কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ ক্ষোভ
বঞ্চনা আর বৈষম্যের নির্মম চিত্র তথ্য অধিদফতর
সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড ও মন্ত্রণালয়ের সকল ইতিবাচক খবর সকল গণমাধ্যমেই দিনরাত নানাভাবে তুলে ধরেন তথ্য সংযোগ কর্মকর্তারা। তাদেরই মাতৃ প্রতিষ্টান প্রধান কার্যালয় সচিবালয় তথ্য অধিদফতর। সেখানে তারাই নির্মম বঞ্চনার বৈষম্যের শিকার।
গণমাধ্যমে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য ও পদোন্নতি বঞ্চনার এক নির্মম চিত্র তথ্য অধিদফতর। এ মুহূর্তে এ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ সাত পদের মধ্যে পাঁচটিই শূন্য। অধিদফতরের দপ্তর প্রধান পদটি প্রধান তথ্য অফিসার। এটি কেবল এ দপ্তরই নয়, বিসিএস (তথ্য সাধারণ) ক্যাডারেরও শীর্ষ পদ। অথচ এ পদটি দীর্ঘদিন শূন্য রয়েছে। একজন অতিরিক্ত প্রধান তথ্য অফিসার এ পদে অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। তিন বছরের অধিক সময় আগে যখন তিনি এ পদের অতিরিক্ত দায়িত্বে আসীন হন তখন ক্যাডারের পঞ্চম জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন, বর্তমানে তিনি ক্যাডারের চতুর্থ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। ক্যাডারের শীর্ষ পদটিতে পদোন্নতি না হওয়ায় পরবর্তী উচ্চতর পদগুলোতেও পদোন্নতি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রবাসী ভবন ও বিএমইটি ফ্যাসিস্ট মাফিয়া ব্যবসায়ী পুনর্বাসনের আখড়া
প্রধান তথ্য অফিসার পদ ছাড়াও এখানে শূন্য রয়েছে অতিরিক্ত প্রধান তথ্য অফিসার একটি পদ ও সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য অফিসার তিনটি পদ (চারটির মধ্যে)।
অধিদফতরের কেবল শীর্ষ পদগুলোই নয়, মিড-লেবেল ও নিম্নপর্যায়ের ক্যাডার পদগুলোতেও রয়েছে ব্যাপক শূন্যতা। অধিদফতরের উপপ্রধান তথ্য অফিসার (গ্রেড-৫) এর ২১টি পদের মধ্যে ১১টি শূন্য। এগুলো হলো সদর কার্যালয়ের বিভিন্ন শাখার ০৩টি পদ, জনসংযোগ কর্মকর্তার ০৫টি পদ এবং সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর আঞ্চলিক তথ্য অফিসের অফিস প্রধানের ০৩টি পদ। এছাড়া, সিনিয়র তথ্য অফিসার ও তথ্য অফিসার পদগুলোর এক-তৃতীয়াংশের বেশি শূন্য রয়েছে।
আরও পড়ুন: হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
জনপ্রশাসনের দুয়েকটি ক্যাডারে যেখানে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জনের সাথে সাথেই অনুমোদিত পদ শূন্য না থাকলেও নানা যুক্তিতে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হয়, সেখানে বিসিএস (তথ্য সাধারণ) ক্যাডারসহ বেশির ভাগ ক্যাডারেই পদোন্নতি ঠেকিয়ে রাখার জন্য নানা যুক্তি সামনে আনা হয়। ক্যাডারে ক্যাডারে এ বৈষম্যের জন্য কেবল বঞ্চিত কর্মকর্তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হন না, এর ফলে ফাংশনাল দপ্তরগুলোর সুচারু পরিচালনা ও জনস্বার্থ সুরক্ষার কাজও সুকঠিন হয়ে পড়ে।
ক্যাডারের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরাসরি নিয়োগের সংখ্যা চাহিদা নিরূপনসহ পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে অনুসৃত নীতি-পদক্ষেপ বৈষম্যহীন বা যথাযথ না হওয়ায় বিসিএস (তথ্য সাধারণ) ক্যাডারে কখনোই প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তার নিয়োগ/পদোন্নতি/পদায়ন ঘটেনি। তাদের মতে, প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হিসেবে এ দায় কেবলই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের, কারণ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সবসময়ই এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের চাহিদা মতো তথ্য প্রেরণ করে থাকে। বিদ্যমান অবস্থা ক্যাডারের কর্মকর্তা নিয়োগ ও পদোন্নতির চাহিদা নির্ধারণে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুসৃত পদ্ধতির গলদ ও আগ্রহের ঘাটতির এক সুস্পষ্ট চিত্র। এসব বিষয়ে ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
বিসিএস (তথ্য সাধারণ) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পেশাগত দক্ষতাকে বিবেচনায় নিয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে জনসংযোগ ও প্রেস উইংয়ের কাজে তাদেরকে নিয়োগের চাহিদা দেওয়া হয়। প্রেষণে অন্য দপ্তরে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলে মূল দপ্তরের পদ শূন্য হয়ে যায়। প্রেষণ পদের বিপরীতে পদোন্নতি না দেওয়া সরকারি নীতি ও জনস্বার্থের পরিপন্থি। কেননা, সরকারি দপ্তরে পদসৃজন ও নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয় দপ্তরের চাহিদা পূরণের জন্য। একটি প্রেষণ পদ ও একটি মূল দপ্তরের লাইন পদ – এ দুটির বিপরীতে একটি পদোন্নতি দেওয়ার অর্থ এ দুই দপ্তরের কোনো একটির পদসৃজনের যৌক্তিকতা, সরকারি সিদ্ধান্ত ও সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বিধিমালাকে অস্বীকার ও অবজ্ঞা করা।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রেস উইং, নির্বাচন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, দুদক, বাংলাদেশ পুলিশ, বিজিবি-সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিধিমালায় জনসংযোগ ও প্রেস ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট পদসমূহে এ ক্যাডারের কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয় সুনির্দিষ্ট করা আছে। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের প্রেস উইং, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট, জাতীয় সংসদ সচিবালয়, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ টেলিভিশন, ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে এ ক্যাডারের কর্মকর্তা প্রেষণে নিয়োজিত হন। বিভিন্ন দপ্তরের চাহিদার আলোকে জনস্বার্থে প্রেষণে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। এর বিপরীতে মূল দপ্তরের পদ শূন্য রাখার জনস্বার্থ-পরিপন্থি ভ্রান্ত নীতি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
তথ্য অধিদফতর (Press Information Department-PID) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান হলেও গোটা সরকারি ব্যবস্থার সঙ্গে এর আবশ্যকীয় সম্পর্ক রয়েছে। এ অধিদফতর সরকারের নীতি, আদর্শ, সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা গণমাধ্যমে প্রচার করে। সরকারি সংবাদ-তথ্য সরবরাহ, প্রকাশিত সংবাদের গতিধারা বিশ্লেষণ ও নীতিমালার আওতায় প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড প্রদানসহ সাংবাদিকদের পেশাগত বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করে এ অধিদফতর সরকার ও গণমাধ্যমের মধ্যে সম্পর্ক রক্ষা ও বৃদ্ধিতে সচেষ্ট থাকে। সরকারের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতি বঞ্চনার এ চিত্র গোটা জনপ্রশাসনের বিভিন্ন ক্যাডার ও সার্ভিসের মধ্যে বৈষম্যের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে অনেকটাই সহায়ক।





