পুলিশ নির্বিকার, সেনাবাহিনীর সহায়তায় উদ্ধার

চাঁদার দাবিতে আশুলিয়ায় প্রবাসীর বাড়িতে বিএনপির নামধারী সন্ত্রাসী দুলালের হামলা, লুটপাট

Sanchoy Biswas
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৮:৩০ অপরাহ্ন, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৮:৪৯ অপরাহ্ন, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

আশুলিয়া, ঢাকা- ধামসোনা ইউনিয়নের বিএনপি নামধারী আসাদুল হক দুলালের নেতৃত্বে প্রায় ৩৫-৪০ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী কানাডা প্রবাসী মরিয়ম ইয়াসমিনের এগ্রো ফার্মে হামলা চালিয়েছে। ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক ১২টা ৫০ মিনিটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, দুলাল ও তার সহযোগীরা অবৈধ বন্দুক, বোমা, পিস্তল, রামদা ও চেইনসহ সশস্ত্র হয়ে প্রথমে ফার্মের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর সীমানা প্রাচীর ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে ব্যাপক বোমা বিস্ফোরণ ও গুলি চালায়। এসময় তারা পাঁচজন কর্মীকে জিম্মি করে।

আরও পড়ুন: মোহাম্মদপুরে ছিনতাইকারী আটক, গণপিটুনিতে একজনের মৃত্যু

পরবর্তীতে ভুক্তভোগীরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ কোনো কার্যকর সহায়তা দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। হতাশ হয়ে সেনাবাহিনীর সহায়তা চাইলে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে জিম্মিদের মধ্যে একজনকে উদ্ধার করে। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায় এবং চারজনকে বাইরে ফেলে রেখে যায়। পরে সেনাবাহিনী আশুলিয়া থানা পুলিশের সহযোগিতায় ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে।

হামলাকারীরা ফ্রিজ, টিভি, ল্যাপটপ, মোবাইল, ২০-৩০টি সিসি ক্যামেরা, আসবাবপত্র, চাল, মুরগির খাবার, গ্যাসের সিলিন্ডার, কাপড়চোপড়, ২৫টি ফ্যান, ৩৬১টি মুরগি ও নগদ ৪ লক্ষাধিক টাকা লুট করে নিয়ে যায়। আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪০-৪৫ লক্ষ টাকা।

আরও পড়ুন: সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান সহ ৬ জন গ্রেপ্তার

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দুলাল বাহিনী পূর্বেও অন্তত চারবার একই প্রকল্পে হামলা চালিয়েছে। আশুলিয়া থানায় চাঁদাবাজির দুটি মামলা থাকলেও আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। বর্তমানে তারা প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, দুলাল দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক পরিচয় কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে আসছে। তিনি আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে গড়ে তুলেছেন আলম নামে এক কুখ্যাত সন্ত্রাসীর নেতৃত্বাধীন বাহিনীকে। আলমের বিরুদ্ধে রয়েছে অস্ত্র ব্যবসা, মাদক পাচার, চাঁদাবাজি ও বহু মামলার ইতিহাস।

মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—দেলোয়ার, ছোট নূরা, বাবু, ফরিদ, বড় নূরা ও শাহাদাত।

একজন ভুক্তভোগী বলেন, আমরা এখনো আতঙ্কে দিন কাটাই। টাকা না দিলে বাড়িতে সন্ত্রাসী পাঠায়। বলে—‘আমি বিএনপির নেতা, কেউ আমার কিছু করতে পারবে না।’ এটা কি রাজনীতি, না অপরাধচক্র?

আইনজীবীরা বলেন, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাচেষ্টা গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। রাজনৈতিক পরিচয় নয়, আইনই সর্বোচ্চ হওয়া উচিত। অবিলম্বে র‍্যাব বা বিশেষ বাহিনী দিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

স্থানীয়দের  দাবি, অপরাধীর দলীয় পরিচয় নয়, তার অপরাধই বিবেচ্য হোক।

তাদের দাবি, দুলাল বাহিনীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক, যাতে আশুলিয়ায় আইনশৃঙ্খলা ফিরে আসে।

এদিকে দফায় দফায় স্থানীয় সন্ত্রাসীরা প্রবাসী এই বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটালেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। দুলালের বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও লুটের মামলা থাকলেও পুলিশ তাকে আটক করছে না। সাংবাদিকদের ওসি জানান, আসামি দুলালকে পাওয়া যাচ্ছে না। সে এলাকায় সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, দুলাল বাড়িতেই থাকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে দুলাল বাহিনী হামলা করে রাতভর লুটতরাজ করে। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে বারবার জানানো হলেও পুলিশ উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। ‘৯৯৯’-এ ফোন করলে এসআই নাসিরের নেতৃত্বে রাত দুটার সময় টহল টিম আসে। এ সময় দুর্বৃত্তরা ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিলে পুলিশ ঝুঁকি নিয়ে ভিতরে ঢোকেনি। কিছুক্ষণ পর পুলিশ চলে গেলে আবারো ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পরে সেনাবাহিনী এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। টহল টিমের এসআই নাফিউল জানান, খবর পেয়ে আমরা এসে দেখি দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর করছে। কিন্তু দরজা আটকানো থাকাতে ভিতরে ঢোকা সম্ভব হয়নি। পরে সেনাবাহিনী এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এসআই নাফিউল আরো জানান, আমি থানায় নতুন যোগদান করেছি। আগের মামলা ও সন্ত্রাসের কার্যকলাপ সম্পর্কে জানা নেই। গত রাতের ভাঙচুর ও লুটপাটের বিষয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অভিযোগ দিলে অবশ্যই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।