সেই ওসি মাইনুলের বদলি খবরে উচ্ছ্বসিত জাজিরা আওয়ামী লীগ, অসন্তোষ জনমনে
শরীয়তপুরের জাজিরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাইনুল ইসলামের বদলিকে ঘিরে এলাকাজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্র ও বিভিন্ন সামাজিক মহলের মতে, বদলির খবর পাওয়ার পর এলাকায় অপরাধচক্রের কিছু সদস্যের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশা বাড়ছে।
জাজিরায় ২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক বিতর্ক ওঠে। বিভিন্ন সময়ে অপরাধীচক্রের তৎপরতা, সশস্ত্র প্রদর্শন, সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ে অপরাধ বৃদ্ধির অভিযোগ উঠেছে। এসব চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্যে ওসি মাইনুল দায়িত্ব গ্রহণের পর অপরাধ দমনে কঠোর অবস্থান নেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি।
আরও পড়ুন: অমানবিক পুশইনের শিকার অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালী খাতুনকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করলো বিজিবি
স্থানীয় প্রশাসনিক সূত্রের ভাষ্যমতে, ২০২৫ সালের ৪ জুন থেকে দায়িত্ব গ্রহণের পর ওসি মাইনুল বিভিন্ন মামলার প্রায় হাজারের কাছাকাছি আসামি গ্রেপ্তার করেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক পটভূমির ৪৭৫ জন আসামি, একাধিক হত্যা মামলার আসামি, ১৩২ জন মাদক মামলার আসামি, প্রায় শতাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি এবং ৪৩ জন কিশোর গ্যাং সদস্য গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া যায়। তাছাড়া মাদকবিরোধী অভিযানে ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইনসহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাদক ও বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা যায়। এসব কারণে ওসি মাইনুলকে সম্প্রতি ঢাকা রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ পুলিশ অফিসার হিসেবেও পুরস্কৃত করা হয়।
নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে পুলিশের বড় পরিসরের বদলি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জাজিরা থানার ওসি মাইনুল ইসলামকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। বদলির পর জাজিরাসহ পুরো শরীয়তপুর জেলায় এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। স্থানীয় অনেকেই দাবি করছেন, ওসি মাইনুলের কঠোর অবস্থানের কারণে অপরাধচক্র চাপে ছিল, ফলে তার বদলির খবরে তারা আবার সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: জামালপুরের আলোচিত মনিরুল হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেফতার
অন্যদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আবার নাজুক হয়ে পড়তে পারে।
একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান—"তিনি অত্যন্ত সাহসী ও দক্ষ কর্মকর্তা ছিলেন। নির্বাচন পর্যন্ত তাকে দায়িত্বে রাখা গেলে জাজিরার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতো।"
ওসি মাইনুল ইসলাম বলেন "আমি অপরাধীকে শুধু অপরাধী হিসেবেই দেখি, কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করি না। যতদিন দায়িত্বে আছি, আইন অনুযায়ী অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাব। বদলি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত; যেখানে দায়িত্ব দেবেন, সেখানেই যথাযথভাবে কাজ করবো।"
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, কিছু রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও সাধারণ মানুষ মনে করছেন আর কয়েক মাস থাকলে জাজিরা স্থায়ীভাবে শান্তির পথে ফিরে আসত।
ইতোমধ্যে কিছু এলাকায় গোপন বৈঠক, নতুন করে অপরাধীচক্র সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা এবং বিস্ফোরক তৈরির অভিযোগও উঠেছে—যদিও এসব তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
নড়িয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার বলেন "ওসি মাইনুল অপরাধ দমনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। তবে বদলি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। জাজিরার পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে রাখার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করা হবে।"





