ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়, ঝুঁকিতে লাখো মানুষ
ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় গাজার অবকাঠামো, পরিবার ও পরিবেশ সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। চার সপ্তাহের ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজা সিটির শেখ রাদওয়ানসহ বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ মানবিক ও পরিবেশগত সংকট তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন বোমাবর্ষণের পাশাপাশি পানি ও মাটির ওপর পড়েছে ভয়াবহ প্রভাব। ধ্বংস হয়ে গেছে নিকাশি ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ সংযোগ। একসময় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত শেখ রাদওয়ানের পুকুরটি এখন ময়লা ও নোংরা পানিতে ভরা। আশ্রয়হীন বহু পরিবার সেখানে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে, যা তাদের জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়া উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকা ডুবি: শতাধিক নিখোঁজ, ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার
প্রসূত মা উম্ম হিশাম বলেন, আমরা শেখ রাদওয়ান পুকুরের পাশে আশ্রয় নিয়েছি। মশা, দূষিত পানি, চারপাশের ধ্বংস—সবই আমাদের ও আমাদের সন্তানদের জীবনের জন্য হুমকি।
গাজা সিটি মিউনিসিপ্যাল কর্মকর্তা মাহের সালেম জানান, “দূষিত পানি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, পোকামাকড় ও মশার প্রজনন বাড়ছে। পানির স্তর ৬ মিটার পর্যন্ত পৌঁছে গেছে—যেকোনো মুহূর্তে আশপাশের ঘর ও টেন্ট ডুবে যেতে পারে।”
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহতের সংখ্যা ছাড়ালো ৬৯ হাজার
জাতিসংঘ ও স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পানির স্থবিরতা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। তবু বিশুদ্ধ পানির বিকল্প না থাকায় অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে দূষিত পানি ব্যবহার করছে।
ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলনে প্যালেস্টাইন দূত ইব্রাহিম আল-জেবেন বলেন, “গাজায় এক ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় চলছে, যা ইসরায়েলের গণহত্যার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ ৬১ মিলিয়ন টনের বেশি, যার অনেকাংশেই রয়েছে ক্ষতিকর বর্জ্য।”
তিনি আরও জানান, “স্যানিটেশন ও পানির নেটওয়ার্ক ধ্বংস হওয়ায় ভূগর্ভস্থ ও উপকূলীয় পানি দূষিত হয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি।”
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় মিঠাপানির সরবরাহ মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়েছে এবং বাকি অংশও দূষিত। এতে স্থানীয় কৃষিজমি ও খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শেখ রাদওয়ানে এখন বাতাসে ঘোরে ধুলা, ধ্বংসস্তূপ ও দূষণের বিষাদগন্ধ। আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেন, “প্রতিদিন পানি ও খাবারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা এখন আর কারও অগ্রাধিকার নয়।”





