ডক্টর ইউনুস ছাত্রদের খেদমত নিয়ে ব্যস্ত: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণের কাছে কেউ দায়বদ্ধ থাকে না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না। ডক্টর ইউনুস সাহেব বলেছেন, ছাত্ররা তাকে ক্ষমতায় এনেছে। উনি এখন ছাত্রদের খেদমত নিয়ে ব্যস্ত। জনগণ জাহান্নামে যাক, চালের দাম কত বাড়লো, তাতে কিছু আসে যায় না। তেলের দাম বাড়লো কি-না তাতেও কিছু আসে যায় না। তার মানে, তাদের দায়বদ্ধতা জনগণের কাছে নাই। তাদের দায়বদ্ধতা আছে ছাত্রদের কাছে।
তিনি মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুর জেলা শহরের রাজবাড়ি মাঠে নিত্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রা পথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: রায়পুরায় কাউকেই গ্রীন সিগন্যাল দেওয়া হয়নি বলে দাবি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, আমরা ১৭ বছর যাবত আন্দোলন করেছি একটি নির্বাচনের জন্য, এটা নতুন কোন দাবি না। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বার বানানোর জন্য আন্দোলন করি নাই, আন্দোলন করেছিলাম প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের জন্য, জনগণের ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য। সে কাজটা আপনারা করেন, আমরা সেটাই চাই। তিনি বলেন- ডিসেম্বরের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে নাকি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে এটা একটা বিরাট প্রশ্ন? আমরা কি ১৭ বছর আন্দোলন করেছি ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য? আমরা আন্দোলন করেছি জনগণের ভোটের অধিকারের মধ্য দিয়ে স্বচ্ছতার সাথে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দিয়ে একটি পার্লামেন্টারি সরকারের জন্য। এখনো তা হয় নাই। তাই আজকে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সকল উপদেষ্টাদের কাছে বলব জনগণের আকা্খংা ও প্রত্যাশার বাইরে আপনারা পথ চললে আপনারাও হোঁচট খেতে পারেন।
তিনি বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদেরকে প্রথম দিকে আমরা নৈতিক সমর্থন দিয়েছি। তারপরে দিয়েছি সর্বাত্মক সমর্থন। তারপরে ছদ্মবেশে ঢুকে গেছি সে আন্দোলনে। আমরা খালেদা জিয়ার, তারেক রহমান কিংবা বিএনপির নাম উচ্চারণ করি নাই। আমাদের দলের তরুণ সমাজ, ছাত্র-যুবক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের লোকদেরকে ছাত্রদের সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছিলাম। তিনি দাবী করে বলেন, আন্দোলনের জনতা, সেই জনতা আমরা। এই জনতা আমজনতা না। রাজনৈতিক দলের সক্রিয় জনতা ও আমজনতা এক না। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতাকে আমরা বলেছিলাম অভিভাবকের সহযোগিতা চাও, সেই অভিভাবক আমরা।
আরও পড়ুন: কুলাউড়ায় গ্রাম পুলিশদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন করলেন জেলা প্রশাসক
তিনি বলেন, সুতরাং বিজয়ের ফসলের শিরোপা তোমাদের মাথায় তুলে দিয়েছি অবহেলা, অযত্নে, অহংকারবোধে সেই শিরোপা যেন মাথা থেকে না পড়ে যায়। ইদানিংকালে যে অহমিকা সুলভ কথাবার্তা ও রাজনৈতিক নেতাদেরকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হচ্ছে এটা অত্যন্ত গর্বিত কাজ।
তিনি ৫ ই আগস্ট এর ডিক্লারেশন বা প্রোক্লেমেশন এর বিষয়ে বলেন, সেখানে কোনো জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের কথা নাই। পাকিস্তানিদের বৈষম্য করার কারণে ৭১ এ নাকি জনযুদ্ধ হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। অর্থাৎ যারা ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে না, তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে রাষ্ট্রদ্রোহী।
সাবেক এ মন্ত্রী আরো বলেন, ইদানিংকালে কিছু কিছু দলের এবং সরকারের ভাব দেখে মনে হয়- আগামী নির্বাচন হলে বিএনপি যে কত সিট পাবে, সেটা গুনে শেষ করা যাবে না। সেই কারণে এখন বিএনপিকে কীভাবে ঠেকাবে, সেজন্য ৭১’ র পরাজিত শক্তি ও ৭ নভেম্বরের পরাজিত শক্তি ভেতরে ভেতরে এক হচ্ছে। তারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি আরো বলেন, ইদানিংকালে একটা দল চোখ রাঙিয়ে কথা বলে। এতটা চোখ রাঙ্গানি ভালো না। জবাব একাত্তরে দিয়েছি। এখন যদি দিতে হয়, সেটা মঙ্গলজনক হবে না।
আওয়ামীলীগকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আরেকজন পালাইছে। এটা পালাইন্না পার্টি। একাত্তরে বাপে পালাইছে। এবার মেয়ে পালাইছে । নাতি-নাতনীরাতো দেশেই নাই।
গাজীপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইয়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির ১নং যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কালিয়াকৈর পৌরসভার সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য ওমর ফারুক শাফিন, জেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নান, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির মাস্টার, হেলাল উদ্দিন, আক্তারুল আলম মাস্টার, আবু তাহের মুসল্লী, দেওয়ান মোয়াজ্জেম, বিল্লাল হোসেন বেপারী, যুবদলের নেতা আতাউর রহমান মোল্লা। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ব্যারিস্টার চৌধুরী ইসরাক আহমদ সিদ্দিকী।