলার বাদির বাবা আমার মুঠোফোনে বলেন, আমার ভাই ৫ লক্ষ টাকা দিলে তাকে মামলা থেকে বাদ দিয়ে দিবে।
এইসব গায়েবী মামলা ও চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য প্রতিকার চেয়ে জেলা পুলিশ সুপার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দায়িত্ব প্রাপ্ত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেন, চাতলপাড় ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন আমি কোন রাজনীতির সাথে জড়িত না। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আমি আমার ইউনিয়নে এই পর্যন্ত কাউকে কোন সময় হয়রানি করেছি বলে জানা নাই। শাহ আলম পাঠান আমার কাছে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে, চাঁদা দিলে আমাকে মামলা থেকে বাদ দিয়ে দিবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের পুলিশ পরিদর্শক (ওসি কোর্ট) কাজী দিদারুল আলম জানান, মামলাটি আমলে নিয়ে নথিভুক্ত করতে আদালত নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছে,
১৯ শে সেপ্টেম্বর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ লতিফ হোসেনকে প্রেপ্তার করেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
নাসিরনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল কাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।